বাসার কোথায় কী রাখা হবে, কোন রং কেন ব্যবহৃত হবে—সবটাই মিলেমিশে করেছেন অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা ও ব্যাংকার জোবায়দুল হক দম্পতি। খুবই ছিমছাম, গোছানো। যেন মিশে আছে মায়া। এই দম্পতির বাসা ঘুরে এসেছেন বিপাশা রায়
কেন জানি না, আজকাল বাসায় থাকতেই ভালো লাগে বেশি। কাজ শেষ হলে শুধু মনে হয়, কখন বাসায় ফিরব! হয়তো সেটা মেয়ে স্মিহার কারণেও হতে পারে। তা ছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে কিছুদিন আগেও বাইরে জমিয়ে আড্ডা দিতাম। সেই আড্ডার লোভেও এখন আর বাইরে বের হতে মন চায় না। ওদেরই বরং বাসায় আমন্ত্রণ জানাই। ঘরে যে আরামটা পাই, সেটা আর কোথাও মেলে না,’ বলছিলেন আয়নাবাজি, তুফানখ্যাত অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা। এসব গল্পও তাঁর উত্তরা–৪ নম্বর সেক্টরের অ্যাপার্টমেন্টে বসেই হচ্ছিল।
বাসায় আরাম–আয়েসে কোনো ছাড় দিতে নাবিলা নারাজ, তাই স্বামী জোবায়দুল হককে সঙ্গে নিয়ে পছন্দমতো জিনিসে সাজিয়েছেন এই ঘর। জোবায়দুলের পছন্দ উজ্জ্বল রং। দেয়াল, কুশন কভার কিংবা আসবাব—ঘরের সবখানেই উজ্জ্বলের উপস্থিতি চোখে পড়ল। আসবাবে গাঢ় নীল তো দেয়ালে সবুজ, কুশনে হলুদের মতো রং পুরো বাড়িতেই চোখে পড়বে।
নাবিলার কাছ থেকেই জানা গেল, গান ভালোবাসেন জোবায়দুল। বসার ঘরের দেয়ালে রাখা বড় চিত্রকর্মটিতেও দেখা গেল সুরের আবহ। এখান থেকেই রং নির্বাচন করে বসার ঘরের সোফা, কুশন, পর্দায় ব্যবহার করা হয়েছে। বসার ঘরে মূল সোফা ছাড়াও একটি চেয়ার, আরেকটি সিঙ্গেল সোফা আছে। নাবিলা বলেন, ‘আমার বসার ঘরটা বেশ ছোট। মুখোমুখি বসে যেন গল্প করা যায়, তাই এ ধরনের কিছু সিঙ্গেল আসবাব রেখেছি।’ সবুজ চেয়ারটি কাস্টমাইজ করে বানিয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী ও আসবাব উদ্যোক্তা তানিয়া হোসাইন। আর নীল সোফাটি নিয়েছেন ইশো থেকে। বসার ঘরের এক কোণে বুকশেলফের ব্যবস্থা। বসার ঘরে বই রাখার এ ধারণাও জোবায়দুলের কাছ থেকে এসেছে। সাধারণত বুকশেলফের তাকটা হয় খুব সাদামাটা। তবে এখানে ব্যতিক্রম। শেলফে ব্যবহার করা হয়েছে উজ্জ্বল রং। বাড়ি ফিরে জোবায়দুলের অনেকটা সময় কাটে বসার ঘরে। কখনো টেলিভিশন দেখেন, কখনো বই–পত্রিকা পড়েন। বাসায় এভাবে সময় কাটাতে ভালোবাসেন জোবায়দুল হক। তাই তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী বসার ঘরে পড়ার আয়োজন রাখা হয়েছে।
বিয়ের পর নাবিলা–জোবায়দুল মিলে একটু একটু করে বাসার সব জিনিস কেনাকাটা করেছেন। নাবিলা জানালেন, কিছুদিন পর বাসার অন্দরসজ্জায় আরও কিছু পরিবর্তন আনবেন।
