উনিশ শতকের প্রায় মাঝামাঝি। দুপুর আর রাতের খাবারের মাঝের লম্বা বিরতিতে হঠাৎ একদিন চা আর টুকিটাকি কিছু নাশতার ফরমাশ করেন ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডের ডিউক-পত্নী আনা মারিয়া রাসেল। একসময় তাঁর কাছে এটি একটা নিয়মের মতো হয়ে গেল। আয়েশি এই আয়োজনটা যে দিনের পর দিন তিনি একাই উপভোগ করছিলেন, তা কিন্তু না। নতুন ধারার এই চা উৎসবে বন্ধুদেরও নিমন্ত্রণ জানাতে শুরু করেন। বৈকালিক চা আয়োজনের এই হলো ইতিহাস। পরে অবশ্য সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা কর্মজীবীদের জন্যও চা-নাশতার আয়োজন হতে থাকে, যার নাম দেওয়া হয় হাই-টি। ব্যক্তিগত উদ্যোগেই হোক, কিংবা করপোরেট সংস্কৃতির অংশ হিসেবে, হাই-টি আয়োজন আজ ‘ট্রেন্ডি’। সন্ধ্যার প্রচলিত হাই-টি বাদেও আয়োজন করা হচ্ছে বৈকালিক হাই-টি। হাই-টি যে কেবল উচ্চ সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য, ব্যাপারটা কিন্তু একেবারেই তেমন না। তবে হাই-টি আয়োজন করতে চাইলে আপনার ঠিক কী কী অনুষঙ্গের প্রয়োজন, হাই-টির আয়োজনে একজন কেতাদুরস্ত অতিথিদেরই-বা কী কী করতে হয়, সেসব জেনে নেওয়া যাক চলুন।
কোরাল ক্লোসেটের স্বত্বাধিকারী রূপো শামসকে হাই-টির একজন বিশেষজ্ঞ বলা যায়। বৈকালিক এই আয়োজন নিয়ে এই ফ্যাশন ডিজাইনারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। নানা ধরনের চায়ের ব্যবস্থা রাখা হয় এই আয়োজনে। দুধ ও চিনির জন্য রাখতে হয় আলাদা পাত্র। সঙ্গে থরে থরে সাজানো থাকে হালকা নাশতা। এভাবে সাজানোর জন্য পোর্সেলিন টিয়ার কাজে লাগাতে পারেন। ছোট ছোট নাশতার পদ এবং মিষ্টি খাবার রাখুন। ছোট স্যান্ডউইচ, চিকেন সাঁতে, কুকি, ম্যাকারুন, পাই, কেক, কাপকেক, পেস্ট্রি, ক্রিম রোল, একলেয়ারস রাখা যেতে পারে। সন্ধ্যায় আয়োজন হলে মিনি স্টেক, পাউরুটি, সবজির সালাদ বা মাছের তৈরি হালকা পদও রাখতে পারেন। টি-পট, চায়ের কাপ, চা-চামচ, মাখন-জ্যাম মাখানোর উপযোগী ছুরি, পেস্ট্রি ফর্ক, হাফ প্লেট, কোয়ার্টার প্লেট—সবকিছু গুছিয়ে পরিপাটি করে সাজিয়ে দিন চায়ের টেবিলে। টি-পট গরম রাখার জন্য ব্যবহার করুন টি-কোজি। টেবিলে ভাঁজ করে রাখুন ন্যাপকিন।
এসকে ডেকোর ও এসকে ইভেন্টসের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর অন্দরসজ্জাবিদ সায়মুল করিম বলছিলেন, সাদা কিংবা হালকা একরঙা টেবিলক্লথ বেছে নেওয়া যায়। এর ওপর রঙিন, নকশা করা টি-পট, চায়ের কাপ এবং অন্যান্য অনুষঙ্গ সাজিয়ে রাখলে দারুণ মানাবে। টেবিলক্লথে কুশি কাঁটার কাজ থাকতে পারে, ভারী নকশা নয়। পরিবেশন পাত্রগুলো সাদা হলে রঙিন, নকশা করা টেবিলক্লথ বিছিয়ে নিতে পারেন। সুন্দর দেখাবে। রঙের এই বৈপরীত্যের দিকে খেয়াল রেখে কেকের ওপর পছন্দসই রঙের মৌসুমি ফলের ‘টপিং’-ও দিতে পারেন। চাইলে ‘ফিউশন’ ধারাতেও যেতে পারেন। তবে যে ধারাতেই থাকুন না কেন, সবকিছু এমনভাবে গুছিয়ে রাখতে হবে, যাতে সহজেই প্রয়োজনমাফিক জিনিসটি পেয়ে যান অতিথি। সাজানোর ক্ষেত্রে নানা রকম থিম কাজে লাগানো হচ্ছে এখন। পুরো পরিবেশটাকে বদলে দিতে সতেজ ফুল ও নানা রকম সতেজ পাতা এবং সুগন্ধি মোমবাতি রাখতে পারেন।
ফুড স্টাইলিস্ট এবং ফুড ফটোগ্রাফার আতিয়া আমজাদ বলছিলেন স্তরে স্তরে খাবারগুলো সাজিয়ে পরিবেশনের কথা। সিঁড়ির মতো কয়েক ধাপে খাবারগুলো সাজানো হলে চমৎকার দেখাবে। স্যাভরি (নোনতা বা মসলাদার) নাশতা হিসেবে পরিবেশিত খাবার এবং মিষ্টি খাবারের মধ্যে একটা ভারসাম্যও থাকতে হবে। সমুচা, ক্রিস্পি রোল—নানা কিছুই হতে পারে নাশতার পদ। বাগান, লন কিংবা বাড়ির ছাদে খোলামেলা জায়গায় চায়ের আয়োজন হতে পারে। তাজা ফুলে সাজাতে পারেন হাই-টি টেবিল। টেবিলক্লথ, ন্যাপকিন, টি-পট, চায়ের কাপ-পিরিচ—সবকিছুর রং বিবেচনায় রেখে ফুলের রং বাছাই করুন।
হালকা ধাঁচের পোশাক পরুন। টি ড্রেস পরতে পারেন, কিংবা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, মিডি। যেটায় আপনি স্বচ্ছন্দ, সেটাই বেছে নিন। মসলিন বা ঐতিহ্যবাহী অন্যান্য কাপড় পরতে পারেন। ফুলের মোটিফ কিংবা বাগান থিমের পোশাক পরতে পারেন। তীক্ষ্ণ হিলের জুতা না পরাই ভালো। এগুলো বাগান বা লনের উপযোগী নয়। উঁচু কিছু পরতে চাইলে বেছে নিতে পারেন ব্লক হিল। বৈকালিক হাই-টির জন্য টুপি ও রোদচশমা ভালো। হাই-টিতে পুরুষের জন্য ভালো পোশাক শার্ট। জিনস না পরাই ভালো।
১. বসে চা খাওয়ার জন্য চায়ের কাপ তুলবেন, পিরিচ নয়। তবে দাঁড়িয়ে চা খেতে চাইলে কাপ ও পিরিচ দুটিই রাখুন আপনার বুকের কাছাকাছি।
২. স্কোন ছোট ছোট করে কেটে খেতে হয়। একবারে অর্ধেক করতে নেই।
৩. অতিথির কাপে চা ঢেলে দিন নিজেই। কাপ কানায় কানায় পূর্ণ করবেন না, তাহলে অতিথি প্রয়োজনে দুধ বা চিনি যোগ করতে মুশকিলে পড়বেন।
৪. অন্যান্য পানীয়ের ব্যবস্থাও রাখতে পারেন।