কেন বিছানার চাদরে সাদা রং বেছে নেবেন

বিছানার জন্য সুতি চাদরই সবচেয়ে আরামদায়ক।
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

ভালো ঘুমের বেশ কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে। অন্যতম হলো প্রশান্তিদায়ক পরিবেশ। আলো বা শব্দে ঘুমের ব্যাঘাত তো ঘটেই, বিছানা-বালিশের মতো অনুষঙ্গও ভালো ঘুমে ভূমিকা রাখে। ভালো ঘুমের জন্য কেমন চাদর প্রয়োজন, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

বিছানার চাদর হতে হবে মসৃণ ও নরম। কেনার সময়ই খেয়াল করুন, চাদরে যাতে কোনো রকম খসখসে বা অমসৃণ ভাব না থাকে। সুতি চাদরই সবচেয়ে আরামদায়ক। বেছে নিন সাদাসিধে বুননের কাপড়। টুইলের চাদরও নেওয়া যেতে পারে, যদি তা নরম হয়। রংটাও গুরুত্বপূর্ণ। বয়স ও রুচি অনুযায়ী চাদরের রং ও নকশা বেছে নেওয়া প্রয়োজন। এমনটাই জানালেন ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আক্তার।

প্রশান্তি ও আরামের দিক বিবেচনায় সাদা রংই বিছানার চাদরের জন্য সবচেয়ে ভালো।

হালকা রঙেই প্রশান্তি

স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক বলছিলেন মনের ওপর রঙের নানামুখী প্রভাবের কথা। প্রশান্তি ও আরামের দিক বিবেচনায় সাদা রংই বিছানার চাদরের জন্য সবচেয়ে ভালো। পাঁচতারা হোটেলগুলোতেও যেমনটা দেখা যায়। অন্য হালকা রঙের চাদরও ব্যবহার করতে পারেন। বেছে নিতে পারেন পছন্দের কোনো রঙের হালকা শেড। হালকা রঙের চাদরে অন্য রঙের ছোটখাটো নকশায় সৃষ্টি হতে পারে মিশ্র অনুভূতি। সেটিও ঘুমের জন্য ভালো। ধূসর রঙেও কেউ কেউ ভালো অনুভব করেন, কারও কারও মধ্যে আবার একটু বিষণ্নতার জন্ম দেয় এই রং। কালোতে আভিজাত্যের প্রকাশ ঘটলেও এই রঙের চাদরে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। খুব উজ্জ্বল রঙের চাদরও ঘুমের জন্য সহায়ক নয় বলেই জানালেন তিনি।

বিছানার চাদরে যদি থাকে সাদা কিংবা হালকা রং, তাহলে ঘর বড় দেখাবে।

প্রকৃতির রঙে মিশে যাওয়া

মাথার ওপরের নীল আকাশকে রোজই তো দেখি আমরা। তবে নৈমিত্তিক এই ‘জিনিস’টিও অনেকের খেয়াল করে দেখার অবসর হয় না। নীল রং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক, এমনটাই বলছিলেন শারমিন হক। আরও জানালেন, সবুজ রং আমাদের দেহকে শিথিল হতে সহায়তা করে। বিছানার চাদরের জন্য বাছাই করা যেতে পারে প্রকৃতির এই সবুজ বা নীল শেড।

ব্যক্তিভেদে রং ও নকশা

শিশুদের বিছানার চাদর বাছাই করার ক্ষেত্রে অবশ্য তাদের পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়াই ভালো বলে জানালেন মাহমুদা আক্তার। চাদরে থাকতে পারে শিশুদের চাহিদামাফিক নকশা। আবার নারী ও পুরুষের পছন্দও হতে পারে আলাদা। মিষ্টি গোলাপি রঙের চাদরে ফুলেল মোটিফের নকশা হয়তো দেখতে সুন্দর, কিন্তু একজন পুরুষের তা পছন্দ না-ও হতে পারে। কোন ঘরের বিছানার চাদর কেনা হচ্ছে, চাদরটি কে ব্যবহার করবেন, এসব বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখুন চাদর কেনার সময়। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য চেক কিংবা ডোরাকাটা নকশার চাদর বেছে নেওয়া যায়।

যে রঙের চাদরই ব্যবহার করা হোক না কেন, তা অবশ্যই নিয়মিত পরিষ্কার করে ফেলুন।

হালকা রঙের সুবিধাও বেশ

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হালকা রঙের বিছানার চাদর বেছে নিলে আরও কিছু সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। শহুরে অন্দরের গড়পড়তা পরিধি এখন অনেক ছোট হয়ে এসেছে। এই ছোট্ট অন্দরের একটা বড় অংশজুড়েই থাকে বিছানা। বিছানার চাদরে যদি থাকে সাদা কিংবা হালকা রং, তাহলে ঘরকে বড় দেখাবে। তাতে মনেও আসবে স্বস্তি। বিছানার চাদর ময়লা হয়ে গেলে হালকা রঙের চাদরে ময়লা ভাবটা বোঝা যায় বেশি। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, এটি হালকা রঙের চাদরের খারাপ দিক। কিন্তু গাঢ় রঙের চাদরের ময়লা আপনার চোখে না পড়লেও সময়ের সঙ্গে সেখানে কিন্তু ময়লা ঠিকই জমতে থাকে, যা আপনার জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই হালকা রঙের চাদরই বেছে নিন। আর যে রঙের চাদরই ব্যবহার করা হোক না কেন, তা অবশ্যই নিয়মিত পরিষ্কার করে ফেলুন। দিনের বেলা চাইলে একটা বাড়তি চাদর দিয়ে মূল চাদরটিকে ঢেকে দিতে পারেন, যাকে বলা হয় ‘বেড কভার’। তাহলে মূল চাদরটি সহজে ময়লা হবে না। বেড কভার যেকোনো উপকরণেরই হতে পারে; এটি নরম সুতি কাপড়ে তৈরি না হলেও ক্ষতি নেই। এই অভ্যাস গড়ে তুললে আপনার বিছানার চাদর সত্যিকার অর্থেই কম ময়লা হবে।