ফ্রিজস্কেপিং, ফ্রিজের অন্দরেও শোভা বাড়াচ্ছে বিয়ের ছবি, পুতুল, পেইন্টিং

কিছুদিন ধরেই টিকটকে শুরু হয়েছে নতুন এই ট্রেন্ড। যেখানে সবাই ঘরের পাশাপাশি নিজের ফ্রিজের অন্দরও সাজিয়ে রাখছেন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ফ্রিজের বাইরেটা সাজিয়ে রাখা, সে নাহয় বুঝলাম; কিন্তু ভেতরেও সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা, এ আবার কেমন ধারা? কিছুদিন ধরেই টিকটকে শুরু হয়েছে নতুন এই ট্রেন্ড। যেখানে সবাই ঘরের পাশাপাশি নিজের ফ্রিজের অন্দরও সাজিয়ে রাখছেন। নতুন এই নন্দনতত্ত্বকে ডাকা হচ্ছে ‘ফ্রিজস্কেপিং’।

‘ফ্রিজস্কেপিং’কী? হঠাৎ করে কেনই–বা ট্রেন্ড?

ঘরের বাকি সব যন্ত্রের তুলনায় ফ্রিজ একটু আলাদা। ফ্রিজের বাইরের সৌন্দর্য থেকে ভেতরের কাজই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবু ঘরের একটি বড় অংশজুড়ে থাকা এই যন্ত্রকে সাজাতে বিভিন্ন উপায় বেছে নেন। কেউ ব্যবহার করেন ম্যাগনেট, কেউ আবার স্টিকার। এত দিন পর্যন্ত ফ্রিজ সাজানোর ব্যাপারটা বাইরেই আটকে ছিল। কিন্তু ‘ফ্রিজস্কেপিং’ বিষয়টি ফ্রিজের ভেতরকে সুন্দর করে সাজানোর সঙ্গে সম্পর্কিত।

ফ্রিজের ভেতর শোভা পাচ্ছে দম্পতির বিয়ের ছবি, তাজা ফুল, মাটির তৈরি ছোট খেলনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের শোপিস

টিকটকে ‘ফ্রিজস্কেপিং’ শব্দের উৎপত্তি। বেশ কয়েক দিন ধরে ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকেও চলছে ফ্রিজকে সুন্দর করে সাজানোর ট্রেন্ড। ফ্রিজস্কেপিং এখন শুধু আর সুন্দর কনটেইনারে আটকে নেই; বরং সুন্দর কনটেইনার ফ্রিজস্কেপিংয়ের ছোট্ট একটি অংশমাত্র। ফ্রিজের অন্দরসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে বেতের ঝুড়ি, নকশা করা গ্লাস-প্লেট। বাদ যাচ্ছে না ছোট ছোট ভাস্কর্য বা পেইন্টিংও। নিত্যদিনের দরকারী খাদ্যসামগ্রী, যেমন দুধ, ডিম, শাকসবজি, ফলমূল সংরক্ষণের জন্য বেছে নিচ্ছেন নকশা করা কলস, ট্রে। ফ্রিজের ভেতরে যে শুধু খাবার সংরক্ষণ করার জন্যই তৈজসপত্র রাখা হচ্ছে, তা নয়। ফ্রিজের ভেতর শোভা পাচ্ছে দম্পতির বিয়ের ছবি, তাজা ফুল, মাটির তৈরি ছোট খেলনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের শোপিস।

ধনিয়াপাতা রাখা হয়েছে ফুলের টবে

ফ্রিজের অন্দরসজ্জাকে ইন্টারনেট ট্রেন্ডে পরিণত করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের ইনফ্লুয়েন্সাররা। তেমনই একজন লিনজি জুডিস। ঘর সাজানো জুডিসের শখ। ঘরের প্রতিটি কোনা সুন্দর করে সাজিয়েছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। বাদ যায়নি ফ্রিজের ভেতরও। ‘সাধারণ কোনো কিছুকে সুন্দর করে সাজাতে আমার অনেক ভালো লাগে। সেখান থেকেই এখন এটা ঢুকে পড়েছে ফ্রিজের ভেতরে,’ সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন লিনজি। লিনজির প্রোফাইল ঘুরলে দেখা মিলবে ঘর সাজানোর শত শত ভিডিও। লিনজির শুরু করা ‘ফ্রিজস্কেপিং’ এখন টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের ট্রেন্ডিং ইস্যু। ইন্টরেনেটে সার্চ দিলেই চলে আসবে ফ্রিজের অন্দর সাজানোর শত ভিডিও।

ফ্রিজে ফুলদানি আগে দেখেছেন?

‘ফ্রিজস্কেপিং’ কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো

ফ্রিজ ব্যবহার করা হয় খাবার টাটকা রাখার জন্য। সে জায়গায় অহেতুক জীবাণুর বসবাস নিশ্চয়ই কেউ চাইবে না। সে কারণেই খাবারের পাশাপাশি অন্য যেকোনো কিছু রাখার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তেমনটা ফ্রিজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদিও লিনজি দাবি করেছেন, ‘ফ্রিজস্কেপিং’য়ের কারণে আগের থেকে বেশি ‘হেলদি’ অনুভব করছেন। তবু জীবাণু ছড়ানোর ভয় থেকেই যায়।

বিশেষ করে ফুলদানি এবং ধাতব তৈজসপত্র ব্যবহার না করাই ভালো। ফুলে থাকা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া খাবারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার ধাতব তৈজসপত্র থেকে সিসার দানা ছড়িয়ে পড়তে পারে খাবারে। যা থেকে হতে পারে ‘ফুড পয়জনিং’। তবে সত্যিকারের ফুল না রেখে কাচের বা অন্য কোনো ফুল অথবা ফুলের মিনিয়েচার আপনি রাখতেই পারেন। ফ্রিজের ভেতরটা সাজানোর জন্য নানা ধরনের মিনিয়েচার শোপিস একদম জুতসই।

‘ফ্রিজস্কেপিং’—কে অনেকেই মনে করেন অঝথা ঝক্কি

‘ফ্রিজস্কেপিং’ করতে চাইলে

ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে চাইলে আপনিও ‘ফ্রিজস্কেপিং’ করতে পারেন। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা যেমন মাথায় রাখতে হবে, তেমনই মাথায় রাখতে হবে সময়ের ব্যাপারটা। ঘরের আসবাবপত্র একবার সাজিয়ে রাখলে তা নিয়ে এক থেকে দেড় মাস তেমন চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ফ্রিজের ভেতরের তৈজসপত্র নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে প্রতিদিন। নিয়মিত খাবার বের করা, খাবার রাখা, সেই সঙ্গে সবকিছু সামলে রাখা; শখের প্রতি পুরোপুরি সময় দিতে না পারলে ‘ফ্রিজস্কেপিং’ না করাই ভালো।


তথ্যসূত্র: সিএনএন, গুড হাউসকিপিং