শহুরে ব্যস্ত জীবনে পরিবারে সারা দিনে কারও সঙ্গে কারও দেখাই হয় না। সন্ধ্যা নামলে ঘরে ফেরা হয়। সবার হয়তো দেখা হয় রাতে খাবার টেবিলে। সেখানেই জমে ওঠে আড্ডা, কর্মব্যস্ত দিনের গল্প। ঘরটির আসবাব নির্বাচনে এ কারণে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন। পরিবার যদি নবদম্পতির হয়, খাবার টেবিল হতে পারে এক রকম নকশার। পরিবারে যদি বয়স্ক কেউ থাকেন, চেয়ার-টেবিল যেন আরামদায়ক হয়, খেয়াল রাখতে হবে সেদিকে। পাশাপাশি ঘরের আকারের সঙ্গে যেন মানিয়ে যায়, লক্ষ রাখতে হবে সেদিকেও।
ডেপথ ওয়ার্কসের প্রধান স্থপতি শামসুল আরেফিন জানান, সাধারণত বাড়িতে কাঠের খাবার টেবিল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গ্লাস টপ, মার্বেল টপ ও ধাতব উপকরণের তৈরি টপগুলোই পছন্দের শীর্ষে থাকে। খাবার টেবিল হতে পারে বৃত্তাকার, আয়তাকার বা বর্গাকৃতির, ঘরের আয়তন অনুযায়ী গঠন বেছে নিতে হবে। খাবার টেবিল কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিবারের সদস্যসংখ্যা। এটার ওপর নির্ভর করেই ২ থেকে ১২ সিটের খাবার টেবিল কেনেন সবাই। আরামদায়কভাবে খাওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির মাঝখানে অন্তত দুই ফুট জায়গা থাকা উচিত। বেশির ভাগ টেবিল সেই মাপ অনুযায়ীই তৈরি করা হয়। আদর্শ প্রস্থ হলো ৩৬ থেকে ৪০ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ২৯ থেকে ৩১ ইঞ্চি।
ঘর বড় হলে পছন্দমতো যেকোনো টেবিল ব্যবহার করা যায়। জায়গা কম, কিন্তু সদস্যসংখ্যা বেশি হলে, সরু টেবিলের দুই পাশে চেয়ারের বদলে বেঞ্চ রাখতে পারবেন। থাকতে পারে ছোট চেয়ার বা টুল। টেবিলটি লম্বা হলে অনেকে বসতে পারবেন একসঙ্গে। ছোট জায়গার জন্য ফোল্ডিং ডাইনিং টেবিল ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ধরনের খাবার টেবিলে সাধারণত চারজন বসার জায়গা থাকে। বড় আকার হলে ছয়জনও বসতে পারেন। অন্যদিকে ফোল্ডিং বা ভাঁজ করা টেবিল খুব ছোট পরিবারের জন্য উপযোগী। খাওয়া শেষে টেবিলটি ভাঁজ করে রাখা যায়।
নতুন সংসারে আলাদা করে খাবার টেবিল না কিনে ওয়ার্কস্টেশন-কাম-ডাইনিং টেবিলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেখানে কাজের সময় ল্যাপটপ খুলে কাজ করা যায়, আবার খাবার সময় খাওয়াও যায়। স্টোরেজসহ অথবা একাধিক কাজে ব্যবহার করা যায়, এমন টেবিল এখন অনেকেই পছন্দ করছেন। এখনকার বাসার ও খাবার ঘর বেশ ছোটই থাকে। মাল্টিপারপাস খাবার টেবিলে কেবিনেটও সংযোজন করা হচ্ছে। এতে টেবিলের নিচেই টিস্যু পেপার, চামচ, প্লেট রাখা যেতে পারে।
বাড়িতে যদি বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের যাওয়া-আসা বেশি থাকে, জাপানিদের ধারায় টেবিলের ব্যবস্থাও করতে পারেন। একটু বড় আকারের চারটি মাটির ফুলদানি অথবা কাঠের টুকরার ওপর বসিয়ে দিতে পারেন গ্লাস বা কাঠের তক্তা বা বোর্ড। তৈরি হয়ে যাবে আপনার বানানো খাবার টেবিল। এ ধরনের টেবিল একটু নিচু হবে। এর সঙ্গে প্রয়োজনমতো বড় বালিশ বা ফোম রাখতে পারেন বসার জন্য। চাইলে শতরঞ্জি বা বাঁশের ম্যাট দিয়েও সাজিয়ে নিতে পারেন টেবিলটি। তবে পরিবারে বয়স্ক কেউ থাকলে একটু উঁচু টেবিলই বেছে নেওয়া ভালো।