শাড়ি তো ছিলই, ফ্যাশন অনুষঙ্গেও এখন ঢুকে পড়েছে জামদানি মোটিফ। তবে এসবের বাইরে অন্দরেও কিন্তু জায়গা করে নিতে পারে দেশীয় ঐতিহ্যের এই প্রতীক। ভিন্নধারার এই নকশায় অন্দরসজ্জায় আসে বৈচিত্র্য, ঘরও হয়ে ওঠে দৃষ্টিনন্দন।
ভাবনায় দেশ
অন্দরসজ্জার জন্য প্রশান্তিদায়ক কিছু খুঁজছিলেন সায়কা সিরাজ। তখন করোনার দুঃসময় চলছে। চারদিকে মৃত্যুর বিভীষিকা। ভয়াবহ রূপে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। আরও অনেক মানুষের মতো তাঁকেও বাড়ি থেকেই কর্মস্থলের কাজ করতে হয়েছে। নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর তিনি। বাড়িতে নিজের কাজের জায়গাটাতে প্রশান্তির পরশ আনার কথা ভাবছিলেন। প্রথমে অবশ্য জ্যামিতিক মোটিফে অন্দর সাজানোর পরিকল্পনা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর মনে হলো, বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো নকশা বেছে নেবেন। নিজস্বতার সেই অনুভব থেকেই বেছে নিলেন জামদানির মোটিফ। ভিন্নধর্মী এ ভাবনার পুরো কৃতিত্ব অবশ্য নিজে নিতে নারাজ সায়কা। তাঁর ভাবনাকে বাস্তব
রূপ দিয়েছেন স্টুডিও এ-র স্থপতি নাজিয়া ফেরদৌস। সায়কার বাড়ির কাজের জায়গা, অর্থাৎ ডেস্ক-টেবিল তো বটেই, আলমারিজুড়ে থাকা আয়না আর অন্দরের কাচের দরজাতেও বাংলাদেশকে উপস্থাপন করছে শৈল্পিক জামদানি মোটিফ। তাঁর অন্দরের অনুষঙ্গেও খোদাই করা হয়েছে জামদানি মোটিফ। আর কাচের ওপর জামদানির নকশা আনা হয়েছে ফ্রস্ট পেপারের সাহায্যে।
ঐতিহ্যে, সৌন্দর্যে
ঢাকার বাড়িটি থেকেই অনলাইনে বহু আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মেও যোগ দিয়েছেন সায়কা। জামদানি নকশা চেনেন না, দেশের বাইরের এমন বহু মানুষ তাঁর কাছে জানতে চেয়েছেন এই নকশা সম্পর্কে। সায়কার বাড়ির অন্দরটাকে ভিডিও মাধ্যমে দেখেই কৌতূহল জেগেছে তাঁদের মনে। সায়কাও সুযোগমতো জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যের কথা। সায়কার বাড়ির অন্দরের পর একই ভবনে তাঁর মায়ের বাড়িতে শিশুদের খেলার জায়গাতেও কাজে লাগানো হয়েছে জামদানির দারুণ নকশা।
বহুবিধ ব্যবহারে
সৃষ্টি আর্কিটেকচার অ্যান্ড কনসালট্যান্সির স্বত্বাধিকারী স্থপতি তাসনিম তূর্যি বলছিলেন, অন্দরসজ্জায় জামদানি নকশাকে নানাভাবেই কাজে লাগানো যায়। কেবল মোটিফটা নিয়ে যেমন কাজ করা যায়, তেমনি সরাসরি কাপড়টাকেও ব্যবহার করা সম্ভব। দেয়ালে খোদাই করে বা সিএনসি কাটিংয়ের সাহায্যে জামদানির নকশা তোলা যায়। কাঠ বা বোর্ডে জামদানি নকশা তোলার সুযোগ তো আছেই। এই যেমন অন্দরের ক্যাবিনেটের পাল্লায় কাটিংয়ের সাহায্যে তোলা যেতে পারে জামদানি নকশা।
জামদানি বুননের কাপড় বা সাধারণ কাপড়ে জামদানি মোটিফের নকশা—দুটোই কাজে লাগাতে পারেন অন্দরে। ব্লক প্রিন্ট, কাঁথা স্টিচ কিংবা এমব্রয়ডারি—নানা মাধ্যমেই জামদানি নকশা তোলা যায় সাধারণ কাপড়ে।
আরও কিছু ব্যবহার
জামদানি কাপড় দিয়ে জানালার পর্দা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সাদা, চাপা সাদা, বেবি পিঙ্ক বা মভ পিঙ্কের মতো হালকা রং বেছে নেওয়া ভালো।
বসার ঘর আর খাবার ঘরের মাঝে কাঠের ফ্রেম বসিয়ে কাচের স্বচ্ছ পার্টিশন করতে পারেন, যেখানে ফ্রস্ট পেপারের সাহায্যে জামদানি মোটিফ ব্যবহার করা যায়। চাইলে অর্ধস্বচ্ছ পার্টিশন হিসেবে সরাসরি জামদানি কাপড়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে হালকা রঙের কাপড় বেছে নিতে হবে।
জামদানি কাপড় কিংবা জামদানি নকশা তোলা কোনো কাপড় ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে পারেন।
সোফা, চেয়ার বা মোড়ার কভার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে গাঢ় রঙের জামদানি কাপড় বেছে নিন। তবে কভার তৈরির সময় জামদানি কাপড়ের ভেতরে অন্য একটি পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে নিতে হবে। আবার জামদানি বুননের পরিবর্তে অন্য কাপড়, অর্থাৎ কভারের জন্য একরঙা যেসব কাপড় পাওয়া যায়, তাতে জামদানি নকশা করেও কভার তৈরি করতে পারেন, এ ক্ষেত্রে ভেতরের বাড়তি কাপড়ের স্তরের প্রয়োজন নেই।
অন্দরে জামদানি মোটিফ ব্যবহার করতে চাইলে অতি আধুনিক ধাঁচে অন্দরকে না সাজিয়ে বরং দেশীয় ধারায় সাজালে অন্দর হয়ে উঠবে নান্দনিক। মাটি, টেরাকোটা বা বেতের অনুষঙ্গ জামদানি নকশার সঙ্গে মানানসই।