দুই ঘর যখন একসঙ্গে, সাজাবেন কীভাবে

সীমিত জায়গার কারণে এক ঘরেই বসা ও খাবারের ব্যবস্থা রাখার চল বেড়ে গেছে। এই দুই স্থানের মেলবন্ধনটি অন্দরসজ্জাবিদেরা পরিকল্পনা করেই ঘটাচ্ছেন। একই সঙ্গে বহুমাত্রিক জায়গা তৈরির পাশাপাশি অন্দরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার একটি সুযোগও তৈরি হচ্ছে।

ঠিকমতো নকশা করা হলে একটি ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম বাড়ির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে
ছবি: প্রথম আলো

লে-আউট ও স্থানের প্রবাহ

ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম সাজানোর প্রথম বিবেচ্য বিষয় হলো লে-আউটের নকশা। আসবাবের বিন্যাস হতে হবে এমন, যেন দুটি জায়গার মাঝখানে একটি সরল প্রবাহ তৈরি হয়। সহজে চলাচলের জায়গাও নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে একটি খোলামেলা জায়গার নকশা বেছে নেওয়া যেতে পারে। আলাদা আসবাবের প্যাটার্ন ও কার্যকারিতার মধ্যেই দুটি জায়গায় ভিন্নতা ফুটে উঠবে। আলোর যথাযথ ব্যবহার ও আসবাব

স্থাপনের মাধ্যমেও কাজটি করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি অক্ষর ‘এল’ আকারের একটি বড় সোফা কিংবা কর্নার সোফা বসার ঘর ও খাবার ঘরের মধ্যে বিভাজক হিসেবে কাজ করতে পারে। আবার একই সঙ্গে এটি খোলামেলা ও প্রশস্ত জায়গার অনুভূতিও দেবে। সাধারণত ছোট আকারের ফ্ল্যাটের এ ধরনের লে–আউট বা নকশার ব্যবহার বেশি।

আধুনিক আসবাবের নির্বাচন

আধুনিক অন্দরসজ্জায় আসবাবের ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, অন্দরশৈলীর অনেকটাই পূর্ণতা পেয়ে যায় যদি থাকে সঠিক আসবাব। এ ক্ষেত্রে আধুনিক বোর্ড যেমন এইচপিএলের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। বহুমুখী আসবাব ছোট–বড় করা যায়। পড়ার টেবিল হয়ে যেতে পারে খাবার টেবিল, সোফা হয়ে যেতে পারে বিছানা। এমন আসবাব যেকোনো স্থানের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। খাবার ঘরের টেবিলটির বসার জায়গা যেন একই সঙ্গে আরামদায়ক ও রুচিশীল হয়, খেয়াল রাখুন সেদিকে।

আরও খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রতিটি আসবাবের শৈলী একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এ ছাড়া আসবাবের আকার ঘরের আয়তনের সঙ্গে মিলিয়ে কেনা ভালো। ছোট জায়গা হলে আসবাব হতে হবে ছিমছাম নকশার। এতে ঘরটাকে বড় ও প্রশস্ত মনে হবে।

দুটো ঘর পাশাপাশি থাকলে লাইটের ব্যবহার করতে পারেন জায়গা বুঝে

রঙের সঠিক ব্যবহার

রঙের সঠিক ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিরপেক্ষ রং যেমন সাদা, চাপা সাদা, বেজ, ধূসর, প্যাস্টেল, সি গ্রিন ইত্যাদি রঙের ব্যবহার শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশ তৈরি করে। জায়গাটিকে আপেক্ষিকভাবে বড়ও করে তোলে। উজ্জ্বল রঙের সংযোজন করা যায় কুশন বা সজ্জাসামগ্রীর মাধ্যমে।

আলোর বিন্যাস

বিভিন্ন জায়গার চাহিদা অনুযায়ী অন্দরের আলোর বিন্যাস কমবেশি করা উচিত। এখন বাড়িতে উষ্ণ আলোর ব্যবহার বেশি জনপ্রিয়। নরম আলো অন্দরে স্নিগ্ধতা ও প্রশান্তি এনে দেয়। খাবার ঘরের টেবিলের ওপর একটি ঝাড়বাতি বা পেনডেন্ট লাইট নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পড়ে সে জায়গার সৌন্দর্য তুলে ধরে এবং আভিজাত্য যোগ করে।

আসবাব হোক ছিমছাম

সজ্জার উপাদান

ঘর সাজানোর বিভিন্ন অনুষঙ্গ ও গাছপালা ঘরে যোগ করতে পারে উষ্ণতা। আয়না যেকোনো জায়গাকে বড় করে তুলতে পারে। এনে দেয় খোলামেলা ভাব।

উপসংহার

অন্দরসজ্জায় খাবার ও বসার ঘরের নকশা করার সময় নান্দনিকতা ও কার্যকারিতার মধ্যে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন। স্থানটিকে একই সঙ্গে আরামদায়ক ও আমন্ত্রণমূলক হতে হবে। তাই আসবাব, রঙের সঠিক ব্যবহার, আলোর পর্যাপ্ত প্রয়োগ করে নকশা করা হলে একটি ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম বাড়ির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে, যেখানে পরিবার-পরিজন ও বন্ধুরা একত্রে বিশ্রাম, আহার এবং একে অপরের সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে পারেন।

লেখক: স্থপতি