অভাব আর আভিজাত্য ছাড়া আপনার শিশুকে আর কী শেখাবেন?

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলল বিষয়টি নিয়ে। অনেকেই কেন শিশুকে অভাব শেখাতে হবে, তার ওপর যুক্তি দিলেন। বললেন, মিনিমালিস্টিক লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত করার জন্য, অপচয় আর ভোগবাদ থেকে দূরে রাখা জন্য, লাক্সারির ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য, সর্বোপরি ছোটবেলা থেকেই ছোট ছোট বিষয়ে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার জন্য অভাব শেখানো দরকার। আরেক পক্ষ আবার জোর তর্ক তুলেছেন আভিজাত্যের পক্ষে। মন বড় করে চিন্তা করার জন্য হলেও তাঁরা দিয়েছেন আভিজাত্যের পক্ষে ভোট। জেনে নেওয়া যাক, অভাব ও আভিজাত্য ছাড়া আর কী কী শেখাতে পারেন আপনার সন্তানকে।

বই পড়া ভারি মজা

বই পড়া শেখান। একবার যদি আপনার শিশু বই পড়াতে অভ্যস্ত হয়, তাহলে স্ক্রিনটাইম আপনাআপনিই কমে আসবে। বাকি জীবনে তার আর নিঃসঙ্গতায় ভোগার বিশেষ সুযোগ নেই। কেননা বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু আর কী আছে? খুলে যাবে কল্পনার রাজ্য।

কীভাবে শেখাবে শিশুকে বই পড়া? শিশুকে বই পড়াতে অভ্যস্ত করার জন্য আপনাকে নিজেকেই শিশুর সামনে বই পড়তে হবে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। ওদের সামনে যা-ই করবেন, ওরা তাই-ই করবে। দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়ুন।


ঘরের কাজ জেন্ডার রোল নয়!

আপনার ঘরে ছেলেশিশু, মেয়েশিশু বা তাঁর লিঙ্গ যা-ই হোক না কেন, এটা বিবেচনায় না নিয়ে তাকে ঘরের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করুন। নিজের খেলনা, বই-খাতা, জামাকাপড় গুছিয়ে রাখতে বলুন। আপনার কাজে সহযোগিতা করতে বলুন। সন্তানকে ছোট ছোট দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন।

ঘরের কাজের বিনিময়ে পুরস্কার দিতে পারেন। সেটা হতে পারে বিশেষ কিছু রান্না করে খাওয়ানো বা কোনো খেলনা কিনে দেওয়া অথবা বেড়াতে নিয়ে যাওয়া। ঘরের কাজ, রান্না—এগুলো লাইফ স্কিল। এর সঙ্গে জেন্ডার রোলের কোনো সম্পর্ক নেই।

শিশুকে শেখান যে ঘরের কাজ, রান্না এগুলোর সঙ্গে জেন্ডার রোলের কোনো সম্পর্ক নেই

ভিন্নমতকে সম্মান

ছোটবেলা থেকেই আপনার শিশুকে ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা মতাদর্শকে সমানভাবে সম্মান করতে শেখান।

সাঁতার, সাইকেল চালানো, তায়কোয়ান্দো

সাঁতার, সাইকেল চালানো, তায়কোয়ান্দো বা মার্শাল আর্ট শেখা—এগুলো আপনার শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা। এর বাইরে ওর শখের কারণে ভর্তি করতে পারেন আঁকাআঁকি, মিউজিক বা নাচ-গানের ক্লাসে।

তৃতীয় একটা ভাষা

বাংলা বা ইংরেজি ছাড়াও আপনার শিশুকে ভিন্ন যেকোনো একটা ভাষা শেখাতে পারেন। লম্বা দৌড়ে এই দক্ষতা আপনার শিশুকে এগিয়ে নেবে অনেকটাই। সময়ের সঙ্গে মানুষের ভাষা শেখার দক্ষতা কমতে থাকে। তৃতীয় একটা ভাষা শেখা থাকলে সেটা ভবিষ্যতে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য বা অন্য কোনো দেশে চাকরি নিয়ে স্থায়ী হতে চাইলে কাজে দেবে।


পোষ্যর প্রতি ভালোবাসা, সব প্রাণের প্রতি সহানুভূতি

আপনার শিশুকে আশপাশের সব প্রাণীর প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আর সহানুভূতি শেখান। শেখান যে বিশ্বটা সব প্রাণের, কেবল মানুষ নয়, সবার এখানে সমান অধিকার আর সবাই সবার ওপর নির্ভরশীল। তাই কারও ক্ষতি করে কিছু করা যাবে না।

আপনার শিশুকে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনে আগ্রহী করে তুলুন

পরিবেশবান্ধব জীবন


রিসাইকেল করতে শেখান। তাঁকে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলুন। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধে এগিয়ে আসতে বলুন। ঘরের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগান। তাকে গাছের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলুন, গাছ লাগাতে উৎসাহী করুন। অভ্যস্ত করুন মিনিমালিস্টিক লাইফস্টাইলে।


সঞ্চয়, সঞ্চয়, সঞ্চয়


জীবনে সঞ্চয়ের কোনো বিকল্প নেই। আপনার সন্তানকে একটা মাটির ব্যাংক কিনে দিন। শুরুতে সেখানে টাকা জমানোর অভ্যাস করুক। তারপর তার একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে দিন। সন্তানকে কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা বিলাসিতা, সেটা বুঝিয়ে বলুন। হাতখরচ থেকে টাকা জমিয়ে রাখার অভ্যাস করুন ছোটবেলা থেকেই। তাহলেই জীবনে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।