ঘুমের জন্য চাই আদর্শ বিছানা-বালিশ। নইলে ঘাড়, পিঠ ও কোমরে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে নতুন একটা দিন সতেজভাবে শুরু করার জন্য রাতের ঘুম খুব দরকারি। তবে ঘুমের আয়োজনের ভুলভ্রান্তি হলে তা থেকে কোমরব্যথা কিংবা ঘাড়ব্যথার মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ঘুমের আয়োজনে প্রথমে আসে বিছানার কথা। তোশক, জাজিম, ফোম—নানা উপকরণে হতে পারে বিছানা। এগুলোর মধ্যে কোনটা স্বাস্থ্যকর? বালিশের আকার ও উচ্চতাও গুরুত্বপূর্ণ। আরও জানতে হবে ঘুমের সঠিক দেহভঙ্গি।
বিছানা-বালিশ এমন হতে হবে, যাতে ঘুম হয় আরামদায়ক। তাই বলে তুলতুলে নরম বিছানায় শোয়া যাবে না, বরং ঘুমাতে হবে শক্ত ও সমান বিছানায়। দৃঢ় বিছানায় দেহের স্বাভাবিক বক্রতা নিশ্চিত হয়। শরীরের ওজনেও বিছানা দেবে যায় না। ঘুমের জন্য চাই আদর্শ বিছানা-বালিশ। নইলে ঘাড়, পিঠ ও কোমরে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। স্বাস্থ্যকর ঘুমের অনুষঙ্গ সম্পর্কে নানা পরামর্শ দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক সোহেলী রহমান।
যেমন বিছানা চাই
• শোয়ার পর বিছানার কোনো অংশ যাতে দেবে না যায়। শোয়া অবস্থায় কোমর, পিঠ আর ঘাড় একই রেখায় থাকতে হবে।
• শিমুল তুলার তোশক ব্যবহার করা ভালো।
• জাজিম আর তোশক দুটি অনুষঙ্গ একই সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না। হয় তোশক বেছে নিন, নয়তো জাজিম। বক্স খাটে অবশ্য শুধু একটি অনুষঙ্গ ব্যবহার করা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে প্রথমে জাজিম বিছিয়ে বক্স খাটের ভেতরের অংশ পূরণ করে নিন। এর ওপর হার্ডবোর্ড বিছিয়ে দিন। এর ওপর পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার একটি তোশক বিছিয়ে নিতে হবে।
• ম্যাট্রেসেও ঘুমাতে পারেন। তবে ভালো মানের ম্যাট্রেস বেছে নিন।
বালিশ-কোলবালিশ
• এমন বালিশ বেছে নিতে হবে, যাতে ঘাড়ের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় থাকে। শিমুল তুলার বালিশ ভালো।
• প্রয়োজনের চেয়ে ছোট বালিশ ব্যবহার না করাই ভালো (যেমন সোফার কুশন)।
• বালিশের এক দিকে ঘুমাতে ঘুমাতে দেবে গেলে অপর দিক ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে দিক বদল করে বালিশ ব্যবহার করা ভালো।
• বালিশের উচ্চতাও হতে হবে ৫ ইঞ্চি। পাতলা বালিশ ভালো নয়, একাধিক বালিশ ব্যবহারের অভ্যাসও এড়িয়ে চলা উচিত।
চাই স্বাচ্ছন্দ্য
• এমন বিছানা বেছে নেওয়া উচিত, যেখানে হাত-পা ছড়িয়ে আরাম করে শোয়ার জায়গা থাকে; যাতে প্রয়োজনমতো পাশ ফিরে ঘুমানো যায়। অর্থাৎ ঘুম হতে হবে স্বস্তিকর। একেবারে গাদাগাদি করে অনেকে মিলে না ঘুমানো ভালো। শিশু-কিশোরদেরও নির্দিষ্ট বয়সের পর আলাদা বিছানার ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত।
• কাত হয়ে ঘুমানো ভালো।
• কুঁকড়ে নয়, শরীর সোজা রেখে ঘুমান। কোলবালিশ নিলেও এদিকে খেয়াল রাখুন।
• ঘুম ভাঙার পর কনুইয়ের ভর দিয়ে উঠে বসতে হবে, যাতে কোমরে চাপ না লাগে। এবার আয়েশ করে বসে লম্বা করে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন ৫-১০ বার। একবারে লাফ দিয়ে নামবেন না, কোমরে টান লেগে যেতে পারে।
এড়িয়ে চলুন
• ফোমের বিছানায় কিংবা সোফায় শোয়া পরিহার করুন।
• বাতাসের বিছানা-বালিশ ভালো নয়।
• মেঝেতে না শোয়া ভালো, বিশেষত স্থূল ব্যক্তির জন্য। মেঝেতে শোয়া অবস্থা থেকে উঠতে গিয়ে কোমরে চাপ পড়তে পারে।
• নাক ডাকলে, ঘুমের মধ্যে শ্বাসের কোনো সমস্যা থাকলে কিংবা বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকলে চিত হয়ে ঘুমাবেন না।
কখন বদলাবেন
• বিছানার যে জায়গাটায় শোয়া হয়, সেদিক ধীরে ধীরে দেবে যায়। বিছানার স্থানে স্থানে গর্ত হয়ে যায়। যে ধরনের বিছানা ব্যবহার করা হোক না কেন, দু-তিন বছর অন্তর বদলে ফেলুন। বিছানার কোনো দিক বসে গেলে, গর্ত হয়ে গেলে কিংবা শোয়ার পর বিছানার কোনো অংশ দেবে গেলে দুই বছরের আগে তা বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে।
• বালিশ বদলাতে হবে এক-দুই বছর অন্তর অন্তর।