শোবার ঘরের আলো মৃদু রাখাই ভালো
শোবার ঘরের আলো মৃদু রাখাই ভালো

শোবার ঘরের সজ্জায় যেসব ভুল করা যাবে না

গবেষণা বলছে, মানুষ জীবনের তিন ভাগের এক ভাগই কাটায় শোবার ঘরে। তাই শোবার ঘরের সজ্জায় বিশেষ নজর দেওয়া মোটেও বিলাসিতা নয়। আর ইতিমধ্যে যদি নিজের শোবার ঘরটি সাজিয়ে থাকেন, তাহলে এই লেখায় পেয়ে যাবেন ঘরটির সজ্জায় ছোট–বড় ভুলসংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য, শুধরে নিতে পারবেন সহজেই—

বিশাল খাট ও আসবাব

বিশাল বড় খাটে গড়াগড়ি দিয়ে ঘুমানোর কথা চিন্তা করতে ভালোই লাগে। এই ভেবে অনেকে খাট কেনেন ঘরের আয়তনের অনুপাতে বড়। এই খাট শোবার ঘরে চলাফেরার জায়গা রাখে না, অস্বস্তিতে পড়তে হয়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্দরসজ্জাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ক‍্যারোলিনলিওনার প্রতিষ্ঠাতা লিজ গোল্ডবার্গ পরামর্শ দিয়ে বলেন, খুব ভারী এবং বড় আসবাব শোবার ঘরের জন্য নয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লোকে উল্টোটাই করেন। নিজের জন্য আদর্শ শোবার ঘর সাজাতে চেয়েও এই ভুলের কারণে ঘর অন্ধকার, সংকুচিত ও ছোট দেখায়। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অন্দরসজ্জাবিষয়ক আরেক প্রতিষ্ঠান ব্রিয়ানা স্কট ইন্টেরিয়র্সের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিয়ানা উন্টেনার বলেন, ‘আপনার শোবার ঘরের মধ্যমণি হচ্ছে বিছানা। বাকি সবই আনুষঙ্গিক। তাই বিছানার অবস্থান হতে হবে ঘরের মূল দেয়ালের সঙ্গে এবং সুন্দর বেডিং দিয়ে স্তরে স্তরে সেটা সাজাতে হবে।’

সবার পরে শোবার ঘর

ঘুমের আগে, ঘুমন্ত অবস্থায় ও ঘুম ভাঙার পর—এসব বাদেও বিশ্রাম কিংবা ব্যক্তিগত ক্ষণ, সব মিলিয়ে শোবার ঘর ব্যক্তিজীবনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কিন্তু ঘর সাজানোর সময় দেখা যায়, সবচেয়ে সুন্দর করে সাজানো হয় বসার ঘরটি। এরপর খাবারের ঘর এবং সর্বশেষ আসে শোবার ঘর। এটি ব্যক্তিজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক প্রতিষ্ঠান জিনা সিমস ডিজাইনের প্রতিষ্ঠাতা জিনা সিমস বলেন, ‘শোবার ঘর আপনার দিনের শুরু এবং শেষকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই এটির সজ্জায় কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না। শুরু থেকেই চেষ্টা করুন ঘরটি আপনার মনের মতো সাজিয়ে নিতে। আর যেহেতু এটি একান্তই আপনার ব্যক্তিগত জায়গা, সেহেতু খেয়াল রাখুন, যেন এর সাজসজ্জায় আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটে।’

এ বিষয়ে উন্টেনার বলেন, ‘ঘর সাজানোর সময় মজার কিছু করতে একটা অদ্ভুত চেয়ার, কিংবা একটু ভিন্ন রকম কোনো আসবাব রাখতে পারেন। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, এমন একটি জায়গা তৈরি করা, যেখানে সময় কাটাতে আপনার ভালো লাগবে।’ 

মাল্টি ফাংশনাল স্টোরেজের অভাব

একটি আসবাব দিয়ে অনেক কাজ হয়ে গেলে অতিরিক্ত আসবাবের জন্য শোবার ঘরে জায়গার অপচয় হবে না। ধরুন, সাইড টেবিল বা নাইটস্ট্যান্ড কেনার সময় এক বা একাধিক ড্রয়ারওয়ালা কিনলে সেটি টেবিলের কাজ করবে আবার ছোটখাটো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সেখানে গুছিয়ে রাখতে পারবেন। জিনা সিমস পরামর্শ দেন, খাট খুব বড় হলে সাইড টেবিল চাওড়ায় ৩০ ইঞ্চির বেশি হওয়ার প্রয়োজন নেই।

নানা আবহের আলো না থাকা

মাথার ওপর আলো থাকলেই হলো, এমনটা ভাবা ভুল। শোবার ঘরে একটি আলো ব্যবহার না করে ভিন্ন রকম আবহের কয়েকটি আলোর উৎসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ডিমার, টেবিল ল্যাম্প, রিমোটচালিত লাইট ইত্যাদি নানা আলোর উৎসের ভক্ত লরা ইউ ডিজাইন কালেক্টিভের প্রতিষ্ঠাতা লরা উম্যানস্কি বলেন, মাথার ওপর আলো থাকবে, এটা ঠিক আছে; কিন্তু নিয়মিত একই উৎসের আলো সুবিধাজনক নয়। 

এ বিষয়ে উন্টেনার বলেন, ‘আপনার শোবার ঘরের ছাদে ঝালর থাকলেও নিচের দিকে আলোর ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেখানে একটি সাধারণ টেবিল ল্যাম্পের আলোই হয়তো ঘরকে আরও আরামদায়ক করে তুলতে পারে।’

শোবার ঘরে টেলিভিশন

পুরো পৃথিবীর সব মানুষকে নিয়ে এক ঘরে ঘুমাতে না চাইলে টেলিভিশনটা বসার ঘরে রাখাই শ্রেয়, এই পরামর্শ জর্জিয়া জিকাস ডিজাইনের প্রতিষ্ঠাতা জর্জিয়া জিকাসের। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত স্থানে টেলিভিশন না রাখাই ভালো।

শোবার ঘরে ব্যবহৃত কাপড়গুলোর দিকে লক্ষ না করা

ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে ব্ল্যাকআউট ড্রেপারি (বাইরের আলো সম্পূর্ণ আটকে ফেলে এমন ভারী কাপড়ের পর্দা) ব্যবহার করার পরামর্শ দেন জিকাস। তিনি বলেন, জানালাগুলোতে খুব ভালো মানের পর্দার জন্য খরচ বেশি হলেও ক্ষতি নেই।

বিছানা সাজানোর ক্ষেত্রে হয়ে উঠতে পারেন খানিকটা সৃজনশীল। উন্টেনার বলেন, ‘সুন্দর করে বিছানা সাজানো হচ্ছে সবচেয়ে সহজ কাজ। কিন্তু বেশির ভাগ লোকেই এই সহজ কাজ করেন না। আপনার প্রয়োজন শুধু কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন রং এবং শেডের কাঁথা, চাদর, কমফোর্টার ও বালিশের আচ্ছাদন। বিছানায় ছোট–বড় বিভিন্ন আকারের বালিশ বেশ স্টাইলিশ দেখায়।’

মেঝেতে বেশি ছোট কার্পেট ব্যবহার করা

শোবার ঘরের সব সাজানোর পর মাথায় আসে খাটের পাশে একটি সুন্দর কার্পেট সাজানোর কথা। ‘এর পেছনে আর কতই-বা খরচ করা উচিত, একটা হলেই হলো’—এই মনোভাব নিয়ে খরচ বাঁচাতে গিয়ে অনেকে কিনে ফেলেন ছোট আকারের কার্পেট। যা বিছানোর পর দেখতে লাগে বেমানান। শোবার ঘরের জন্য কার্পেট কেনার সময় যেসব জরুরি বিষয় মাথায় রাখা দরকার, সেসব উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের টে ফুস্কো ডিজাইনের প্রতিষ্ঠাতা টেলর ফুস্কো বলেন, ‘কিং সাইজ বিছানার পাশে বিছানোর জন্য ন্যূনতম ৯/১২ ফুটের একটি কার্পেট কিনতে হবে। কুইন সাইজের জন্য ৮/১০ ফুট এবং টুইন বিছানার জন্য অন্তত ৭/৯ ফুটের। এ ছাড়া আপনি আপনার ইচ্ছেমতো আরও বড় কার্পেটও কিনতে পারেন।’

সূত্র: দ‍্য স্প্রুস