একটা সময় ছিল যখন অভিজাত পরিবারের বাসাবাড়িতেই শুধু শোভা পেত টাইলস। আর এখন তো পাকা বাড়ি মানেই টাইলস। বাড়ি তৈরির জন্য ইট, বালু, রড, সিমেন্টের মতোই সহজলভ্য এখন টাইলস।
টাইলসের সহজলভ্যতা ঘরের সৌন্দর্যেও দিয়েছে নতুন মাত্রা। শুধু মেঝে নয়, ঘরের দেয়ালেও শুরু হয়েছে টাইলসের ব্যবহার। কখনো কখনো ঘরের কিছু কিছু অংশেও ব্যবহৃত হচ্ছে টাইলস। রান্নাঘর, বেসিনের আশপাশ ও টিভি ক্যাবিনেটের পাশে অনেকে টাইলস ব্যবহার করেন। এসব জায়গায় সব ধরনের টাইলস ব্যবহার করা যায় না। তাতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির বদলে কমতে পারে।
টিভি ক্যাবিনেটের পেছনে
বসার ঘরের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে টিভি। বেশির ভাগ সময়ই টিভির পেছনের দেয়াল থাকে অব্যবহৃত। দৃষ্টিসীমায় বাধা পড়বে বলে চাইলেও টিভির পেছনের দেয়ালে অনেক কিছু করা যায় না। আর টিভি যদি হয় ওয়াল মাউন্টেড, তবে তো আর কথাই নেই। টিভির পেছনের জায়গাটাকেও টাইলস দিয়ে রাঙিয়ে তুলতে পারেন। বর্তমানে বাজারে টাইলসের ডিজাইনের অভাব নেই। আর বাকি জায়গার মতো এসব টাইলস পানিপ্রতিরোধী কি না, সেসব নিয়েও বাড়তি চিন্তা নেই। বরং পুরো চিন্তাই থাকবে বসার ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির দিকে।
টিভি ক্যাবিনেটের সৌন্দর্য বাড়াতে বেছে নিতে পারেন বড় টাইলস। এতে করে প্রতিটি টাইলসের মাঝে থাকা ফাঁকা জায়গা বোঝা যাবে না। বাজারে টিভি ক্যাবিনেটের জন্য আলাদা করে বড় আকারের টাইলস পাওয়া যায়। এখানে টাইলস ব্যবহার করলে খুব বেশি জবরজং করা যাবে না। এতে টিভি দেখতে গিয়ে দৃষ্টি অন্যদিকে চলে যাবে। কাঠের টেক্সচারের টাইলস ব্যবহার করা যেতে পারে টিভি ক্যাবিনেটের পাশে। এ ছাড়া হালকা নীল, বাদামি নকশার টাইলসও ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণ টাইলসের থেকে অবশ্য এসব টাইলসের দাম তুলনামূলক বেশি। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে এটুকু খরচ তো করাই যায়।
রান্নাঘরে
দেয়ালে টাইলসের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় রান্নাঘরে। বাঙালির রান্নাঘর যেহেতু তেল-মসলার পাকে ভরপুর থাকে, তাই সেখানে তেল চিটচিটে ভাব হয় বেশি। রান্নাঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে থাকতে হয় সদা সতর্ক। তাই সাধারণ দেয়ালের পরিবর্তে রান্নাঘরের দেয়ালে টাইলস ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।
গ্যাস ও ধোঁয়া থেকে নিয়মিতই ময়লা হতে থাকে রান্নাঘরের দেয়াল ও হাঁড়ি-কড়াই। যে কারণে রান্নাঘরের দেয়ালে রং করার চেয়ে টাইলস ব্যবহার করলে সহজে পরিষ্কার করা যায়।
সহজে পরিষ্কারযোগ্য এবং টেকসই হওয়ায় দেয়ালের জন্য রান্নাঘরের টাইলস হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিনামটির টাইলস। এ ধরনের টাইলস সহজলভ্য, দামও কম। পাথরের টাইলসও বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। তবে দেয়ালের টাইলসে খুব বেশি নকশা না থাকাই ভালো মনে করেন অন্দরসজ্জাবিদ ফারজানা আক্তার। তাঁর যুক্তি, টাইলসে বেশি নকশা থাকলে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করা কঠিন হয়। অনেক সময় দেখে বোঝা যায় না জায়গাটি নোংরা। এতে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভার পড়ে। কারণ, রান্নাঘরে হাইজিন মেনে চলা জরুরি। অনেকে নানা রকম খাবারের ছবিযুক্ত টাইলস ব্যবহার করেন, তবে সেটা বুঝে ব্যবহার করাই ভালো। রান্নাঘরের টাইলসে হালকা রং ব্যবহার করলে ঘরটি দেখতেও প্রশস্ত লাগে। রান্নাঘরের জন্য পানিপ্রতিরোধী ও পরিষ্কার করা সহজ, এমন টাইলসই বেশি জনপ্রিয়।
বেসিনের ওয়ালে
বেশির ভাগ ফ্ল্যাটে ডাইনিংয়ের বেশ কাছে থাকে বেসিন। খাওয়ার পরপরই হাত ধোয়ার জন্য যাতে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে না হয়, সে জন্যই এ ব্যবস্থা। আবার শহুরে বাড়িতে জায়গা নিয়ে বিলাসিতা করারও খুব একটা সুযোগ থাকে না। নিয়মিত বেসিন ব্যবহার করা হয় বলে সেখানকার দেয়ালে দ্রুত ময়লা হয়। এটার সমাধানেও বেসিনের আশপাশে টাইলসের ব্যবহার বাড়ছে। এই জায়গাটুকু সাজানোর জন্যও অনেকে টাইলস লাগান। তবে বেসিনের পেছনে টাইলস দেওয়ার মূল কারণ দেয়ালের ড্যাম্প প্রতিরোধ। বেসিনের পানি ছিটকে গিয়ে যাতে দেয়াল নষ্ট না হয়, সে কারণেই টাইলসের ব্যবহার।
এই অংশের টাইলস কিছুটা গাঢ় রঙের হতে পারে বলে মনে করেন অন্দরসজ্জাবিদ ফারজানা আক্তার। অনেকে চেহারা দেখার জন্য বেসিনের সামনের আয়নায় চোখ রাখেন। তাই সেটা ফোকাসে রাখতেই এমনটা করা যেতে পারে। ফারজানা আক্তার বলেন, বেসিনের সামনের পুরো দেয়াল নয়, বরং কিছুটা অংশে এই টাইলস ব্যবহার করা যায়। কিছুটা পিচ্ছিল ধরনের সিরামিক–জাতীয় টাইলস এখানে ব্যবহার করতে পারেন। এতে নিয়মিত পানি লাগলেও মোছা সহজ হবে।
বেসিনের সামনে থাকা আয়নার সঙ্গে মিল রেখে সাজানো যায় দেয়াল। এ ছাড়া বেসিনের নকশা মিলিয়েও কিনতে পারেন টাইলস। যেহেতু পুরো ঘরের ডিজাইন থেকে বেসিনের দেয়াল আলাদা হয়ে থাকে, তাই টাইলসের রং কিংবা প্যাটার্নেও আনতে পারেন বৈচিত্র্য। তবে খেয়াল রাখতে হবে, টাইলসগুলো যেন হয় পানিপ্রতিরোধী। এদিক থেকে সিরামিক অথবা পোর্সেলিনের তৈরি টাইলসের জনপ্রিয়তা তুলনামূলক বেশি।