কী আছে সোনমের ৪৪ কোটির বাড়িতে

লকডাউনের পুরো সময়টা যুক্তরাজ্যের নটিংহামের বাড়িতে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন বলিউড তারকা সোনম কাপুর। ভারতের মুম্বাইয়ে বাবার বাড়ি তো বটেই, তাঁর নিজের ফ্ল্যাটও নতুন করে সাজিয়েছেন। ২০১৫ সালে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ রুপি বা ৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটটি কেনেন সোনম। ৩ বছর ধরে চলেছে ৪ হাজার ৬০০ বর্গফুটের এই ফ্ল্যাটের অন্দরসজ্জার কাজ। সেই ফ্ল্যাট নিয়েই এবার আর্কিটেকচারাল ডাইজেস্টের প্রচ্ছদে দেখা দিলেন এই বলিউড তারকা।

অন্দরসজ্জাবিদ কবিতা সিংয়ের সঙ্গে সোনম কাপুর
ছবি: আর্কিটেকচারাল ডাইজেস্টের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে

সোনম কাপুরের বাড়ির অন্দরসজ্জা এককথায় ‘ম্যাক্সিমালিস্ট’। শত শত পেইন্টিং, ওয়াল আর্ট, টেরাকোটা, নাগা প্যানেল, ধ্রুপদি দক্ষিণ ভারতীয় তাঞ্জোর আর্ট, পিচওয়াই, রাজস্থানি জালি, হাজারো শোপিস, ফুল, লতাপাতা, পাখি, প্রাণীদের প্রতিকৃতি, গাছ, জারদৌসি এমব্রয়ডারি—কী নেই! ভক্তরা ভিডিওর মন্তব্যে জানিয়েছেন, এসব দেখেই নাকি তাঁদের মাথা ঘুরছে!

মুম্বাইয়ের বাড়িতে সোনম

অন্দরসজ্জাবিদ কবিতা সিংয়ের সঙ্গে এই অন্দরে কাজ করেছেন সোনম কাপুর। বলিউড তারকা বলেন, ‘অনেকের কাছে এ ধরনের অন্দরকে মনে হতে পারে সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমি নানা কিছু সংগ্রহ করতে ভালোবাসি। আর ভালোবাসি সেগুলো ঘরে সাজিয়ে রাখতে। চোখের সামনে রাখতে।’ সোনম আরও জানান, বাজারে গিয়ে তাঁর একটা জিনিস পছন্দ হয়েছে, আর সেটা তিনি বাড়ি নিয়ে ফেরেননি, এমনটা কখনো হয়নি

জীবনসঙ্গী আনন্দ আহুজার সঙ্গে সোনম কাপুর

ঘরের ব্যবহৃত টাইলসগুলোর বেশির ভাগই কাস্টমাইজড। এই যেমন, সোনম চেয়েছিলেন রান্নাঘরের টাইলসগুলোতে গাছ, লতাপাতা, ফুল, পাখি থাকবে। আর রান্নাঘর সাজাবেন সাদা-নীল রঙে। তেমনটাই করেছেন। যদিও ভক্তরা বলেছেন, রান্নাঘরের টাইলস দেখে মনে হয়েছে, সেগুলো বাথরুমেই ভালো মানাত! রান্নাঘর দেখাতে দেখাতে সোনম জানিয়েছেন, তিনি রান্না করতেও ভালোবাসেন। আবার কয়েকটা দেয়াল শিল্পীকে দিয়ে আঁকিয়ে নিয়েছেন। কিছু দেয়ালে রয়েছে চায়নিজ গ্লাস পেইন্টিং আর ফরাসি অন্দরসজ্জাবিদ পিঁয়ে ফ্রের নকশা করা ওয়ালপেপার।

সোনমের বাড়ির ডাইনিং

বসার ঘরটা যেন একটু বেশিই রঙিন। ব্যবহৃত বাসনকোসনের বেশির ভাগই চাইনিজ আর ডাচ পটারি। কিছু ভারতের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা। দেয়ালের বেশির ভাগ পেইন্টিং করেছেন চিত্রশিল্পী বিকাশ সোনি।

