পিন্টারেস্টে অন্দরসজ্জা দেখা শুরু করেন রুনা খান। সেখান থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটের জায়গা মিলিয়ে কাজ শুরু করেন রুনা খান। বাড়িতে প্রাধান্য পেল নিজের প্রিয় সাদা রং। রুনা খান মনে করেন, সাদাতেই তিনি সবচেয়ে মায়াবী। নির্ঝঞ্ঝাট মনের শুভ্রতারই বাহ্যিক প্রতিফলন তাঁর ঘরে
সুনীলের উপন্যাসে পড়া ‘শ্বেতপাথরের টেবিল’ আর বিদেশি চলচ্চিত্র দেখে মাথায় শক্ত হয়ে গেড়ে বসা ‘কাঠের বাড়ি’—এই দুটি বিষয়কে ধারণ করেই যেন ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের মধ্যে এক সাম্রাজ্য গড়েছেন গুণী অভিনয়শিল্পী রুনা খান। ২০১৬ সালে সদ্য নির্মিত ফ্ল্যাটের চাবি হাতে দিয়ে স্বামী এষণ ওয়াহিদ যখন বললেন, ‘এটা তোমার মতো করে সাজাও।’ তখন আক্ষরিক অর্থেই নিজের মতো করে সাজানো শুরু করলেন নিজেদের সেই নীড়। বাড়িতে প্রাধান্য পেল নিজের প্রিয় সাদা রং। রুনা খান মনে করেন, সাদাতেই তিনি সবচেয়ে মায়াবী। আর নির্ঝঞ্ঝাট মনের শুভ্রতারই বাহ্যিক প্রতিফলন এ ঘর।
ফ্ল্যাটের গতানুগতিক আচ্ছাদন বদল করতে সময় লেগেছে ছয় মাসের মতো।স্বামীর কাছের বন্ধু ও তাঁর (রুনাখানের) সহকর্মী ইরেশ যাকেরের পরামর্শে পিন্টারেস্টে অন্দরসজ্জা দেখা শুরু করেন। সেখান থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটের জায়গা মিলিয়ে কাজ শুরু করেন রুনা খান।নিজের পছন্দের সঙ্গে মিলিয়ে ঘরের আসবাবগুলোতে রেখেছেন সাদা রং।রুনা খান বলেন, ‘এমনকি দেয়ালের দুই পাশের বাতিগুলো চোখ থেকে কতটুকু দূরত্বে রাখলে সেটা বেশি কার্যকর হবে, সেসবওপড়াশোনা করে জেনেছি।’
ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে সিলিংয়ের ওপর আয়তাকার দুটি আয়না, যার নিচে দাঁড়ালে নিজের প্রতিবিম্ব আর ঘরের একেক অংশ অন্য রকম দেখা যায়। এ ধারণাও তিনি পেয়েছেন পিন্টারেস্ট থেকে।
অভিনেত্রী রুনা খানের ফ্ল্যাটের অন্দরসজ্জা অনেকটা ইউরোপীয় ঘরানার। তাই চোখে পড়বে না কোনো সিলিং ফ্যান। দরজা খুলে কেউ ভেতরে ঢুকতেই যে দেয়াল চোখে পড়বে, সেটা বানানো হয়েছে ক্লাডিং টাইলসে, সে দেয়ালেই ফ্রেমে বাঁধানো নীল জলরাশির মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা পাতাহীন একটি বৃক্ষের ছবি। ছবিটি দেখলে আগন্তুকমাত্রই জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নেবেন—অনেক সংকটেও কীভাবে গাছের মতোই অটল দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
