এই মৌসুমে আগুন লাগলে কী করবেন

এমন শুষ্ক দিনে কোথাও আগুন লাগলে তা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
ছবি: সংগৃহীত

মৌসুমের পালাবদলে বেশ শুষ্ক হয়ে উঠেছে আবহাওয়া। শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগার ঝুঁকি বেশি থাকে। এমন দিনে হঠাৎ যদি কোথাও আগুন লেগে যায়, তা ছড়িয়েও পড়ে সহজেই। গ্রাম কিংবা শহর যেকোনো জায়গাতেই কিন্তু ঘটে যেতে পারে আকস্মিক ও মর্মান্তিক কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা।

তাই অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকতে সবারই সচেতন থাকা উচিত। অন্যান্য মৌসুমে তো বটেই, এই মৌসুমে একটু বেশি সতর্কতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তালিকাভুক্ত অগ্নিনিরাপত্তা পরামর্শক ও অ্যাশরে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মো. হাসমতুজ্জামান।

বাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখুন

রান্নাঘর হোক নিরাপদ

  • শীতের সময়টায় বাইরের ঠান্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে জানালা-দরজা লাগিয়ে রাখাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গ্যাসের চুলা জ্বালানোর আগে অবশ্যই রান্নাঘরের জানালা-দরজা খুলে দিতে হবে। বদ্ধ রান্নাঘরে ম্যাচের কাঠি জ্বালানো মাত্র আগুন লেগে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। কারণ, আপনার অগোচরেই ঘরে চুলার গ্যাস একটু একটু করে বেরিয়ে জমা হতে পারে। ঘ্রাণশক্তি দিয়ে আপনি তা অনুভব না–ও করতে পারেন। কিন্তু আগুন জ্বালালেই ঘটতে পারে বিপদ।

  • চুলা জ্বালিয়ে লম্বা সময়ের জন্য অন্য কোথাও যাবেন না।

  • গ্যাসের বা কেরোসিনের চুলার অনুষঙ্গগুলোয় কখনো পানি লাগাতে নেই। কারণ, চুলার ধাতব অংশে পানি লাগানো হলে তাতে মরিচা পড়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। রান্না শেষে শুকনা কাপড় দিয়ে চুলা মুছে রাখুন। প্রয়োজনে ভিনেগার ভেজানো কাপড় দিয়ে চুলার বিভিন্ন অনুষঙ্গ মুছতে পারেন।

চুলা জ্বালিয়ে লম্বা সময়ের জন্য অন্য কোথাও যাবেন না।
  • চুলার ওপর কাপড় শুকাতে দেবেন না।

  • কোনো সমস্যা না থাকলেও বছরে একবার অভিজ্ঞ ও পেশাদার ব্যক্তিকে দিয়ে গ্যাসের চুলা, গ্যাসের লাইন প্রভৃতি দেখিয়ে রাখা ভালো।

  • গ্যাস সিলিন্ডার থাকলে তা নাড়াচাড়া করুন সাবধানে।

  • মাটির চুলা ব্যবহারের পর ভালোভাবে নেভাতে হবে। চুলার ওপর কিছু রাখতে হলে চুলা পুরোপুরি নিভে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করুন।

বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার থাকলে তা সাবধানে নাড়াচাড়া করুন ।

বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য

  • বাড়ির বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে কোনো ত্রুটি থাকলে অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্যে তা ঠিক করিয়ে নিন। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ বা গ্যাসের সংযোগ নেবেন না।

  • বৈদ্যুতিক রুম হিটার বা গিজারের মতো অনুষঙ্গ কেনার সময় মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। পাশাপাশি ব্যবহারবিধি সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। এগুলো একটানা চালিয়ে রাখা ঠিক নয়।

  • বাড়িতে কেরোসিন বা অন্যান্য দাহ্য পদার্থ রাখার প্রয়োজন হলে, সেগুলো নিরাপদে রাখুন।

বাসার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে কোনো ত্রুটি থাকলে অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্যে তা ঠিক করিয়ে নিন।

বাড়ির ছাদ থেকে আগুন?

এই সময়টায় বাড়ির ছাদে হতে পারে নানা আয়োজন। গায়েহলুদ কিংবা অন্য কোনো আয়োজনে বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করতে গিয়ে অনেক কিছুই করা হয়। কেউ হয়তো আয়োজন করেন ‘বারবিকিউ পার্টি’, কেউ আবার ওড়ান ফানুস, ফোটান পটকা। ছাদে কোনো খাবার তৈরি করা হলে চুলা ও জ্বালানির ব্যাপারে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন।

লোকালয়ে কখনোই ফানুস ওড়াবেন না, পটকা ফোটানোও উচিত নয়। আনন্দের এসব অনুষঙ্গ আপনার বাড়ির ছাদ পেরিয়ে কারও জীবনের ওপর বিষাদ বা আতঙ্ক হয়ে চেপে বসবে, তা হয়তো আপনি ধারণাও করতে পারবেন না।

গ্যাসের চুলা জ্বালানোর আগে অবশ্যই রান্নাঘরের জানালা-দরজা খুলে দিতে হবে

বিপদের প্রস্তুতি

দুর্ঘটনাক্রমে আগুন লেগে গেলে সেই মুহূর্তে কী করতে হবে, সে বিষয়ে সবারই সম্যক ধারণা রাখা প্রয়োজন। বাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখুন। পরিবারের সব সদস্যেরই এর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন। প্রয়োজনে কীভাবে দ্রুততম সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখুন।

বহুতল ভবনের সিঁড়িতে দাহ্য পদার্থ রাখতে নেই। সিঁড়িতে এমন কোনো কিছুই রাখা উচিত নয়, যা জরুরি মুহূর্তে বেরোনোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।