আর্কিটেকচারাল ডাইজেস্টের প্রচ্ছদে দেয়া দিয়েছেন সোনম

সোনমের ছেলের ঘর দেখে ভক্তরা মুগ্ধ। সেটা যেন একটা জঙ্গলেরই প্রতিচ্ছবি। সেখানে আছে হাতি, জিরাফ, কুকুর, বিড়ালসহ নানা কিছু। না না, সত্যিকারের নয়। এগুলো সবই ‘সফট টয়’। তবে অনেকটা সত্যিকারের আকৃতির। ঘরের মেঝেতে পাটি পাতা। যাতে পড়ে গেলে ছেলে বায়ু কাপুর আহুজা ব্যথা না পায়। এই প্রাণীরা বায়ুর বন্ধু। সবাইকে নাম ধরে ‘গুডনাইট’ জানিয়ে তবেই ঘুমাতে যায় বায়ু। ছোটবেলায় নাকি বাবা অনিল কাপুর সোনমকে জিরাফ ডাকতেন। ঘরের জিরাফটিও ঠিক ঠিক সোনমের উচ্চতার। পুতুল কুকুরটির নাম জ্যাক। সোনমের বাবা অনিল কাপুরের পোষা কুকুরের নামও জ্যাক।

নানা অনিল কাপুরের সঙ্গে সোনম কাপুর ও আনন্দ আহুজার পুত্র বায়ু

ডুপ্লেক্স বাড়িটির সিঁড়ির ওপর মাদুর পাতা। সেগুলোকে আবার আটকে দেওয়া হয়েছে। সারা ঘরেই রয়েছে ইরানি, ফরাসি আর মিসরীয় মাদুর। বাড়ির ‘ডাবল হাইট সিলিংয়ের’ নাগা প্যানেলটি সোনম সংগ্রহ করেছেন মুম্বাই থেকে। এ রকম ‘পিস’ ভারতে খুবই কম পাওয়া যায়। সোনম বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের নারী, যে শিল্পের কদর করতে জানে। আমার নানি প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় মারুতি সুজুকি চালিয়ে দাদার ফ্লাওয়ার মার্কেটে গিয়ে তাজা ফুল কিনে আনতেন। তা-ই দিয়ে ঘর সাজাতেন। আবার পরদিন সেগুলো ফেলে নতুন ফুল দিতেন। তিনি ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক, চিত্রশিল্প আর কার্পেটের কদর করতেন।’

পেছনের নাগা কাঠের প্যানেলটি সোনমের খুবই প্রিয়

এই বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় পাঁচটি জিনিস হলো তাঁর মায়ের উপহার দেওয়া একটা শাল। এটি তিনি থ্রস হিসেবে ব্যবহার করেন। যাতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। আবার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতেও ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় যে জিনিসটি সোনমের খুবই পছন্দ সেটি হলো তাঁর শ্বশুরের দেওয়া বদ্রিনারায়ণের বিশাল একটি পেইন্টিং। তৃতীয়টি হলো একটা সিলভারের বালতি। আর ভক্তরা জানিয়েছেন, সোনমের বাড়ির এই একটি জিনিসই কেবল তাঁদের বাড়িতেও আছে। এই বালতি সোনম ফুলদানি হিসেবে ব্যবহার করেন। নাগা কাঠের প্যানেলটিও সোনমের খুবই প্রিয়। আর যেটি সবচেয়ে বেশি প্রিয় সেটি হলো ছেলে বায়ুর ঘর!

সোনমের বাড়ির আসবাবগুলোর বেশীরভাগই ডিজাইনারস কালেকশন

সোনমের বাড়ির আসবাবগুলোর বেশ কয়েকটিও ডিজাইনারস কালেকশন। একের পর ইতিহাসের নানা অনুষঙ্গ স্তরে স্তরে সাজানো। মোগল আমলের পেইন্টিং, ইংরেজ আমলের বিপ্লবের পেইন্টিং, আধুনিক চিত্রশিল্প, দেয়ালচিত্র, হাজারো শোপিস। ফলে সোনমদের মুম্বাইয়ের বাড়িটি যতটা না থাকার জায়গা, তার চেয়ে বেশি ঘুরে ঘুরে দেখার জায়গা, অনেকটা জাদুঘরের মতো।