ডান পাশে টাইলসের মেঝের ওপর কাঠের নকশা। এতে এক কোনায় রাখা আছে ডিভান। এই ডিভানেই তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের মিলনমেলা। সামনে টিভি, বাঁয়ে বইয়ের তাক এবং ডানে খোলা জায়গা মিলে ডিভানটিই তাঁর প্রিয় কর্নার। রুনা খান দেখালেন, এ জায়গায় বসেই অবসরে প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণের বইয়ে ডুবে থাকেন তিনি। রাতে দেয়ালের সাদা আলোকসজ্জা আর কাঠের মেঝের নিচ থেকে আসা কিঞ্চিৎ আলো যেন জুমঘরে আসা বিলাসী জ্যোৎস্না।
ডাইনিংসহ সব টেবিলই শ্বেতপাথরের। রুনা খান জানালেন, ডাইনিংয়ে বসে সকালের কফি খেতে খেতে দেখেন দক্ষিণমুখী বারান্দায় সন্তানসম গাছগুলোর প্রতিদিন বড় হতে থাকা। এখানে বাগানজুড়ে আছে বাগানবিলাস, কৃষ্ণচূড়া, হাসনাহেনা, জুঁই। টাঙ্গাইলে বেড়ে ওঠার সময় এই অভিনেত্রীর বাবার কেনা ২৫ কাঠা জমির অনেকটাজুড়েই ছিল বাগান। গাছপালার ভেতর থাকার সেই অভ্যাস সবুজের প্রতি অদ্ভুত মায়া তৈরি করে দিয়েছে তাঁর মধ্যে। রুনা খান জানান, ছোটবেলায় তাঁদের বাড়ির বাগানে ২০০ থেকে ২৫০টি গোলাপ ফুটত। আরও থাকত হাসনাহেনা, গন্ধরাজের মতো ফুল। তাঁর বন্ধুরাও জানতেন তাঁদের সেই বাড়ির বাগানের বিশেষত্ব।
ডাইনিং টেবিলের ধরনে রেখেছেন ভিন্টেজ–ছোঁয়া। হাতের নাগালে পাওয়া দূরত্বেই পরিপাটি করে সাজানো ডাইনিং। সব কটি তাক আর ড্রয়ার সাদা ও ক্রিম রঙের মিশেলে করা।
ডাইনিং থেকে সোজা এগোলেই বড় আয়না। নিজের প্রিয় সব নতুন–পুরোনো গয়না সেই আয়নার পেছনেই সাজানো থাকে। এ আয়নার ডানে একমাত্র কন্যা রাজেশ্বরীর ঘর আর বাঁয়ে নিজেদের শোবার ঘর। স্বামীর কেবল একটাই চাওয়া ছিল, ঘরে অতিরিক্ত আসবাবে যেন দমবন্ধ না লাগে। আর নিজেরও যেহেতু সরল নকশা পছন্দ, তাই দুটো ঘরের নকশাই ‘মিনিমাল ইন্টেরিয়র ডিজাইনে’ করা। তবে সেসবেও সাদা রঙেরই প্রাধান্য।
রাজেশ্বরীর ঘরে রাখা বাবার কিনে দেওয়া প্রথম চেয়ার–টেবিল। স্মৃতিময় এটি ছাড়া সব আসবাবই ধানমন্ডি ছেড়ে আসার সময় পরিবর্তন করে নিয়েছেন। ছোটবেলার সেই চেয়ারের একটিতে বসেই পিয়ানো বাজানো শেখে রাজেশ্বরী। কখনো কখনো সেই পিয়ানোয় ভেসে আসে সেই অকৃত্রিম সুর—‘কী জানি কিসেরও লাগি মন করে হায় হায়!’
আলোকবাতি, মোমবাতি আর আয়নার প্রতি ভীষণ ঝোঁক এই অভিনয়শিল্পীর। তাই বিশেষ দিবস কিংবা ভিন্ন আয়োজনে বাড়িতে শোভা পায় সুগন্ধী মোমবাতি আর তাজা ফুল। রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা কিংবা গোলাপের তোড়া যেন কৃত্রিমতাবর্জিত এক সাধারণ জীবনেরই সুবাস দেয়।
রুনা খান বলেন, ‘এটি আমার সাদা পাথরের ছোট্ট একটি গুহা। যেখানেই থাকি, দিন শেষে কিংবা কাজ শেষে এখানে ফেরার জন্যই ব্যাকুল হয়ে পড়ি। কারণ, সদর দরজা থেকে বাড়ির শেষ জানালা—প্রতিটিই নিজের হাতে গড়া।’ অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারা এই শিল্পীর জীবনের পুরোটাজুড়ে আছে পরিবার, প্রিয়জন ও কাজ। আর পরিবার নিয়ে নিজের পছন্দের বাড়িতে দিনযাপন যেন স্বপ্নকেই লালন করা।