বারান্দাটাও সাদামাটা রাখার চল এখন আর নেই। অনেকে আবার ছাদেও রাখেন বসার আয়োজন। এ দুটি জায়গায় কেমন আসবাব রাখা উচিত, জানুন এখানে।
চাইলেই ঘর থেকে দুই পা ফেলে বেড়িয়ে আসার সুযোগ এখন কম। খোলা আকাশ বা একটু নির্মল হাওয়া গায়ে মাখতে তাই অনেকের ভরসা বাসার ছাদ কিংবা বারান্দা। একটা সাজানো–গোছানো ছাদ কিংবা বারান্দা ক্লান্ত বিকেলকে করে তুলতে পারে প্রশান্ত।
শহরের বেশির ভাগ বাসার ছাদ কিংবা বারান্দা হয়ে উঠেছে ছোটখাটো বাগান। কংক্রিটের নগরীতে একটুখানি সবুজের ছোঁয়া পেতে বাসিন্দারা এই দুটি জায়গায় গাছ লাগাচ্ছেন। ছোট ছোট গাছ, তার মধ্যে দু–একটা ফুলের গাছ আর বাহারি টব—বারান্দায় বাগান করতে আর কী লাগে! কিন্তু বারান্দাকে প্রাণ দিতে, মনোরম একটা পরিবেশ আনতে চাই অল্পবিস্তর আসবাব। এই ধরুন, একটা রকিং চেয়ার অথবা ফুলের টবের পাশে একটা বেঞ্চ। নরম রোদের বিকেলে এক কাপ কফি হাতে বসলেন সেখানে হেলান দিয়ে।
ছাদ কিংবা বাগানে চাইলেই যেকোনো আসবাব ব্যবহার করা যায় না। প্রতিটি আসবাব হয় বাছাই। অন্দরসজ্জাবিদ ফিরোজা রশীদ বলেন, উপকরণ থেকে শুরু করে নকশা—সবকিছুতে পছন্দ ও রুচির নিখুঁত মিশ্রণ না হলে ছাদ ও বারান্দার সাজে পূর্ণতা আসবে না। মনের খোরাক মেটাতে নতুন করে প্রাণ দিচ্ছেন যে জায়গায়, সেখানে নিজের ইচ্ছেমতো আসবাব রাখার আগে তাই কিছুটা বাস্তবতা মেনে
চলা জরুরি।
সাধারণত বারান্দা বা ছাদ ‘ওপেন স্পেস’ হওয়ায় সব রকম আসবাব সেখানে মানানসই না। কোন উপকরণের আসবাব সেখানে রাখছেন, এটাও জরুরি। না হলে কয়েক দিন পরই সেটা নষ্ট হয়ে যাবে বাড়তি রোদ বা বৃষ্টিতে। শীতের কুয়াশাও নষ্ট করে দিতে পারে খোলা জায়গার আসবাব। তাই রোদ, বৃষ্টি, ঝড়—সবকিছু সামলাতে পারে, এমন চেয়ার–টেবিলই রাখতে হবে ছাদে।
বারান্দার মতো অবশ্য ছাদে জায়গা খুব কম থাকে না। বারান্দায় যেখানে দু-তিনজনের ব্যবস্থা করলেই চলে, সেখানে ছাদে বসার ব্যবস্থা করতে হয় একটু বেশি মানুষের কথা মাথায় রেখে। সঙ্গে সবার পছন্দ-অপছন্দ আর রুচির ব্যাপারটা তো আছেই। ছাদে বসার জন্য প্রথম পছন্দ হতে পারে নকশা করা চেয়ার কিংবা বড় বেঞ্চ। অনেক বাসার ছাদেই কার্নিশ ধরে ছাদবাগানের ব্যবস্থা থাকে। সেই কার্নিশের পাশ ধরেই করা যেতে পারে বসার ব্যবস্থা। রেলিংয়ের সামনে ছাদবাগানের আশপাশে বসার জন্য থাকতে পারে লম্বা বেঞ্চ, যেখানে পাঁচ-ছয়জন পর্যন্ত বসতে পারবেন একত্রে। ছাদের বড় একটা অংশজুড়ে থাকতে পারে লবি সেট। একটা টেবিলের সঙ্গে কয়েকটি চেয়ার। বাসার গতানুগতিক চেয়ার নয়; বরং ছাদে বসার আরামদায়ক চেয়ার। এসব আসবাবের উপকরণ হবে প্লাস্টিক, রট আয়রন, স্টিল, কাস্ট আয়রন বা মেটাল।
ছাদে থাকতে পারে সনাতনী দোলনা, যা একটি ফ্রেমের মাধ্যমে সেট করা যায়।
