নতুন সংসারে আসবাব কেনার আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে

হালকা, ছিমছাম আসবাব চলতি ধারায় বেশ জনপ্রিয়। মডেল: মাশিয়াত ও ইমন, আসবাব: হাতিল, পোশাক: লা’রিভ, কৃতজ্ঞতা: অরা বিউটি লাউঞ্জ
ছবি : সুমন ইউসুফ

সুন্দর একটি গৃহকোণ কার না পছন্দ? বিয়ের পর যাঁরা নতুন সংসার শুরু করতে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান যে নতুন বাসাটি কীভাবে সাজাবেন? নিজের রুচির সঙ্গে বাজেট মিলিয়ে আসবাব কেনার কাজটা একটু ঝক্কিরই বটে।

অন্দরসজ্জাবিদ আবদুল্লাহ আল মিরাজ বলছিলেন, নতুন সংসারে আসবাব কেনার আগে যে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে, তা হলো বাসার আয়তন। বাসা যদি ছোট হয়, তাহলে হালকা স্লিম ফিট আসবাবই বেছে নেওয়া ভালো। বেশি কারুকার্যওয়ালা আসবাব রাখলে ঘর আরও ছোট দেখাবে। ছোট ঘরের জন্য অতিরিক্ত আসবাবের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

বসার ঘরে উজ্জ্বল রঙের সোফা পছন্দ করছেন অনেকেই

নতুন সংসারের উপযোগী বেশ কিছু আসবাব এনেছেন এখনকার আসবাবের প্রতিষ্ঠানগুলো। বেগম রোকেয়া সরণির আসবাবের দোকানগুলো ঘুরে জানা গেল, এখানে ফরমাশ দিয়ে পছন্দমতো আসবাব বানাতেই ক্রেতারা বেশি পছন্দ করছেন। ডিভান, লো হাইট খাট—এসব আসবাবের চাহিদা একটু বেশি বলে জানালেন এখানকার বিক্রেতারা। সহজেই পরিষ্কার করা যায়, জায়গাও কম লাগে বলে স্লিম ফিট আসবাব বেশি জনপ্রিয়, জানালেন আসবাব প্রতিষ্ঠান ইশোর বিক্রয়কর্মীরা। আর হালকা নকশা হওয়ার কারণে এ ধরনের আসবাব সব জায়গাতেই মানানসই।

আসবাব প্রতিষ্ঠান রাফি আর্ট গ্যালারির কর্ণধার রাজিব কাজী বলছিলেন, নতুন সংসারে কী কী আসবাব আগে প্রয়োজন, কেনাকাটার শুরুতেই তার একটা লিস্ট করে নিন। এরপর দুজন মিলে নিজেদের সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে বাজেট করুন। বসার ঘর, খাবার ঘর, শোবার ঘর—মূলত এই তিন ঘরের প্রয়োজনীয় কিছু আসবাব দিয়ে কেনাকাটা শুরু করুন।

পছন্দের আসবাবে ঘর সাজুক মনে মতো

নবদম্পতির জন্য বসার ঘর বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান। অনেকেই বলে থাকেন, বসার ঘরেই ফুটে ওঠে বাড়ির মানুষের রুচি। তাই স্বাভাবিকভাবেই বসার ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে বেশি সচেতন হতে হবে। বসার ঘরের জন্য সোফা আবশ্যকীয়। সোফা কেনার আগে ঘরের আয়তন দেখে আকার নির্ধারণ করুন। এ প্রসঙ্গে আসবাব নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হাতিলের পরিচালক শফিকুল রহমান বলছিলেন, ড্রইং বা লিভিং রুম সাজাতে কমপক্ষে এক সেট (২-২-১) নতুন সোফা ও সেন্টার টেবিলের প্রয়োজন পড়ে। বসার ঘরের জন্য কমলা, হলুদ, গাঢ় সবুজের মতো উজ্জ্বল রঙের সোফা সবাই পছন্দ করছেন বলে জানান তিনি। চাইলে ডিভানও রাখতে পারেন বসার ঘরে। ডিভানে রাখা ফোমে রঙিন কাপড়ের ব্যবহার করতে পারেন। খুব বেশি আসবাবের আয়োজন এই ঘরে না রাখাই ভালো।

