একেক ধরনের আসবাব একেক উপায়ে পরিষ্কার করতে হয়। মডেল: নিশাত লোপা
একেক ধরনের আসবাব একেক উপায়ে পরিষ্কার করতে হয়। মডেল: নিশাত লোপা

কোন আসবাব কীভাবে ভালো রাখবেন

ঝকঝকে আসবাব যেমন ঘরের শোভা, তেমনি আসবাব নোংরা হলে সেখানে বসা বা শোবার ইচ্ছাও মরে যায়। তাই নিয়মিত ঘর পরিষ্কারের মতো আসবাবেরও যত্ন দরকার। কোন ধরনের আসবাবের যত্ন কীভাবে নেবেন, জেনে নিন এখানে।

প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম কাঠ, ফাইবার, রট আয়রন, বেত, কাপড়—নানা উপকরণে বানানো হয় আসবাব। উপকরণ যেটাই হোক, পরিষ্কার করা প্রয়োজন প্রতিদিন। ধুলা একবার জমে গেলে সেই ক্ষতি পোষানো কঠিন। তবে এই বাড়তি ধুলাটুকু ঝাড়তেও হবে সঠিকভাবে। আবার ঋতুভেদেও আসবাবের যত্নের ধরনে আসবে ভিন্নতা। যত্ন নেওয়ার ধরন বুঝে গেলে বছরের পর বছর ভালো থাকবে ঘরের আসবাব। জেনে নেওয়া যাক সেসবেরই আদ্যোপান্ত।

রং করা আসবাব

পুরোনো আসবাবের ওপর অনেকেই রং করান। এতে চকচকে ভাব আসে। এ ধরনের আসবাব মোছা উচিত প্রতিদিন। সাদা রঙের আসবাবের আবার দরকার বিশেষ যত্ন। অনেকে ডকু করান, অনেকে আবার দেয়াল রাঙানোর রং দিয়ে আসবাব রঙিন করেন। সাদা রঙের একটাই সমস্যা, সহজে ময়লা হয়ে যায়। দাগ লাগলে দেরি না করে সাবানপানি দিয়ে মুছে ফেলুন। টুথপেস্ট অথবা ভিনেগার লাগিয়ে কাপড় দিয়ে ঘষলেও পরিষ্কার হয়ে যাবে। একইভাবে পরিষ্কার করে নিতে পারেন অন্য রঙের আসবাবও। শুধু ধুলা ঝাড়ার জন্য শুকনা কাপড়ই যথেষ্ট। রং করা আসবাবে কয়েক মাস পরপর অয়েল ফিনিশ (আসবাবের ওপর ব্যবহার করার জন্য একধরনের তেল) লাগাতে পারেন। আসবাবের রং ভালো থাকবে, পাশাপাশি উজ্জ্বল দেখাবে।

কাঠের আসবাব

কাঠের আসবাবে বার্নিশ থাকবে। এ কারণে সব সময় শুকনা ডাস্টার বা কাপড় দিয়ে ধুলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন। কাঠের ওপর করা পলিশ বা বার্নিশ ভেজা কাপড়ের সংস্পর্শে এলে দ্রুত মুছে যেতে পারে। কাঠের আসবাবকে সরাসরি রোদ ও বৃষ্টি থেকে দূরে রাখতে হবে।

দুই মাসে একবার স্প্রে ব্যবহার করলেই ভালো থাকবে কাঠের আসবাব

কড়া রোদে কাঠের রং নষ্ট হয়ে যায়। ফেটে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। সরাসরি রোদ আসে, এমন জানালার পাশে কাঠের আসবাব না রাখাই ভালো। কাঠের ওপর পানি পড়ে গেলে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। আবার বৃষ্টির সময় কাঠের আসবাব দেয়াল থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। কারণ, ঘরের দেয়াল থেকে আর্দ্রতা টানার একটা প্রবণতা কাঠের আসবাবের থাকে।

মিস্ত্রির ঝামেলায় যেতে না চাইলে লেকার বার্নিশ স্প্রে কিনে নিজেই বার্নিশ করে ফেলতে পারেন। দুই মাসে একবার এই স্প্রে ব্যবহার করলেই ভালো থাকবে।

 চামড়ার চেয়ার

শখের বশে অনেকেই কেনেন চামড়ায় মোড়া চেয়ার। এ ধরনের আভিজাত্যই আলাদা। এসব সোফা বা চেয়ারের একটাই অসুবিধা, শুকিয়ে ফেটে যেতে পারে চামড়া। রোদ অথবা তাপ ছড়ায়, এমন বৈদ্যুতিক যন্ত্র আছে, এ রকম জায়গা থেকে দূরে রাখুন চামড়ার চেয়ার। পরিষ্কার করার সময়ও সচেতন থাকুন। সাদা ভিনেগারের সঙ্গে পানি মিশিয়ে আলতো হাতে পরিষ্কার করে নিতে পারেন।

কাপড়ে মোড়ানো চেয়ার

এমন চেয়ার নিয়মিত ঝাড়তে হবে
  • ফোমের ওপর কাপড় দিয়ে মোড়ানো চেয়ারগুলো নিয়মিত ঝাড়তে হবে। ধুলা বসতে দেওয়া যাবে না। তিন মাস পরপর পেশাদার লোক দিয়ে পরিষ্কার করাতে পারেন। বাড়িতেও দুই সপ্তাহ পরপর নিজেই পরিষ্কার করে নিতে পারেন।

  • এমন আসবাব পরিষ্কার করতে লাগবে—ভিনেগার ৩ টেবিল চামচ, ডিশ ওয়াশিং লিকুইড ৩ চা-চামচ, বেকিং সোডা ৩ চা-চামচ, ছোট তোয়ালে বা কাপড় ১টি, বাটির ঢাকনা ১টি।

