একটা বোতল বা জারে কখনো এক প্রজাতির গাছ, কখনো আবার ভিন্ন প্রজাতির গাছ একই সঙ্গে লাগানো যেতে পারে
একটা বোতল বা জারে কখনো এক প্রজাতির গাছ, কখনো আবার ভিন্ন প্রজাতির গাছ একই সঙ্গে লাগানো যেতে পারে

কাচের বয়ামে বাগানে

বোতলবাগানের মাধ্যমে অন্দরসজ্জআয় আনা যায় ভিন্নতা

বছর কয় আগে ‘নকশা’র ফটোশুটের কাজে যাওয়া হয়েছিল রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানার বাসায়। নানা রকম গাছের পাশাপাশি জারের ভেতরে বানানো বাগানটি তখন নজর কেড়েছিল বেশ। সেবারই বোতলবাগানের নাম শুনি প্রথম। নানা রকম পট প্ল্যান্টের ব্যবহার তো কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। ঘরের ভেতর গাছ রাখার এ–ও আরেক নতুন ধরন। এই প্রক্রিয়ায় একটা বোতল বা জারে কখনো এক প্রজাতির গাছ, কখনো আবার ভিন্ন প্রজাতির গাছ একই সঙ্গে লাগানো হয়।

মাটি শুকিয়ে এলে হালকা পানির স্প্রে করলেই চলে

গাছ লাগানোর জন্য রাহিমা সুলতানা কিনে এনেছিলেন কাচের ছোট অ্যাকোরিয়াম বা জার। বোতলের ভেতর নিচের দিকে মাটি ভরে বিভিন্ন প্রজাতির ফার্নজাতীয় গাছ দিয়ে এই বোতলবাগান তৈরি করেছেন তিনি। অনেকটা শখের বসেই তখন কাজটি করেন। বলছিলেন, এ ধরনের ইনডোর প্ল্যান্টসের সুবিধা হলো, এগুলো আলাদা করে রোদে দেওয়া লাগে না। আর মাটি শুকিয়ে এলে হালকা পানির স্প্রে করলেই চলে। বোতলবাগানের মাটি ভালো রাখতে চা–পাতা ব্যবহারের পরামর্শ দেন রাহিমা সুলতানা। চা বানানোর পর যে পাতাটুকু থাকে, তা জমিয়ে রাখুন। ২ টেবিল চামচ পরিমাণ জমে গেলে গাছের মাটিতে ছড়িয়ে দিন। এতে করে ছয় মাস পর্যন্ত গাছের মাটি ভালো থাকবে।

ইদানীং বোতলবাগানের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাণিজ্যিকভাবেই জারের গাছ নিয়ে কাজ করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আসবাবের দোকান ‘বহু’তে পাওয়া যাচ্ছে এমন বোতলবাগান বা বোতলের গাছ। জানা গেল, আ ‘লোর নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই গাছগুলো তৈরি করে। আ ‘লোরের ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনার নাদিয়া হোসেন বলছিলেন, সাধারণত দুই নিয়মে তৈরি হয় এই বোতলবাগান। এক ধরন হচ্ছে, ঢাকনাসহ, আরেক ধরনে থাকছে ঢাকনাবিহীন। খোলা জার বা বোতলে রাখতে পারেন ক্যাকটাসজাতীয় উদ্ভিদ। ঢাকনাসহ জারে থাকতে পারে স্যাঁতস্যেঁতে আবহাওয়া উপযোগী গাছ।

প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে টিকে থাকে এই বোতলবাগান

এ ধরনের গাছের বড় সুবিধা হলো, রোদে দেওয়া লাগে না। গাছের মাটি শুকিয়ে এলে হালকা পানি দিলেই চলবে। নাদিয়া হোসেন বললেন, এই গাছের মাটি তৈরিতে কয়লা, পাথর, বালু, গাছের ছাল, নারকেল খোসার গুঁড়া ব্যবহার করা হয়। এসব থেকেই মাটি তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। তবে খুব বেশি সূর্যের আলো আসে বা সরাসরি সূর্যালোকে এই গাছ না রাখাই ভালো। ঢাকনাযুক্ত বোতলে গাছ রাখলে অবশ্যই ঘরের যে জায়গায় লাইট আছে, সেখান থেকে দূরে রাখুন। ঢাকনা দেওয়া জারের ভেতরটা বেশি ঘেমে গেলে অবশ্যই জারের মুখ খুলে দিন।

এই গাছের মাটি তৈরিতে কয়লা, পাথর, বালু, গাছের ছাল, নারকেল খোসার গুঁড়া ব্যবহার করা হয়

১৯৬০ সালে যুক্তরাজ্যের ডেভিড ল্যাটিমার ১০ গ্যালন সাইজের বোতলে এই বিশেষ পদ্ধতির বাগান তৈরি করেন। বাগানটি তৈরির পরপরই তিনি বোতলের মুখ বন্ধ করে দেন। ১৯৭০ সালে সামান্য পানি দেওয়ার জন্য মুখ খোলেন। ৬০ বছর পরও গাছটি সতেজ আছে। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়, কীভাবে গাছটি এত দিন এভাবে সতেজ আছে? ল্যাটিমার জানান, গাছের ঝরে পরা পাতা থেকে মাটির সারে থাকা ব্যাকটেরিয়া পুষ্টি পায়। আর গাছ থেকেই উৎপন্ন হয় অক্সিজেন। আবার ব্যাকটেরিয়া থেকে নির্গত শ্বাসের কার্বন ডাই–অক্সাইড থেকে গাছ নিজের খাবার বানায়। সব মিলিয়ে এই প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেমের টিকে থাকে এই বোতলবাগান।