নিজের বাসার গন্ধ টের না পাওয়ার খামতি আদতে আপনার মস্তিষ্কের
নিজের বাসার গন্ধ টের না পাওয়ার খামতি আদতে আপনার মস্তিষ্কের

নিজের বাসার দুর্গন্ধ আমরা কেন টের পাই না? ঘরের দুর্গন্ধ দূর করার ছয়টি উপায়

অন্য কারও বাসায় বেড়াতে গেলে আমাদের নাক যেন একটু বেশিই সজাগ হয়ে যায়। ওই বাসায় আগের রাতে শুঁটকি রান্না হয়েছে নাকি গরুর ভুঁড়ি, বিড়াল কোথাও প্রাকৃতিক কর্ম করে রেখেছে কি না, সব আমরা গন্ধ শুঁকেই বলে দিতে পারি। শোয়ার ঘরের স্যাঁতসেঁতে গন্ধ থেকে শুরু করে বাথরুমের দুর্গন্ধ, কোনো কিছুই আমাদের নাককে ফাঁকি দিতে পারে না। কিন্তু নিজেদের বাসার দুর্গন্ধ আমরা এত সহজে বুঝতে পারি না কেন?

এর কারণ হলো, কিছুক্ষণ পর যেকোনো গন্ধই আমরা আর টের পাই না। ইংরেজিতে একে বলে ‘নোজ ব্লাইন্ডনেস’, বাংলায় ‘নাকের অন্ধত্ব’। এর বৈজ্ঞানিক নাম অলফ্যাক্টরি অ্যাডাপ্টেশন। নিজের বাসার গন্ধ টের না পাওয়ার এই খামতি আদতে আপনার মস্তিষ্কের।

নোজ ব্লাইন্ডনেস দূর করার কোনো উপায় আদতে নেই। এটি মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক অভিযোজন প্রক্রিয়া। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু কাজ করলে আপনার বাসার গন্ধ আদতে কেমন, তা বুঝতে পারা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে।

কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ির বাইরে কোনো জায়গায় ঘুরে এলে মস্তিষ্কের ছোট একটি জায়গা রিসেট হয়ে যায়। তাই কয়েক দিন ছুটি কাটিয়ে আপনি যখন বাসায় ফিরে আসেন, তখন বুঝতে পারেন আপনার বাসার গন্ধ আদতে কেমন।

অনেক সময় দেখা যায়, কয়েক ঘণ্টার জন্য বাইরে সময় কাটিয়ে আবার বাসায় ঢোকার পর আমরা এমন একটা গন্ধ পাই, যা হয়তো বাসায় থাকা অবস্থায় টেরই পাইনি। অথচ গন্ধটা বাসায় আগেও ছিল। কিছুক্ষণের জন্য বাসার বাইরে সময় কাটালেও আমাদের ঘ্রাণশক্তি কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

আপনার বাসার গন্ধ আদতে কেমন, তা বুঝতে পারার আরেকটি উপায় আছে। আপনার কোনো একজন বিশ্বস্ত বন্ধু কিংবা পরিবারের কোনো সদস্যকে জিজ্ঞাসা করা। লক্ষ রাখবেন, তাঁরা যেন এ ব্যাপারে নিজেদের সত্যিকারের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। তাঁরা আপনার বাসার এমন সব গন্ধও লক্ষ করতে পারেন, যেসবে হয়তো আপনি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন কিংবা যেসব আপনি কখনো খেয়ালই করেননি।

বিশেষজ্ঞরা আপনার চারপাশে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি রাখার পরামর্শ দেন। বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করা, জানালা খোলা রাখা ও বাতাস চলাচলের জন্য ফ্যান চালু রাখা বাসাকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে এবং নোজ ব্লাইন্ডনেসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ঘর দুর্গন্ধমুক্ত রাখার ছয়টি উপায়

এক বাটি ভিনেগার রেখে দিন

রান্নাঘরে মাছ কাটাকাটি করার পর দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। মাছ কাটার পর কয়েক ঘণ্টার জন্য অথবা সারা রাত এক বাটি ভিনেগার রান্নাঘরে রেখে দিন, মাছের আঁশটে গন্ধটা আর থাকবে না। এতে রান্নাঘরে ভিনেগারের গন্ধ সৃষ্টি হবে বটে, কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ থাকবে না।

কিছু বেকিং সোডা ছিটিয়ে রাখুন

বেকিং সোডা দুর্গন্ধ দূর করার ক্ষেত্রে খুবই কাজে দেয়। ফ্রিজে বেকিং সোডা রাখলে ফ্রিজে দুর্গন্ধ হয় না। সোফা, কার্পেট, ডিভান ইত্যাদির ওপর বেকিং পাউডার ছিটিয়ে ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করলে দুর্গন্ধ দূর হয়। বেশির ভাগ দুর্গন্ধই অ্যাসিডিক। অন্যদিকে বেকিং সোডা ক্ষারীয় পদার্থ। তাই অ্যাসিডিক দুর্গন্ধের সঙ্গে ক্ষারীয় বেকিং সোডা বিক্রিয়া করে দুর্গন্ধ নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

এসেনশিয়াল অয়েলযুক্ত ডিফিউজার ব্যবহার করুন

আপনার বাসার সৌন্দর্য কেবল আসবাবের ওপরই নির্ভর করে না, বাসার গন্ধও একটি বড় বিষয়। মিষ্টি একটা গন্ধ ভেসে বেড়ালে ঘরে তৈরি হয় প্রশান্তিদায়ক পরিবেশ। তাই ওয়াটার ডিফিউজারে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করুন।

ঘর পরিষ্কার করতেও সুগন্ধি ব্যবহার করুন

অনেকে এসেনশিয়াল অয়েল, যেমন লেমনগ্রাস, ল্যাভেন্ডার কিংবা কমলার সুবাসযুক্ত এসেনশিয়াল অয়েল ঘর মোছার জন্য ব্যবহার করেন। ঘর পরিষ্কার করতে সাধারণত যেসব ফ্লোর ক্লিনার ব্যবহার করা হয়, সেসবে ঝাঁজালো গন্ধ থাকে। এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারে সেই ঝাঁজালো বা কটু গন্ধ তো চাপা পড়বেই, সঙ্গে পুরো বাড়িই মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠবে।

ওয়াল প্লাগ-ইন ব্যবহার করুন

ওয়াল প্লাগ-ইন অর্থাৎ যেসব এয়ার ফ্রেশনারকে বৈদ্যুতিক প্লাগের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করতে হয়, সেসব দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সচল থাকে। এসব ব্যবহারে সুগন্ধি মোমবাতির মতো অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাও নেই। ঘর দুর্গন্ধমুক্ত রাখার প্রধান উপায় হলো ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা। সেই সঙ্গে যদি একটি ওয়াল প্লাগ-ইন এয়ার ফ্রেশনার নিয়মিত কাজ করে, তাহলে আপনার বাসা সুগন্ধময় থাকবে সব সময়। এয়ার ফ্রেশনারের সুগন্ধ আপনি আপনার ইচ্ছা ও রুচি অনুযায়ী বদলাতে পারবেন।

একটি বিশেষ মিশ্রণ তৈরি

ঘরে যদি খুব বাজে গন্ধ সৃষ্টি হয়, তাহলে একটি পাত্রে পরিমাণমতো পানি ফোটাতে থাকুন। কিছু কমলার খোসা, কিছু দারুচিনি ও লেবুজাতীয় ফলের রস ফুটন্ত পানিতে ছেড়ে দিন। যতক্ষণ না আপনার বাসায় সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে, ততক্ষণ ধরে অল্প আঁচে মিশ্রণটিকে জ্বাল দিতে থাকুন। ফুটন্ত অবস্থায় পানির মাত্রার দিকে খেয়াল রাখুন। কয়েক ঘণ্টা পরে চুলা নিভিয়ে দিন। চুলা নেভানোর পরও সুগন্ধ উপভোগ করতে চুলার ওপর পাত্রটি রেখে দিতে পারেন।

সূত্র: ইয়াহু লাইফ