নিকুঞ্জ–২ এলাকাটা এখনো বেশ ছিমছাম। লম্বা সড়কের দুই পাশে সারি সারি বাড়ি। চার, পাঁচ, ছয়তলা। এসব ভবনেরই মাঝখানে একটি বাড়ি দোতলা। নিচতলাটা দেখে কেউ ধারণাও করতে পারবেন না দোতলাটা কেমন? অবাক হতে হবে। একপাশের চিকন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যেমন হয়েছিলেন এই প্রতিবেদক
লতাপাতায় জড়ানো ধূসর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে এসে গেট ধরলেই বুঝবেন এটা ভিন্ন রকম। হালকা সবুজাভ কাঠের সঙ্গে খোপ খোপ করে কাচের নকশা করা দরজা। দরজার ওপরে ফুলের গোলাকার একটি বৃত্ত, তার ঠিক ওপরে একটি পাখি, সঙ্গে ওয়েলকাম লেখা একটা ঘণ্টি। হাতলে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই সবখানে হালকা নীল আর সাদার একটা আবহ চোখে পড়বে। শুরুতেই একটা কাঠের শেলফ, যেখানে কিছু ক্রোকারিজ আর শোপিস। শেলফের মাথার দিকে দুটি ছোট্ট ফুলেল নকশার ব্রিফকেস আর একটি ফুলের পাত্র। জায়গাটুকু উষ্ণ আলোয় ঘেরা। সেখান থেকে ডানে তাকালেই পুরো রেস্তোরাঁটা একনজরে দেখে নেওয়া যায়। খুব বেশি বড় না, সব মিলিয়ে ৭০০ বর্গফুটের একটু বেশি হবে। তবে প্রতিটি কোনা ঘুরে ঘুরে দেখার জন্য আপনার হাতে থাকতে হবে যথেষ্ট সময়। ঠিক এ কারণেই রেস্তোরাঁটা আর দশটা থেকে আলাদা।
এখানে বসলে আপনার মনে হবে ইউরোপের কোনো বাড়িতে গড়ে ওঠা ক্যাফেতে বসে আছেন। নেপথ্যে বেজে চলেছে পিয়ানোর সুর। রেস্তোরাঁটির অংশীদার মোট ছয়জন। তারই একজন রূপসজ্জাকর ও অন্দরসজ্জাবিদ বাপন রহমান। মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবেই তাঁর পরিচিতি বেশি। তবে প্রায় ২৮ বছর ধরে অন্দরসজ্জা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘ইডেন অন আর্থ বাই বাপন রহমান’ থেকেই এই রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জার কাজটি করেছেন। কোন ভাবনা থেকে এমন নকশা, জানতে চাইলে বাপন রহমান বলেন, ‘এটা পুরোই ফ্রেঞ্চ–ব্রিটিশ কলোনিয়াল থিমে সাজানো। শুরুতে আমরা যখন জায়গাটি ভাড়া নিলাম, তখন জানালাগুলো দেখেই খুশি হয়ে যাই। পুরো ফ্রেঞ্চ স্টাইল। অন্দরসজ্জায় ইউরোপের ভাবনাগুলোই এখানকার উপযোগী করে ব্যবহারের চেষ্টা করি। এখানেও সেই ভাবনা কাজ করেছে।’
রেস্তোরাঁর অন্দরে জানালার ভেতরের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে সাদা লেইস, পুরো জায়গায় রঙের ক্ষেত্রেও হালকা ও প্যাস্টেল শেডগুলো এসেছে ঘুরেফিরে। যে ধারণাটিকে বলা হয়—শ্যাবি চিক।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে বাইরের দিকে লাগানো ঘাসগুলোতে চোখ যাবে। বাতাসে দোল খেতে থাকা সবুজ ঘাসের ওপর এসে বসছে চড়ুই পাখি। দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ছবির ফ্রেম বসানো হয়েছে। রাজকীয় নকশার নানা রকম সিরামিকের থালাবাটির ব্যবহার করা হয়েছে দেয়ালে দেয়ালে। বসার জন্য সিঙ্গেল সোফা ছাড়াও দেওয়া আছে ডাবল সোফা। কোনোটার মাথার ওপরে লম্বা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে লাইট। প্রতিটি টেবিলে ফুলসহ ফুলদানি। রেস্তোরাঁর ক্যাশ কাউন্টার থেকে ওয়াশরুম, সবখানে শৈল্পিক ভাব।
দেয়াল তুলে খাবার রান্নার জায়গাটুকু আলাদা করা আছে। খাবার সরবরাহের জন্য একটা অংশে কাচের স্লাইড ডোর দেওয়া। তবে সেখানেও লেইসের ব্যবহার থাকায় জানালা ছাড়া সেটিকে আলাদা কিছু ভাবা যায় না। একপাশে একটা ফায়ারপ্লেসের (শীতপ্রধান দেশে যেখানে আগুন জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখা হয়) নকশা করা হয়েছে। সেখানে একটি ঝুড়ির মধ্যে ডালপালার আড়ালে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে উষ্ণ আলো। আর ওই আলোতেই জায়গাটায় একটা ফায়ারপ্লেসের আবহ তৈরি হয়েছে। এটার ঠিক ওপরেই একটা অ্যান্টিক টেবিলঘড়ি, ফুলদানি আর টেবিলল্যাম্প রাখা। পেছনের দেয়াল রাজপরিবারের নারীদের ছবিসংবলিত সিরামিক প্লেটে সাজানো।
রেস্তোরাঁর ভেতরে থাকা খুঁটিগুলোকেও ফলস নকশায় বদলে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে ভিন্ন এক পরিবেশ।
২৫ থেকে ৩০ জন বসে খেতে পারবেন এই রেস্তোরাঁয়। মেনুতেও ইউরোপিয়ান ধাঁচের আধিক্য। পাস্তা, পিৎজা, স্যুপ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ নানা রকম মুখরোচক খাবারের উপকরণে সাজানো হেঁশেল। ফরমাশ পেয়ে যা তৈরি শুরু করেন শেফ।
দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই রেস্তোরাঁ। একবার ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন। সময়টা মন্দ কাটবে না।