শোবার ঘরে আসবাব থেকে অন্দরসাজ—সব জায়গায় থাকুক প্রশান্তির আমেজ

শোবার ঘর সাধারণত বিশ্রামের জন্যই ব্যবহার হয়ে থাকে। এখানে অন্দরসজ্জা থেকে আসবাব—সবকিছুতেই তাই থাকবে প্রশান্তির ছায়া। নতুন দম্পতির শোবার ঘরে সাধারণত খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল থাকে। তবে শোবার ঘরের আসবাব নির্বাচনের সময় শৌখিনতার পাশাপাশি আরামের বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিতে হবে। একটু নিচু নকশার খাট চলতি ধারায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আসবাবের পাশাপাশি ঘরে চাইলে গাছ ও ল্যাম্পশ্যাডের ব্যবস্থা করতে পারেন। শোবার ঘরে একটু শৌখিনতার আমেজ দিতে কোজি চেয়ার ব্যবহার করতে পারেন। রুমের সঙ্গে যদি বারান্দা থাকে, তবে তার সামনের আয়োজনে একটু শৌখিনতা করতেই পারেন। বারান্দার স্লাইডিং ডোরে আলাদা পর্দার ব্যবহার করুন। পর্দার রং হতে পারে সাদা অথবা ধূসর সাদা। ঘরের মেঝেতে বারান্দার সামনের অংশ ম্যাট বিছিয়ে নিতে পারেন। ম্যাটের ওপরে রাখতে পারেন ইজিচেয়ার।

শোবার ঘরের একদিকে থাকুক এমন শৌখিন আয়োজন

ডাইনিংরুমের জন্য শুরুতে শুধু একটি ডাইনিং সেট ও মিনি ক্যাবিনেটই যথেষ্ট। তবে বাজেট বেশি থাকলে ডিনার ওয়াগনও রাখতে পারেন।

তবে অনেকেরই ধারণা, বাজেটের মধ্যে আসবাব কিনতে হলে ব্র্যান্ডের আসবাব বাদ দিয়ে চিন্তা করতে হবে। এ ধারণা পোষণ করে অনেকেই তুলনামূলকভাবে কম মানসম্পন্ন আসবাব কিনে থাকেন। এতে বাজেটের মধ্যে আসবাব ঠিকই কিনতে পারেন, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আসবাবে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এখন হাতিলসহ অনেক ব্র্যান্ডই বাজেটবান্ধব আসবাব প্রস্তুত করছে। বাজেটের মধ্যে আসবাব কিনতে প্রথমত যা না কিনলেই নয়, সেসব রাখতে হবে পছন্দের তালিকায়। এ ছাড়া অনলাইন ও অফলাইনে আসবাবের দাম ও মানের পার্থক্য যাচাই করে আসবাব কিনতে হবে। কম মানসম্পন্ন আসবাব কিছুটা কম দামে পাওয়া গেলেও দুই–এক বছরের মধ্যেই তাতে সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা সাড়াতে দেখা যায় অনেক বেগ পোহাতে হয় এবং টাকাও নষ্ট হয় বিস্তর। তাই বাজেটের মধ্যে আসবাব কিনতে হলেও মানসম্পন্ন আসবাবকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

খাবার ঘরে খুব বেশি আসবাব না রাখাই ভালো

তা ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানেই এখন ইএমআই সুবিধায় আসবাব কেনা যায়। ইএমআইয়ের মেয়াদ ব্যাংকভেদে আলাদা হয়ে থাকে। আসবাব নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হাতিলে বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ব্যবহারকারীরা ৩, ৬, ৯ ও ১২ মাস মেয়াদি ইএমআই সুবিধায় বেশ সহজেই পছন্দের আসবাবটি কিনতে পারবেন।