অনেক বাসার ছাদে বারবিকিউ করার ব্যবস্থাও আছে। সেখানে বোর্ড বা মার্বেল পাথরে একটা কাউন্টার বানিয়ে নিতে পারেন। এক পাশে থাকবে বারবিকিউ চুলা। আর কাউন্টারে থাকবে খাবার পরিবেশনের বাকি বন্দোবস্ত।
দোকানে প্লাস্টিক কোটিং করা কাঠের তৈরি ছাদের উপযোগী আসবাবের দেখা মিলবে। প্লাস্টিক কোটিং করা এসব আসবাব পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার শঙ্কা কম। ছাদ ও বারান্দার জন্য বাজারে কাঠের থেকেও টেকসই উপকরণ আছে। বারান্দা বা ছাদের আসবাবের জন্য সবচেয়ে উপযোগী উপকরণ হলো প্লাস্টিক। ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে যেমন আছে, তেমনি হালকা হওয়ায় নড়াচড়া করাও সহজ। পরিষ্কার করতেও তেমন বেগ পোহাতে হয় না। রট আয়রনের আসবাব লোহার তৈরি হলেও বৃষ্টি কিংবা পানির ছোঁয়ায় সহজে নষ্ট হয় না। এমন উপকরণ টেকসই।
তবে ছাদ বা বারান্দায় যদি প্রাকৃতিক আবহ রাখতে চান, তাহলে বেত কিংবা বাঁশের তৈরি আসবাবও রাখতে পারেন। রোদ কিংবা বৃষ্টিতে এসব আসবাবের খুব একটা ক্ষতি হয় না। তবে কিছুটা বাড়তি যত্ন দরকার পড়ে। মাসের পর মাস রোদ বা বৃষ্টিতে ভেজানোও যাবে না। মাঝেমধ্যে তুলে রাখতে হবে।
বারান্দার ক্ষেত্রে ফিরোজা রশীদের পরামর্শ হলো—
বারান্দার ছোট জায়গায় চেয়ার–টেবিল পাতার দরকার নেই। তবে যদি প্রশস্ত বারান্দা হয়, বড়জোর রকিং চেয়ার রাখতে পারেন।
বারান্দায় থাকতে পারে দোলনা। আজকাল সিলিং থেকে ঝোলানো বেত, প্লাস্টিক–আয়রনের দোলনা ছাড়াও মোটা রশি বা রঙিন সুতার দোলনা বেশ চলছে। বারান্দাটা কোজি করে তুলতে পারে এমন একটা দোলনা।
বারান্দায় ব্যবহার করতে পারেন ছোট ছোট টুল। রিসাইকেল কাপড়ে তৈরি টুল পাওয়া যায় যাত্রা, আড়ং কিংবা প্রকৃতির মতো দোকানে। সেখান থেকেও কিনে নিতে পারেন।
ছোট বারান্দায় চাইলে মেঝেতে বসার ব্যবস্থা করা যায়। একটা লম্বা টি–টেবিল রেখে তার দুই দিকে বসার আয়োজন করা যেতে পারে। কৃত্রিম ঘাসের ফ্লোর ম্যাট বেশ জনপ্রিয়। বারান্দার মেঝেতে একবার বিছিয়ে দিলেই হবে। রোদ–বৃষ্টিতেও নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। পরিষ্কারেরও তেমন ঝামেলা নেই। মেঝেতে ম্যাট বিছিয়ে বসার জন্য রাখতে পারেন কয়েকটি কুশন।
বাজারে প্লাস্টিকের ফোল্ডিং বেঞ্চ আছে। এমন একটা বেঞ্চ দিয়েও সারতে পারেন বারান্দার সাজসজ্জা। এই বেঞ্চে যেমন হেলান দিয়ে বসা যায়, প্রয়োজনমতো আরেকভাবে সেট করে সামনে টেবিলের মতো করে ফেলাও যায়। সাদা, বাদামি ও প্যাস্টেল শেডের এমন একটা বেঞ্চ বসিয়েও বসার জায়গা করে নিতে পারবেন।
(লেখাটি বর্ণিল বসত নভেম্বর ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত)