‘নিরপেক্ষ’ রংগুলো যে কারণে অন্দরে বেছে নেওয়া হয়

অন্দরের এই পুরো ‘সাজ’-এর পটভূমিতেই থাকছে হালকা রং।
ছবি : নকশা

অন্দরের দেয়াল মনের মতো করে রাঙাতে চান? প্রথমেই মাথায় রাখুন, ঘরটা কোন কাজে ব্যবহার করা হবে। যেমন পড়ালেখা বা কাজের ঘরের দেয়ালের জন্য সব ধরনের রং উপযোগী নয়। অন্দরসজ্জায় নানা অনুষঙ্গের বিন্যাসও বিবেচনায় রাখতে হবে। ঘর রং করানোর আগে অন্দরসজ্জার আধুনিক ধারাগুলো সম্পর্কেও জেনে নিন।

যেটুকু না হলেই নয়, এই সময়ের জীবনধারায় সেটুকুই জায়গা পাচ্ছে। অন্দরসজ্জাও লেগেছে মিনিমালিজমের ছোঁয়া। জাঁকজমকের বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে অল্প কিছু হালকা আসবাব আর অল্পস্বল্প অনুষঙ্গেই সাজানো হচ্ছে আধুনিক অন্দর। অন্দরের এই পুরো ‘সাজ’-এর পটভূমিতেই থাকছে হালকা রং। তাতেই চোখের আরাম, মনের শান্তি। আধুনিক অন্দরসজ্জা সম্পর্কে এমনটাই জানালেন আরএমএ আর্কিটেক্টসের প্রধান স্থপতি রাফিয়া মারিয়াম আহমেদ।

ঘর রং করানোর আগে অন্দরসজ্জার আধুনিক ধারাগুলো সম্পর্কেও জেনে নিন।

প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক রং

অন্দরের দেয়ালের জন্য এখন ‘নিরপেক্ষ’ রংগুলো বেছে নেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক রংকে বদলে ভিন্ন রূপ দেওয়ার চল কমে এসেছে এখন। চাঁপা সাদা, হালকা মেটে রং, হালকা ধূসর কিংবা ‘বেজ’ রং; অর্থাৎ হালকা হলদে ও বাদামি-জাতীয় রং এই সময়ের অন্দরের দেয়ালে জনপ্রিয়। দেয়ালের ইট বা কংক্রিটের স্বাভাবিক রংও রেখে দিতে দেখা যাচ্ছে এখন। এমন হালকা রঙের দেয়ালে দারুণভাবে ফুটে ওঠে অন্দরসজ্জার অনুষঙ্গের সৌন্দর্য ও রং।

এক রঙেও একঘেয়ে নয়

আগে বাড়ির একেকটি ঘরের জন্য আলাদা আলাদা রং বেছে নেওয়ার চল দেখা যেত। এখন আর খুব একটা দেখা যায় না সেই ধারা। বরং বাড়ির সব ঘরেই মোটামুটি একই ধরনের রং ব্যবহার করা হয়। বসার ঘর বা খাবার ঘরে যেমন, শোবার ঘর বা পারিবারিক ঘরের দেয়ালেও থাকছে তেমনই রং। পর্দা, বিছানার চাদর ও অন্দরসজ্জার অন্যান্য উপকরণের ক্ষেত্রেও বেছে নেওয়া হচ্ছে হালকা ধাঁচের রং। তাতে কী অন্দরটা একঘেয়ে হয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে? একদমই নয়। বৈচিত্র্য থাকছে অন্দরের নকশায়, অন্দরসজ্জায়। ভিন্নধারার নকশা জনপ্রিয় হচ্ছে। সাদামাটা, হালকা রঙের দেয়ালকে আকর্ষণীয় করে তুলতে দেয়ালে রাখতে পারেন খানিকটা কারুকাজ করা ধাতব অনুষঙ্গ, কিংবা টেরাকোটার তৈরি কোনো উপকরণ। দেয়ালে সাজাতে পারেন বিশেষ কোনো প্লেট। কিংবা কোনো দেয়ালে কেবল চমৎকার একটি পেইন্টিংও রাখতে পারেন। এ ধরনের একটিমাত্র অনুষঙ্গেই আপনার ঘরের দেয়াল হয়ে উঠতে পারে অনন্য।

দেয়াল রাঙানোর রং।

পড়ার ঘর, কাজের ঘর

পড়ালেখা বা কাজের জায়গাতেও দেয়ালে থাকছে হালকা রং। এমন রং কাজের জন্যও উপযুক্ত। এসব জায়গার জন্য উজ্জ্বল আলো বেছে নেওয়ার প্রয়োজন। দেয়ালে হালকা রং থাকলে উজ্জ্বল আলোর প্রতিফলনে চোখে অস্বস্তিও হয় না।

শিশুর ঘরে যেমন রং

শিশুর ঘরের দেয়ালের রং হালকা হলেও আসবাব এবং অন্দরসজ্জার অন্যান্য অনুষঙ্গ হতে পারে রঙিন। তবে সে ক্ষেত্রে রঙিন কোনো হালকা শেড বেছে নেওয়া যেতে পারে। এই যেমন, দেয়ালটা সাদা হলে আসবাব বা অন্যান্য অনুষঙ্গ হতে পারে হালকা নীল বা হালকা সবুজ। আবার চাইলে দেয়ালেও ব্যবহার করা যায় হালকা নীল বা হালকা সবুজ রং, সে ক্ষেত্রে আসবাব হতে পারে সাদা। অরণ্য কিংবা সৌরজগতের মতো ‘থিম’ও ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুর ঘরের দেয়ালে।

আলোক বিন্যাসে, প্রাণের পরশে রঙিন

অন্দরে যে কেবল সাদা আলোই ব্যবহার করতে হবে, তা কিন্তু নয়। উষ্ণ ধাঁচের আলোও বেছে নিতে পারেন। বসার ঘরের ল্যাম্পশেড কিংবা খাবার ঘরের ঝাড়বাতি দিয়েও অন্দরে আসতে পারে ভিন্নতার ছাপ। ঘরের যেকোনো জায়গায় রাখতে পারেন অন্দরের উপযোগী গাছপালা। এভাবে অন্দরে যোগ হতে পারে প্রকৃতির অকৃত্রিম রং। প্রকৃতির পরশ পেতে দেয়ালের রংটাই যে সবুজ হতে হবে, তা কিন্তু নয়।