বসার ঘরটাই সবচেয়ে সুন্দর করে সাজাই আমরা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শোবার ঘর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই ঘরেই কাটে আমাদের জীবনের বড় একটা অংশ। কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে শোবার ঘরটিও হয়ে উঠতে পারে পাঁচ তারকা হোটেলের কক্ষের মতো আকর্ষণীয়। জেনে রাখুন এমনই আটটি পরামর্শ—
অনেকেই বলেন, হোটেলের বিছানায় ভালো ঘুম হয়। টানা আট ঘণ্টা হোক আর ছয় ঘণ্টা, ভালো ঘুমের জন্য আপনার প্রয়োজন একটি আরামদায়ক বিছানা। নিজের বিছানা-বালিশে যখন শরীর এলিয়ে দেবেন, তখন আরাম না লাগলে যে ‘ষোলো আনাই মিছে’। নিজের বিছানায় গেলেই যেন মনে হয়, দুনিয়ার সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ স্থানে আছেন। এ ক্ষেত্রে বিছানার চাদরের কাপড়টি যেন অবশ্যই আরামদায়ক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। পাশাপাশি তা দেখতে সুন্দর হলে চোখের আরাম, মনের জন্য ভালো। বিছানার চাদরের কাপড় হিসেবে বিশেষজ্ঞরা লিনেনকেই এগিয়ে রাখেন। লিনেন দেখতে সুন্দর, দেহের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে। বালিশের জন্য আবার সিল্কের কভার জুতসই। ত্বক ও চুলের জন্যও ভালো; দেখতেও বেশ রাজকীয়।
শোবার ঘরের আলো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রং ও আলোর মাত্রা এ ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয়। শোবার ঘরের আলোকসজ্জা হতে হবে মৃদু। মাঝেমধ্যে ঝলমলেও হতে পারে। অর্থাৎ শোবার ঘরে একই সঙ্গে মৃদু ও ঝলমলে আলোর ব্যবস্থা রাখুন। পরিস্থিতি অনুযায়ী আলোর মাত্রা কমান বা বাড়ান। যেমন বিছানায় শুয়ে কিছু পড়তে গেলে আলো একটু বেশি লাগবেই। আবার চাইলে বিছানার পাশের টেবিলের ওপর রাখা ল্যাম্পের আলোতেও পড়তে পারেন। তবে বেশির ভাগ সময় শোবার ঘরে মৃদু আলোই বেশি দরকার। এই মৃদু আলো বা পরোক্ষ আলোর জন্য কাপড়ের তৈরি ল্যাম্পশেড কিংবা কোভ লাইটিং বেশ কার্যকর।
বিলাসবহুল হোটেলের ঘরগুলো কখনোই আনুষঙ্গিক জিনিস এবং ছোটখাটো আসবাবে ঠাসা থাকে না। বরং থাকে পরিমিত আসবাব। তাই নিজের শোবার ঘরেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। মোটকথা, ঘরটাকে দেখতে যেন আসবাবপত্রের দোকানের মতো না লাগে। ব্যক্তিগত পছন্দের জিনিস, যেমন ফুলদানি, ঘড়ি বা বিছানার পাশের টেবিলে একটি শোপিস কখনো কখনো যথেষ্ট। এমন কিছু জিনিস বেছে নিন, যা রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। এমন সব জিনিসপত্র ফেলে দিন বা কাউকে দিয়ে দিন, যেসব আপনার শোবার ঘরকে আরামদায়ক করে তোলার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিলাসবহুল হোটেলে থাকার সবচেয়ে ভালো দিক কী? সকালে উঠে আপনাকে বিছানা গোছাতে হয় না। সারা দিন নতুন শহরে ঘুরে, খেয়েদেয়ে হোটেলের কক্ষে ফিরে আসার পরও দেখতে পান আপনার ঘরটি একেবারে ঝকঝকে তকতকে। বাসায় তো আর এ সুবিধা সবাই পান না। তাই ঘর গোছানোর কাজ যতটা সম্ভব নিজেই করুন। আর এতে আপনার সকালটাও শুরু হবে দুর্দান্তভাবে।
ঘর বড় হলেই যে সব আপনা–আপনি সুন্দর হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। মনোযোগ দিয়ে হোটেলকক্ষের দিকে তাকালেই তা বুঝতে পারবেন। ফলে সুন্দর করে সাজাতে আপনার শোবার ঘর যে বড় হতেই হবে, তা কিন্তু নয়। তবে একটু বুদ্ধি খাটালে ছোট ঘরটিও বড় দেখাবে। বুদ্ধিটা হলো, ঘরের এক বা একাধিক জায়গায় বিভিন্ন আকারের আয়না রাখুন। রাজকীয়ভাব আনতে বিছানার পাশের টেবিলের ওপর আয়না ঝুলিয়ে দিতে পারেন।
ঘরে শিল্পকর্ম ঝুলিয়ে রাখা কেবল ব্যক্তিত্বের প্রকাশ নয়, ঘরের সৌন্দর্যও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বিলাসবহুল হোটেলগুলোয় ঘর সাজানোর সময় শিল্পকর্মের ব্যবহার থাকেই। বড় ক্যানভাস কিংবা ফ্রেমে বাঁধানো বিভিন্ন চিত্রকর্ম ব্যবহার করতে পারেন। আধুনিক শিল্পকলার প্রতি আগ্রহী হলে বিমূর্ত কোনো চিত্রকর্ম ঝোলাতে পারেন। চাইলে প্রাকৃতিক দৃশ্যের চিত্রকর্মও থাকতে পারে আপনার শোবার ঘরের দেয়ালে।
শোবার ঘরে ছোট্ট ও আরামদায়ক কার্পেট বিছাতে পারেন। রোজ সকালে বিছানা থেকে নেমে ওই কার্পেটে পা পড়লে আরাম বোধ করবেন। মরক্কোর কার্পেটগুলো বেশ আরামদায়ক। ঘরে স্নিগ্ধতা আনতে সাদা বা কালোর কোনো শেড বেছে নিতে পারেন এ ক্ষেত্রে।
হোটেলের দাগময়লাহীন প্রশস্ত বাথরুম সবারই পছন্দ হয়। শোবার ঘরটির সাজসজ্জায় পরিপূর্ণতা আনতে আপনার বাথরুমটিও সুন্দরভাবে সাজান। ত্বক ও চুলের পরিচর্যার জন্য ব্যবহৃত পণ্যগুলো ড্রয়ার, নির্দিষ্ট পাত্র কিংবা বাক্সে রাখুন, যাতে বেসিনের চারপাশটায় বেশি গাদাগাদি না হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো একটি মার্বেলের ট্রের ওপরে রাখা ছোট ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখতে পারেন। একটি মোমবাতি আর ছোট্ট এক বোতল পারফিউমও রাখতে পারেন। প্রশ্ন করতে পারেন, শোবার ঘরের বাথরুমে তো কেবল আমিই যাই, এর আবার সাজগোজ কী? এর একটাই উত্তর, যেকোনো কিছু সাজিয়েগুছিয়ে সুন্দর করে রাখলে নিজে ভালো থাকা যায়। অন্যে কী বলবে না বলবে তা পরের বিষয়, আগে তো নিজে ভালো থাকা চাই।
তথ্যসূত্র: দ্য স্প্রুস