  • প্রথমে পানি গরম করে একটি বড় বাটিতে ঢালুন। তরল পরিষ্কারক দিয়ে দিন। বেকিং সোডা দিয়ে তারপর ভিনেগার মেশান। সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে তোয়ালে বা কাপড়টি সাবধানে গরম পানিতে চুবিয়ে নিন। এবার চিপে বাড়তি পানি ফেলে দিন। কাপড়টি বিছিয়ে তার ওপরে ঢাকনাটি রাখুন। তোয়ালের চারকোনা ঢাকনার ওপর দিকে এনে পেঁচিয়ে শক্ত করে ধরুন। তোয়ালেসহ ঢাকনাটি এবার সোফার ওপর একটু চাপ দিয়ে ঘষুন, ইস্তিরি করার মতো। পুরো সোফা এভাবে দুবার ঘষতে হবে। ময়লা থাকলে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

  • চাইলে সোফা ঢাকার জন্য আলাদা করে কভার বানিয়ে নিতে পারেন। কভারটি কয়েক দিন পরপর ধুয়ে নিলেই ঝামেলা শেষ। এ ধরনের আসবাব সূর্যের আলো সরাসরি আসে, এমন জায়গা থেকে দূরে রাখা উচিত। নইলে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে কাপড়ের রং। ভ্যাকিউম ক্লিনার বা ঝাড়ু দিয়ে প্রতিদিন ঝাড়ুন।

বাঁশ-বেতের আসবাব

প্রাকৃতিক উপকরণ, যেমন বাঁশ-বেত, গোলপাতা, হোগলা দিয়েও এখন তৈরি হচ্ছে আসবাব। এ ধরনের আসবাব সরাসরি রোদের আলো ও তাপে রাখা যাবে না। সহজেই শুষ্ক হয়ে যায়। প্রতিদিন ধুলা ঝাড়ুন। প্রয়োজনে কাপড় হালকা ভিজিয়ে নিয়ে মুছতে পারেন। এতে করে কিছুটা আর্দ্রতা পাবে আসবাব। আবার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এসব আসবাবের রং নষ্ট হয়ে যায়। তাই ব্যবহারে সাবধান থাকুন।

ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতের আসবাবের যত্ন আবার আলাদা। মডেল: মাহেলেকা

আবহাওয়াভেদে যত্ন

আমাদের দেশে বর্ষা বা টানা বৃষ্টির সময় কাঠের আসবাবে কিছু সমস্যা হয়। বর্ষার সময় ঘরের কাঠের আকার বেড়ে যাওয়ার একটা শঙ্কা দেখা দেয়। অবশ্য আসবাব বা দরজার কাঠ ভালো করে সিজনিং করা থাকলে এ সমস্যা হয় না। না হলে বৃষ্টির সময় দেখা যায়, কাঠের দরজা খুলতে বা লাগাতে সমস্যা হচ্ছে।

বৃষ্টির প্রভাব কাঠের জিনিসে পড়ে বেশি। বাইরের আর্দ্রতা শোষণ করে ফুলে ওঠে আসবাব। পাশাপাশি ছাতা পড়েও বার্নিশ আর লেকার করা চেয়ার–টেবিল ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে।

শীতকালে আসবাব ভালো রাখা সহজ

বৃষ্টির সময় কাঠের কোনো কাজ না করালেই ভালো। বৃষ্টিতে কোনো কিছু বানানো, বার্নিশ করা বা রং না করানোই ভালো। আরেকটা কথা, কাঠের আসবাব বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও রোদে শুকাবেন না। ভেজা আসবাব হঠাৎ কড়া রোদে পড়লে ফাটল ধরে দ্রুত। এ ছাড়া স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কাঠের দরজা-জানালা, আসবাবে ঘুণপোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ বাড়ে। এ কারণে বৃষ্টির সময় কাঠের আসবাবের ভেতর ন্যাপথলিন, নিমপাতা রাখতে পারেন। দরজা-জানালায় লাগাতে পারেন মোমের মিশ্রণ। দরজা-জানালার ছিটকিনি ও কবজাগুলোতে নিয়মিত তেলও দিতে পারেন। এ ছাড়া সম্ভব হলে ‘হিউমিডিফায়ার’ (আর্দ্রতা শোষণের যন্ত্র) ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের বাতাসের বাড়তি আর্দ্রতা শুষে নেবে।

কাঠের ফোলা ভাব দূর করতে বার্নিশও ভালো কাজ করে। মানভেদে বছরে দু-একবার বার্নিশ বা লেকার করালে কাঠের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। বোর্ড দিয়ে আসবাব বানালে কাটা অংশে প্রথমেই ভালো করে পুডিং লাগিয়ে নিন। পরবর্তী সময়ে বাতাস বা পানি জমে ফুলে উঠবে না।

গরমের সময় আবার অতিরিক্ত রোদের কারণেও আসবাব বেঁকে যায়। আসবাব অনেক সময় ধরে প্রখর আলোয় থাকলে নষ্ট হয়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া, এমনকি ফাটলের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। জানালার পাশে মোটা পর্দার ব্যবহারও আসবাবকে সুরক্ষা দেবে। এ ছাড়া গরমের সময় ঘুণপোকার উপদ্রব বেড়ে গেলে পেস্ট কন্ট্রোল ডাকুন।

শীতকাল এদিক দিয়ে ভালো। আসবাবের যেকোনো কাজ, এমনকি রং করানোর কাজটাও এ সময় করে নিতে পারেন।

 সূত্র: টুমরোজ ক্লিনিং, গুড হাউসকিপিং ও ক্লিনার ডটকম

(লেখাটি বর্ণিল বসত নভেম্বর ২০২৪–সংখ্যায় প্রকাশিত)