বিশ্বজুড়েই আসবাবের ট্রেন্ডে এখন কালো আর অ্যান্টিকের দাপট। এ ধরনের আসবাবের যত্ন–আত্তির ধরনও আলাদা।
কয়েক বছর আগেও সাদা আসবাবের সঙ্গে সাদা অন্দরসজ্জা ছিল জনপ্রিয়। চলতি বছর সে জায়গা দখল করে নিয়েছে কালো এবং অ্যান্টিক আসবাব। এমনকি বিশেষজ্ঞরাও বলছেন ‘ভিন্টেজ ইজ দ্য নিউ ব্ল্যাক’। এই ধারার আবার দুটি আলাদা ধরন রয়েছে, একটি পুরোনো নকশায় নতুনভাবে আসবাব তৈরি করা; আরেকটি পুরোনো আসবাব দিয়েই ঘর সাজানো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোনো আসবাব কিছুটা সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। আসবাবের জনপ্রিয় মার্কিন ব্র্যান্ড অ্যাসলে জানাচ্ছে, চলতি বছর ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে পুরোনো আসবাব।
বাসার ভেতর দরকার পড়ে নানা রকম আসবাব। বসার ঘর, শোবার ঘর, বারান্দা বা রান্নাঘরে ব্যবহার করতে হয় একেক ধরনের আসবাব। অনেকে বারান্দায় রকিং চেয়ার রাখেন। রকিং চেয়ার কালো হলে আশপাশের উপকরণগুলো যেন খুব বেশি উজ্জ্বল না হয়। চেয়ারের আশপাশে থাকতে পারে কিছু গাছের টব।
বসার ঘরে সাধারণত সোফা, টুল, ডিভান ব্যবহারের চল রয়েছে। এসব আসবাব কালো রঙের হলে কুশন, ঘরের পর্দা বা ফ্রেমের মতো জিনিসগুলোতে অফ হোয়াইট, সাদার মতো রং ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন অন্দরসজ্জাবিদ সাবিহা কুমু।
কাঠের ওপর কারুকার্য করা কালো আসবাব যেমন আছে, আবার বোর্ডের আসবাবেও মেলে কালো রং। যাঁরা কিছুটা মিনিমালিস্টিকভাবে ঘর সাজাতে চান, তাঁরা বোর্ডের আসবাবে ঘর সাজাতে পারেন। খাবার টেবিল, আলমারি, শু র৵াকের মতো আসবাবের নকশা হতে পারে ভারী বা হালকা।
টেবিল, চেয়ার, শেলফ, আলমারি, খাট বা ছবির ফ্রেমে গাঢ় রঙের আভিজাত্যই আলাদা।
অনেকে মনে করেন, কাঠ বা যেকোনো উপকরণে তৈরি এ ধরনের আসবাব নিয়মিত শুকনা কাপড় দিয়ে মুছলেই যথেষ্ট। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হবে না। কারণ, এমন রঙের ওপর ধুলা, তেল-ময়লা চেপে বসে। তাই সেটা সরাতে খুব ভালো মানের ডিপ ক্লিনিং প্রয়োজন।
কোনোভাবেই ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ধুলা জমতে দেওয়া যাবে না। শুকনা কাপড়ে দিনে অন্তত দুবার মুছে ফেলা দরকার। সপ্তাহে এক দিন খুব হালকা কোনো লিকুইড ফার্নিচার ডিটারজেন্ট দিয়ে মুছে ফেলতে হবে অথবা সাধারণ ডিটারজেন্টের সঙ্গে হালকা গরম পানির মিশ্রণ তৈরি করে একটা পাতলা ও পরিষ্কার তোয়ালে সেই মিশ্রণে ডুবিয়ে ভালো করে নিংড়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে, তারপর তা দিয়ে আলতো হাতে আসবাব ঘষে ঘষে মুছে নিতে হবে। মনে রাখবেন, কাপড়টি আর্দ্র হলেই হবে। এরপর অন্য একটা শুকনা কাপড় দিয়ে বাকি ভিজে ভাব মুছে ফেলতে হবে।
অনেকে ঘরের আভিজাত্য বাড়াতে শুধু অ্যান্টিক রঙের আসবাব কিনেই ক্ষান্ত হন না। সরাসরি অ্যান্টিক আসবাবই কিনে ফেলেন। এ ধরনের আসবাবের যত্ন একেবারেই আলাদা। কারণ, এর পালিশ আলাদা। আর পালিশ একবার নষ্ট হয়ে গেলে দেখতে বাজে লাগে। তাই এক মগ গরম পানিতে গাঢ় রং হয় এমন চা-পাতা বা টি–ব্যাগ দিয়ে ভালোভাবে ফোটাতে হবে। চা-পাতা ছেঁকে নিয়ে চায়ের পানির মধ্যে নরম, পরিষ্কার একটি কাপড় ডুবিয়ে ভালোভাবে নিংড়ে নিতে হবে। এরপর সেই কাপড় দিয়ে মুছতে হবে অ্যান্টিক আসবাব। নিয়মিত এভাবে পরিষ্কার করলে অ্যান্টিক আসবাবের রং ভালো থাকবে।
আসবাবে পানি বা পানীয়র দাগ খুব সাধারণ বিষয়। কিন্তু সঠিকভাবে এই দাগ পরিষ্কার না করলে স্থায়ী হয়ে যায়। তাই দাগ হালকা থাকতেই তুলে ফেলতে হবে। না হলে পলিশ ছাড়া উপায় নেই। পানীয়র দাগের জায়গাটায় টুথপেস্ট লাগাতে হবে ভালোভাবে। মনে রাখতে হবে, জেল হলে চলবে না, পেস্টই চাই। এরপর একটা নরম কাপড় দিয়ে ঘষে ঘষে দাগটা তুলে নিতে হবে। টুথপেস্টটা মোছার জন্য পরে আবার একটা আর্দ্র রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে।
গাঢ় রঙের আসবাব সরাসরি রোদে রাখা যাবে না। এতে আসবাবের রং নষ্ট হতে পারে, কাঠে ফাটল ধরতে পারে, চলটা উঠতে পারে। তাই আগুনের তাপ ও রোদের ঝাঁজ—দুইয়ের প্রকোপ থেকেই আসবাব বাঁচাতে হবে।
সপ্তাহে এক দিন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, বাকি দিনগুলোতে কাপড়ের সাহায্যে পরিষ্কার করতে হবে।আসবাবে দাগ-ছোপ লাগলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে দ্রুত মুছে নিতে হবে।
বর্ষায় গাঢ় রঙের ফার্নিচারে ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট মেলামাইন পালিশ করানো ভালো। এতে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াতেও আসবাবগুলো ভালো থাকবে।
সব সময় শুকনা কাপড়ের সাহায্যেই পরিষ্কার করা উচিত। ভেজা কাপড় একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়। ভেজা কাপড় গাঢ় রঙের ফার্নিচারের রং ও পালিশ—দুই-ই নষ্ট করে।
যদি আসবাবে মোমের দাগ পড়ে, তবে ঘষে না তুলে গরম ছুরি বা স্পিরিট দিয়ে তুলতে হবে।
গাঢ় রঙের ফার্নিচার বছরে একবার পালিশ করা উচিত।
আসবাবের জয়েন্টের জায়গাগুলো যাতে জং পড়ে নষ্ট না হয়, তাই এর ওপর রেড অক্সাইডের প্রলেপ দিয়ে দিতে হবে।