বাসায় একটু ফাঁকা ফাঁকা ভাব পছন্দ করেন নাবিলা। তবে বিয়ের আগে থেকেই অনেক কিছু জোবায়দুলের কাছে ছিল। সেগুলো সংরক্ষণ করতে বা রাখতে অনেক আসবাব বানাতে হয়েছে। এখন মেয়ে কিছুটা বড় হয়েছে। খেলতে, দৌড়াতে ভালোবাসে। তার জন্য বাসাটা একটু ফাঁকা বা খোলামেলা রাখতে চান।
শুধু নতুন আসবাবই নয়, বাসার কিছু স্থানে পুরোনো আসবাবকে আপসাইকেল করে নতুনভাবে সাজিয়েছেন। যেমন প্রবেশমুখের দেয়ালে টাঙানো লম্বা আয়নাটায় মাঝখানে তাক বসিয়ে ড্রয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যাচেলর জীবনে এই আয়না ব্যবহার করতেন জোবায়দুল। আসবাবটিকে তাঁরা ফেলে না দিয়ে স্মৃতি হিসেবে রাখতে চেয়েছেন। তাই এ ব্যবস্থা।
আয়নার এই আসবাব কাস্টমাইজ করে বানিয়েছেন নাবিলা, ‘সাজগোজ করে যখন বাইরে বের হই, ফাইনাল লুকটা কেমন হয়েছে, এই আয়নাতেই তখন সেটা দেখে নিতে পারি।’
বসার ঘর ছাড়াও নাবিলার বাসায় আছে ছোট একটা লিভিং স্পেস। একদিকের দেয়ালে পেইন্টিং করা। লিভিং স্পেসে হলুদ আর সবুজ রঙের প্রাধান্য। মেঝেতে কুশন বিছিয়ে কোজি বসার আয়োজন। অপর দিকে কাঠের সোফা।
লিভিং স্পেস লাগোয়া বারান্দাটিতে প্রকৃতি ও ঘরের আবহের সঙ্গে মিল রেখে সবুজের ব্যবহার করা হয়েছে। ‘সব সময় মনে হতো, আমার নিজের একটা বাসা হলে সেখানে সুন্দর একটা বারান্দা রাখব। বিকেলবেলায় সেখানে বসব, অনেক গাছ লাগাব। একটা সময় এই বারান্দায়ও প্রচুর গাছ ছিল, কিন্তু সময়ের অভাবে গাছগুলোর ঠিকমতো যত্ন নিতে পারি না,’ বলছিলেন নাবিলা। তবে এখন মেয়ে স্মিহাকে নিয়ে এই বারান্দায় সবচেয়ে বেশি সময় কাটান নাবিলা। মেয়ের সঙ্গে খেলেন, তাকে আকাশ দেখান।
বাসা ঘুরে দেখাতে দেখাতে নাবিলা গল্প করছিলেন, ছবি দিয়ে ঘর সাজাতে খুব ভালোবাসেন তাঁরা। বাড়ির প্রায় প্রতিটি দেয়ালেই পারিবারিক ফটোগ্রাফ রয়েছে। আর ভালোবাসেন উজ্জ্বল আলো। এই বাড়ির যেখানেই যাবেন, দেখবেন নানা রকম আলোর আয়োজন। যদিও নাবিলা বলছিলেন, অন্দরে আলোর ব্যবহার নিয়ে তাঁর ধারণা কম। তবে উজ্জ্বল রঙের মতো উজ্জ্বল আলোকসজ্জাও জোবায়দুলের বিশেষ পছন্দ। ল্যাম্পশেড, স্পটলাইট আর সিলিং ল্যাম্প দিয়ে বাসার বিভিন্ন জায়গাকে আলাদাভাবে ফোকাস করা হয়েছে।
এত কিছুর মধ্যে বাড়ির কোন জায়গাটি সবচেয়ে বেশি পছন্দ? উত্তরে নাবিলা বললেন, ‘প্রতিটি কোণই আমার প্রিয়। কারণ, ঘরের প্রতিটি কোণই আমরা দুজন খুব ভালোবেসে যত্ন নিয়ে সাজিয়েছি।’
নাবিলা সব সময় চেয়েছেন, তাঁর বাসাটা যেন তাঁর গল্প বলে। বাসায় প্রবেশ করলেই যেন সবাই আন্তরিকতার ছোঁয়া পান। আর মেয়েও যেন তার নিজস্বতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। যে কারণে এই বাসায় খুব বেশি বাহুল্য না থাকলেও আন্তরিকতার যেন কোনো ঘাটতি নেই।