বাংলা স্থাপত্য সংস্কৃতির চমৎকার এক উদাহরণ বড় সরদার বাড়ি। যুগে যুগে নানা চেহারা পেয়েছে এই বাড়ি। এভাবে আস্তে আস্তে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল তার আদি রূপ। ২০১২ সালে বেসরকারি অর্থায়নে বাড়িটি মূল চেহারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজটির দায়িত্ব পান সংরক্ষণ স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ। এখানে সেই গল্পই শোনালেন এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের এই অধ্যাপক
সোনারগাঁ ছিল মধ্যযুগীয় বাংলার (১২৯৬-১৬০৮) প্রশাসনিক, সামুদ্রিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র। ১৩৩৮ সালে এই শহরকে স্বাধীন বাংলার প্রথম রাজধানী করেন সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ। এ কারণে সোনারগাঁর আশপাশে গড়ে ওঠে আবাসিক, প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক নানা স্থাপনা। মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা এ সময়ই সোনারগাঁ এসে দেখেছিলেন নগরবাসীর অর্থনৈতিক প্রাচুর্য। নদীপাড়ের বসতিটিকে তাঁর মনে হয়েছিল মিসরের নীল নদপারের সভ্যতার সমতুল্য। ১৬০৮ সালে মোগল সাম্রাজ্যের পূর্ব সুবাহর রাজধানী সোনারগাঁ থেকে জাহাঙ্গীরনগরে (বর্তমান ঢাকা) সরিয়ে নেওয়া হয়। ফলে কিছু সময়ের জন্য (১৬০৮–১৭৫৭) এই এলাকার জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় (১৭৫৭–১৯৪৭) হিন্দু জমিদার ও বণিকদের কল্যাণে আবারও শুরু হয় অর্থনৈতিক বিকাশ। দেশভাগের পর সোনারগাঁর বিত্তশালী হিন্দু পরিবার–পরিজন ভারতে চলে গেলে পুরো সোনারগাঁই হয়ে পড়ে জনমানবশূন্য প্রাচুর্যহীন একটি অঞ্চল। প্রাচীন এই রাজধানীর অধিকাংশ সাংস্কৃতিক নিদর্শন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে পড়ে নষ্ট হতে থাকে। তেমনই একটি আবাসিক নিদর্শন বড় সরদার বাড়ি।
বিশাল এই স্থাপনাকে আমরা সবাই ঔপনিবেশিক আমলের বলে জানতাম। কিন্তু পরে গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে আদতে পূর্ববর্তী একটি মুসলিম বসতির ওপর নির্মিত হয়েছিল এই বাড়ি। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহণ করার আগপর্যন্ত ধ্বংসপ্রায় এই স্থাপনা প্রায় অব্যবহৃতই পড়ে ছিল। আশির দশকের গোড়ার দিকে এই সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করে সংস্কার করে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ। এটিকে জাতীয় লোকশিল্প ও কারুশিল্প জাদুঘরে পরিণত করে।
২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান শিল্পপতি কিহাক সুং করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বৈজ্ঞানিকভাবে ভবনটিকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেন। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য ছিল, বড় সরদার বাড়িকে যতটা সম্ভব তার আসল সৌন্দর্য ও জৌলুশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। আরেকটি ভাবনাও কাজ করে। সংস্কার প্রকল্পটি ঠিকঠাকমতো শেষ করা গেলে এটি বাংলাদেশের জন্য সংরক্ষণের একটি আদর্শ মডেল হবে। দেশীয় শিল্পপতি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান করপোরেট সোশ৵াল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর) অর্থ ব্যবহার করে দেশের অন্যান্য ধ্বংসপ্রায় ঐতিহ্য সংরক্ষণে উৎসাহিত হবে।
২০১৬ সালে শেষ হয় এই বাড়ির সংরক্ষণকাজ। চলতি বছর এ সংরক্ষণ প্রকল্পকে ‘আইএবি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ পুরস্কারে ভূষিত করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট।
পুরো বড় সরদার বাড়ি কমপ্লেক্সটিকে দুটি উঠানের চারদিকে নানা ভবনে বিন্যাস করে নকশা করা হয়েছিল। এই কমপ্লেক্সের মোট মেঝের পরিমাণ ২৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট, নিচতলায় ৪৭টি কক্ষ এবং প্রথম তলায় ৩৮টি কক্ষজুড়ে যা ছড়িয়ে আছে। পুরো কমপ্লেক্সের পূর্ব ও পশ্চিমে রয়েছে ইটের দেয়াল দিয়ে পাড়বাঁধানো পুকুর। ভবন থেকে ব্যবহার করার জন্য প্রতিটি পুকুরে আছে দুটি রাজকীয় ঘাটলা।
প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ভবনটির সম্মুখভাগে যে শিলালিপি আছে, তাতে বলা হয়েছে, এই ঐতিহাসিক ভবন কমপ্লেক্সের সামনের অংশটি ১৯০২ সালে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু সংরক্ষণপূর্বক গবেষণা ও বিশ্লেষণের পর দেখা গেছে, পুরো কমপ্লেক্স বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মিত হয়েছে। সংরক্ষণ চলাকালে ভবনগুলোর দেয়াল ও ছাদের গায়ের নতুন সিমেন্ট প্লাস্টার অপসারণ করার পর বিভিন্ন ধরনের নির্মাণশৈলীর সন্ধান পাওয়া যায়। আর এই শৈলী ছয়টি নির্মাণ পর্যায় শনাক্তকরণে সাহায্য করে। আবার এই কমপ্লেক্সের ভেতর লুকিয়ে ছিল ৫০০ বছরের পুরোনো একটি স্থাপনা। ফলে বারো ভূঁইয়া থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিক যুগ পর্যন্ত সময়ের নানা স্থাপত্যের প্রমাণ এই কমপ্লেক্সে আছে। ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের উল্লেখযোগ্য সৃজনশীল স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন এই এক জায়গাতেই পাওয়া যাবে।
বড় সরদার বাড়ির দুই উঠানের মাঝখানে লাল রঙের একটা ছোট্ট স্থাপনা আছে, যার স্কেল, অনুপাত, স্থাপত্যিক উপাদান ও নির্মাণশৈলী প্রারম্ভিক মোগল বা বারো ভূঁইয়া স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সোনারগাঁর দক্ষিণ অঞ্চলে ১৬ শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত মুসা খাঁ গেট নামে পরিচিত ভবনটি এই ভবনের অবিকল প্রতিরূপ। মাত্র দুই সারি কলাম নিয়ে গঠিত এই দোতলা ছোট ভবনটিকে সবচেয়ে আদি পর্যায় বা স্থাপনা বলা যায়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে পড়ে পেছনের উঠানের তিন পাশের তিনটি দ্বিতল ভবন। এগুলো মোগল যুগের প্রথম দিকে নির্মিত হয়েছিল। এসব ভবনের সমতল ছাদ নির্মাণের কৌশলটি মোগল আমলের আরকুয়েট নির্মাণপদ্ধতির কথা মনে করিয়ে দেয়। এসব দোতলা ভবনের প্রতিটির ভেতরেই একটি করে এক ধাপবিশিষ্ট সিঁড়ি আছে। অভ্যন্তরীণ কক্ষগুলোর আকার ও বিন্যাস বলে ব্লক তিনটি আবাসিক প্রয়োজনে তৈরি করা হয়নি। হয়তো তাঁত বা অন্য কোনো ধরনের কারখানা হিসেবে এগুলো ব্যবহৃত হতো।
কমপ্লেক্সের দক্ষিণ দিকে সামান্য দূরত্বে ছোট দ্বিতল একটি অনাবাসিক ভবন। এটি নির্মাণের তৃতীয় পর্যায়ের অন্তর্গত। বর্তমানে এই ভবন জাদুঘরের গেস্টহাউস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নির্মাণকালের শেষ পর্যায়ে এই ভবনের দেয়ালগুলো ‘চিনি টিকরি’ অলংকরণ দিয়ে সংস্কার করা হয়েছিল।
নির্মাণের চতুর্থ পর্যায়ে এই কমপ্লেক্সে আমূল পরিবর্তন ও সংযোজন করা হয়েছিল। পশ্চিম দিকে স্থাপিত বাংলা শিলালিপি অনুসারে, তিন ব্লকের সংযোজন ১৯০৪ সালে করা হয়েছিল। নির্মাণের এই পর্যায়ে ঔপনিবেশিক নির্মাণশৈলীর আদলে পেছনের উঠানের চারপাশে বারান্দা যুক্ত করা হয়েছিল। এ সময়ই ভবনগুচ্ছের নাম করা হয় ঈশাপাড়া ভবন। বর্তমানে এই কমপ্লেক্স যদিও বড় সরদার বাড়ি নামেই পরিচিত।
১৯৪৭–এ আদি বসবাসকারীরা ভারতে চলে গেলে ভবনগুলো অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যায়। নতুন বাসিন্দারা ভবনের কিছু পুনর্নির্মাণ করেন, লুট হয়ে যায় অনেক উপাদান। ১৯৪৭ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাতীয় লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জমির অধিগ্রহণ পর্যন্ত সময়টাকে বলা যায় পঞ্চম পর্যায়।
জাতীয় লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর হিসেবে ব্যবহারের সময়ও এই কমপ্লেক্সে বেশ কিছু সংযোজন করা হয়। এর মধ্যে আছে একটি খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার, সামনে ও পেছনের ভবনে নতুন সিঁড়ি, পেছনের অফিসের সম্প্রসারণ ও টিনে ঢাকা একটি করিডর। এ পর্যায়কে বলা যায় ষষ্ঠ বা শেষ নির্মাণ পর্যায়।
আশির দশকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ব্যাপক পুনর্নির্মাণ করে সিমেন্টের প্লাস্টার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় পুরো দেয়াল। ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী করতে অনেক দরজা–জানালা সে সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই কমপ্লেক্সের মূল অবয়ব পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ঠিক হয়, নির্মাণের শেষ বা ষষ্ঠ পর্যায়ের সব নতুন উন্নয়ন অপসারণ করা হবে। অর্থাৎ প্রথম পাঁচটি ধাপের সব স্থাপনা সংরক্ষণ করা হবে।
বড় সরদার বাড়িকে তার আদি রূপে ফিরিয়ে নিতে প্রাচীন নির্মাণকৌশল ও দেশীয় উপাদান ব্যবহার করা হবে, এটা ছিল আমাদের অন্যতম অভিষ্ট। আদি নির্মাণকৌশল সংরক্ষণকাজ করার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ কারিগর। বংশপরম্পরায় এসব ঐতিহাসিক নির্মাণশৈলীতে পারদর্শী অভিজ্ঞ কারিগর খুঁজে তাঁদের মাধ্যমে নতুন কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ছিল এই প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ তিন বছর স্থায়ী এই সংরক্ষণ প্রকল্পে শতাধিক দক্ষ কারিগর তৈরি হয়েছে। তাঁরা আজ সারা দেশে সরকারি–বেসরকারি নানা সংস্থায় চুন–সুরকি ও চিনি টিকরির কাজে নিয়োজিত আছেন।
নির্মাণশিল্পে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের মর্টার। এগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন মর্টার হলো চুন (লাইম) মর্টার। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে এর চল শুরু হয়েছিল। প্রাচীন রোম ও গ্রিসে এই মর্টার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এটি মূলত প্রাচীন মিসরীয় নির্মাণে ব্যবহৃত সাধারণ কাদামাটি ও জিপসাম মর্টারের জায়গা দখল করে।
বড় সরদার বাড়ির ইটের দেয়ালের গাঁথুনি ও প্লাস্টারে চুন–সুরকি ব্যবহার করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেষ সংস্কারের সময় ভেতর–বাইরের দেয়ালে ব্যবহৃত সব চুনের প্লাস্টার সরিয়ে তার জায়গায় নতুন করে দেওয়া হয় সিমেন্টের আস্তর। আগের চেহারায় ফিরিয়ে নিতে প্রথমে সিমেন্টের সেই আস্তরণ তুলে ফেলা হয়। কারণ, সিমেন্ট প্লাস্টার থাকলে চুন–সুরকির দেয়াল পানি শোষণের ক্ষমতা হারিয়ে অতি মাত্রায় শুষ্ক হয়ে পড়ে। ফলে তার কাঠামোগত শক্তি হারায় দেয়াল, কমে যায় ভবনের আয়ুষ্কাল। সিমেন্টের আস্তরণ তুলে ফেলা দেয়ালগুলো পরে তেঁতুল ও রসুনমেশানো পানিতে কয়েকবার ভেজানো হয়। আদি যুগে দেয়ালের নোনা ঠেকাতে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। সবশেষে আবার চুন মর্টার দিয়ে প্লাস্টার করা হয় দেয়াল।
ভবন নির্মাণে বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে চুন। এটি একটি সময় পরীক্ষিত উপাদান। চুন, ইটের পাউডার, পানি ও অন্যান্য জৈব সংযোজন যেমন চিটা গুড়, সুপারির কষ, কলাই ডালের মিশ্রণসহযোগে চুন মর্টার প্রস্তুত করা হয়েছিল। এ কাজের জন্য আমরা চুন–সুরকি কাজের পদ্ধতি জানেন, পাহাড়পুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমন রাজমিস্ত্রির সাহায্য নিয়েছিলাম। চুন মর্টার প্রস্তুত করার ঐতিহ্যগত কৌশল ও উপাদান খুঁজে বের করতে ব্যাপক গবেষণা করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রতিটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া যাতে সফল হয়, নিশ্চিত করতে চুন মর্টারের অবকাঠামোগত বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
বড় সরদার বাড়ি কমপ্লেক্সের প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটি ঐতিহ্যবাহী একটি অলংকরণশৈলী দ্বারা সজ্জিত, একে বলে ‘চিনি টিকরি’। এটি আসলে চকচকে চিনা বাসনকোসন ও রঙিন কাচের টুকরা দিয়ে তৈরি একধরনের মোজাইক কাজ। চিনি টিকরিতে দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস, যেমন ডিনার সেট, ফুলদানি ইত্যাদির পাশাপাশি রঙিন কাচও থাকত। ব্রিটিশ যুগের শুরুতে পুরান ঢাকায় প্রথম চালু হয় এই মোজাইক কৌশল। এ–জাতীয় প্লেট বা ফুলদানি তখন প্রচুর পরিমাণে বিদেশ থেকে আমদানি হতো।
বড় সরদার বাড়ির চিনি টিকরি কাজের বিল্ডিং ব্লকটি খুবই আকর্ষণীয়। স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য বাড়িটিকে মোগল আমলের বলে ইঙ্গিত করে, তাই চিনি টিকরির কাজটি মনে হয় পরবর্তী পর্যায়ের সংযোজন।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি ঔপনিবেশিক আমলের নির্মাতারা কলকাতায় ঢালাই লোহার রেলিং চালু করেন। তারপর ধনী জমিদার ও বণিকদের কল্যাণে পুরো বাংলাতেই ছড়িয়ে পড়ে ঢালাই লোহার কৌশল। বড় সরদার বাড়িতেও এই ঢালাই লোহার রেলিং প্রচুর ব্যবহার করা হয়েছিল সে সময়। কিন্তু শেষ সংস্কারের সময় বারান্দার ঢালাই লোহার রেলিংগুলো উল্লম্বভাবে স্থাপন করা লোহার রড দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। রঙিন কাচের সাজে ঢালাই লোহার ট্রেসেরি এখনো পশ্চিমের বারান্দায় দৃশ্যমান, বাকিগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। যেহেতু ঢালাই লোহাতে মরিচা পড়ার শঙ্কা বেশি, ওজনেও ভারী, বিকল্প উপাদান হিসেবে ঢালাইপ্রক্রিয়ায় তাই লোহার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় অ্যালুমিনিয়াম। নতুন বানানো রেলিংগুলো দেখতে ঢালাই লোহার মতোই, তবে ওজনে অনেক হালকা। পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে বেশ কয়েকটি ঢালাই লোহার কারখানা আছে। সেখান থেকেই এই প্রকল্পের সব রেলিং তৈরি করা হয়েছিল।
ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপনা পুনর্ব্যবহারের মধ্য দিয়েই পেতে পারে দীর্ঘায়ু। এই উদ্দেশ্যে পুরো কমপ্লেক্সটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় কাঠ, পোড়ামাটি, বাঁশ, ধাতব পদার্থ, সুতার তৈরি পণ্য ও তার নির্মাণপ্রক্রিয়া। তুলে ধরা হয় কারুশিল্পের প্রক্রিয়া ও কৌশল। এ ছাড়া বাড়িটি বর্তমানে বিভিন্ন প্রচারণামূলক ও বিজ্ঞাপনী সংস্থার জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলার স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার শত শত বছরের বিবর্তনের সাক্ষী হয়ে আছে বড় সরদার বাড়ি। এই ভবন কমপ্লেক্সের মধ্য দিয়ে হাঁটলে বারো ভূঁইয়া থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিক আমল পর্যন্ত সময়ের স্থাপত্যের কালানুক্রমিক একটি ইতিহাস ভ্রমণের স্বাদ পাওয়া যাবে।
লেখাটি বর্ণিল বসত মে ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত