সুন্দর পরিপাটি ঘর দেখলে কার না ভালো লাগে? কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কেন এমনটা হয়?
আসলে যেকোনো সাজানো–গোছানো জিনিস মনকে প্রশান্ত রাখতে সাহায্য করে। সেটা পোশাক হোক বা ঘর, এমনটাই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রউফুন নাহার। তাঁর মতে, মানুষের বেশির ভাগ সময় কাটে তাঁর ঘরে। সেখানে ঘরের দেয়াল ও আসবাবে যদি তাঁর মনের মতো রঙের প্রতিফলন না থাকে, এর একটা প্রভাব তো মনে পড়বেই। রঙের একটা ব্যাপক প্রভাব মনের ওপর আছে বলে জানান তিনি।
সাধারণত আমাদের দেশের অন্দরসজ্জায় সাদা রঙের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। হোক সেটা ঘরের দেয়াল, না হলে আসবাব। এর পেছনে দুটি কারণ আছে। সাদা রং ছোট পরিসরের ঘরকে বড় দেখাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া শুদ্ধতা, পরিচ্ছন্নতার মতো বিষয়গুলো সাদা রঙের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। তাই বেশির ভাগ মানুষ ঘরের দেয়ালে এই রঙের ব্যবহার করে থাকেন। এ ছাড়া ঘরের দেয়াল বা আসবাবে হলুদ, কমলা, নীল আর সবুজের মতো রঙেরও ব্যবহার দেখা যায়। হলুদ রং সব সময়ই মনে ইতিবাচকতা আনে। কমলা রঙের ব্যবহার আপনাকে যেকোনো কাজে উৎসাহ জোগাবে। এই রং ঘরের দেয়ালে থাকলে আপনাতেই মন সৃজনশীল কাজের প্রতি আকৃষ্ট হবে। সবুজ ও নীল রঙের ব্যবহার আমাদের চোখ ও মনের প্রশান্তি আনে।
যখন পরিকল্পনা করে বিশেষ কোনো রং দিয়ে একজন মানুষ ঘর সাজানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন এর পেছনে কোনো না কোনো গল্প থাকে। ছোটবেলায় উপহার পাওয়া কোনো জামার রং হয়তো বিশেষভাবে তাঁর মনে গেঁথে আছে, অনেকেই হয়তো সেই রঙের ব্যবহার ঘরে করতে চান। আবার প্রকৃতির কোনো প্রিয় রং আপনার মনকে বরাবরই ভালো করে দেয়। সেই রঙে অনেকেই সাজিয়ে তোলেন ঘর। এই বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়েই মানুষ এখন ঘরের রং নির্বাচন করে থাকেন।
উইন্ডো পিপলের স্থপতি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নাজমুল আসিফ বলছিলেন, ঘরে বা আসবাবে কোন রং ব্যবহার করবেন, সে বিষয় নিয়ে তাঁরা প্রথমেই ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলেন। সাধারণত সেই মানুষ কেমন পরিবেশে বড় হয়েছেন, তা জানতে চান। ছোটবেলায় বেড়ে ওঠা পরিবেশ মানুষের মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। সেই গল্প জানতে পারলে ঘর সাজানোর কাজও অনেক সহজ হয়ে ওঠে বলে জানান এই স্থপতি। ‘যেমন আমরা দেখেছি, গ্রাহকের ছোটবেলা যদি প্রকৃতির মধ্যে কেটে থাকে, তাহলে সে সবুজ বা নীল রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আবার সম্প্রতি আমরা একটা বাসার অন্দরসজ্জা করেছি, যেখানে ছোটবেলা থেকেই ঢাকা শহরে বেড়ে উঠেছে ক্লায়েন্ট। সে জন্য তার ধূসর রঙের প্রতি রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। তার বাসাজুড়েই এই রঙের প্রাধান্য রেখেছে।’ তবে স্থপতি ও অন্দরসজ্জাবিদ হিসেবে প্রাথমিকভাবে অন্দরে কিছু রং ব্যবহারের ব্যাপারে তাঁরা দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এই যেমন কমলা রঙের ব্যবহার শুধু লিভিং এরিয়ায় করা ভালো। বিশ্রামের জায়গায় সবুজ বা নীল রঙের ব্যবহার করতে পারেন। এই ঘরে হলুদ বা লাল রঙের ব্যবহার একেবারেই করা যাবে না।
আসবাবের ক্ষেত্রেও একই কথা। ঘরের মূল অনুষঙ্গে এভাবেই প্রাধান্য পেতে পারে আপনার পছন্দের ও ভালো লাগার সব রং।