মাটির পাত্রে কেন খাবেন

স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য বর্তমানে আনগ্লেজড পোড়ামাটির পাত্রের চাহিদা বাড়ছে
ছবি : প্রথম আলো

গ্রাম কিংবা শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একসময় ব্যবহার করা হতো মাটির থালা, গ্লাস, কলস, পানির জগ ও মগ, মাটির হাঁড়ি ইত্যাদি।

তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে পোড়ামাটির এসব বাসন দুই ধরনের হয়। কিছু পাত্র উচ্চ তাপমাত্রায় তৈরি করা হয়। এগুলো সরাসরি রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। আবার কিছু পাত্র তুলনামূলক নিম্ন তাপমাত্রায় তৈরি হয়। এগুলো খাবার পরিবেশনে ও পানি সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। যেমন বাসন, ঘটি, বাটি ইত্যাদি।

আবার পাত্রের গায়ের প্রলেপের ওপর ভিত্তি করে দুই ধরনের বাসনকোসন পাওয়া যায়। কিছু পাত্র চকচকে প্রলেপযুক্ত। এই প্রলেপ পোড়ামাটির ছিদ্রযুক্ত পৃষ্ঠকে সিল করে দেয়। চকচকে ও মসৃণ হওয়ায় ব্যবহারের আগে এটি ‘সিজনিং’ করতে হয় না। এগুলো সমানভাবে তাপ শোষণ করে, পরিষ্কার করাও সহজ। আরেক ধরনের পোড়ামাটির পাত্র আছে, যার পৃষ্ঠদেশ চকচকে নয় অর্থাৎ আনগ্লেজড। স্বাস্থ্যসচেতন ক্রেতাদের মধ্যে বর্তমানে আনগ্লেজড পোড়ামাটির পাত্রের চাহিদা বাড়ছে। কারণ, এ ধরনের পাত্রে মাটির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। এগুলোতে কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় না।

প্লাস্টিকের পরিবর্তে মাটির গ্লাসে পানি পান করলে তা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে

ঐতিহ্যবাহী এসব পাত্র শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, বরং এর রয়েছে কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও, জানালেন অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভূমি আর্টিসানের স্বত্বাধিকারী স্থপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। চলুন, এগুলোর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক—

  • পোড়ামাটির পাত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি খাবারের টক্সিন (জীব ও উদ্ভিদ শরীরে উৎপন্ন বিষ) অপসারণ করে পুষ্টি ধরে রাখতে সাহায্য করে। পোড়ামাটির পাত্রের ক্ষুদ্র ছিদ্র আর্দ্রতা অপসারণ ও দীর্ঘ সময় খাবার সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।

  • মাটির ছিদ্রযুক্ত প্রকৃতি তাপকে সমানভাবে সঞ্চালন, খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি ও পুষ্টি ধরে রাখতে সাহায্য করে। মাটির ক্ষারীয় প্রকৃতি খাবারের অম্লতার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে এদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখে। তাপপ্রতিরোধক এবং ধীরে রান্নার কারণে তেলের ব্যবহার কম হয়। তা ছাড়া পোড়ামাটি খাবারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি যোগ করে যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম।

মাটির সঙ্গে বাঁশের কাজ
  • খনিজ উপাদান এবং ইলেকট্রোম্যাগনেটিক শক্তিতে সমৃদ্ধ থাকে কাদামাটি। তাই মাটির পাত্রে পানি সংরক্ষণ করা হলে তা পানির আরোগ্য ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

  • প্লাস্টিকের পরিবর্তে মাটির গ্লাস বা পাত্রে পানি পান করা হলে তা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। মাটি প্রাকৃতিকভাবে পানি ঠান্ডা রাখে। ফলে তা শরীরের বিপাক বাড়াতে সাহায্য করে।

  • মাটির পাত্রে অসংখ্য আণুবীক্ষণিক ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রগুলো দিয়ে অল্প পরিমাণ পানি চুইয়ে বাইরের পৃষ্ঠে আসে ও বাষ্পীভূত হয়। পানি বাষ্পীভূত হওয়ার সময় কিছুটা তাপ শোষণ করে। ফলে ঠান্ডা থাকে পাত্র।

গরমে খাবার পরিবেশনে মাটির পাত্র ব্যবহার করতে পারেন
  • খাবার হজমের জন্য অনেক রকম অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। মাটির পাত্রে পানি রাখলে পানিতে ক্ষারজাতীয় উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই পানি খেলে পেটের বিভিন্ন প্রকার অ্যাসিড কিছুটা প্রশমিত হয়, অম্ল–ক্ষারের ভারসাম্য বজায় থাকে।

  • মাটির পাত্রে পানি রাখলে পানিতে হরেক রকমের খনিজ পদার্থ মেশে। ফলে দেহে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানগুলোর অভাব হয় না। ভালো থাকে বিপাকপ্রক্রিয়াও।