১৮৯৪ সালে রাশিয়ার সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় নিকোলাস। পুরো পরিবারসহ তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯১৭ সালে। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাঁর বসবাসের প্রাসাদটি খোলাই ছিল। নিকোলাসের মৃত্যুর ১০০ বছর পর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয় প্রাসাদটি। সম্প্রতি আবার খুলে দেওয়া হলো। নতুনভাবে প্রাসাদটি সাজানোর জন্য খরচ করতে হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার (প্রায় ২৪০ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার টাকা)।
প্রাসাদটি তৈরি হয়েছিল ১৭৯৬ সালে। ‘ক্যাথরিন দ্য গ্রেট’ তাঁর নাতি আলেকজান্ডারের জন্য এটি নির্মাণ করেছিলেন। এই কারণে প্রাসাদটির নাম আলেকজান্ডার প্যালেস। রাশিয়ার তৎকালীন রাজধানী পিটার্সবার্গের বাইরে ছিল এই বিস্তৃত প্রাসাদ এবং এর পার্কগুলো।
আলেকজান্ডারের প্রপিতামহ দ্বিতীয় নিকোলাস। তিনি ১৯০৫ সালে রাজধানীর বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে থাকতে এই প্রাসাদে স্থায়ীভাবে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। অনেকেই বলেন, নিকোলাস বিপ্লবের শুরুতেই তাঁর সৈন্যদের ত্যাগ করে এখানে এসে বসবাস করতে থাকেন। আবার অনেক জায়গায় বলা হয়, তিনি অত্যন্ত ক্ষমতাশীল হলেও খুবই পরিবারপ্রিয় মানুষ ছিলেন। সব দাপ্তরিক কাজ থেকে তাঁর পরিবারকে বাইরে রেখেছিলেন। একসময় পরিবার নিয়ে চলে আসেন আলেকজান্ডার প্যালেসে।
বর্তমানে এটিকে ‘রাশিয়ান হিস্টোরি মিউজিয়াম’ নামে জাদুঘর হিসেবেই খুলে দেওয়া হলো। পুরোনো দিনের হাজার হাজার সাদাকালো আলোকচিত্র, কিছু জলরং এবং প্রাসাদের গল্প নিয়ে পুনরায় অন্দর সাজানো হয়েছে। রাজা নিকোলাসের শোবার ঘরটি আবার সাজাতে প্রায় সবকিছুই পরিবর্তন করা হয়েছে। এই সাম্রাজ্যের সব বাড়ি ও দরবারে ব্যবহার করা হতো এমন কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে মেঝেতে। ঘর সাজানো হয়েচে উল ও সিল্ক দিয়ে। প্রাসাদের গ্র্যান্ড হলটি ৮ হাজার ৫০০ বর্গফুটের, সেখানে সোনার পাত বসানো হয়েছে।
ঘরের অনেক কিছু একেবারে নতুনভাবে সাজানো সম্ভব হয়নি। সেগুলো বিভিন্ন উপায়ে নকশা করা হয়েছে বা ঢেকে ফেলা হয়েছে। কিছুটা ধূসর নীল রঙের ভাঙা টাইলস ঢাকা হয়েছে সাদাকালো বড় বড় ছবিতে। এই দেয়াল মূলত দ্বিতীয় নিকোলাসের গোসলখানার।
অনেক দেয়ালে পাওয়া গেছে চকচকে ফিরোজা ও নীল রঙের পাথর। অনেক ঘরে দেখানো হয়েছে ২০ শতকের গৌরবগাথা। এগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও সোভিয়েত পুনর্নির্মাণেরও বহু আগের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও সোভিয়েত পুনর্নির্মাণের সময়ে এই প্রাসাদের অনেক কিছুই ধ্বংস হয়ে যায়।
২০১১ সালে রুশ সরকার এই প্রাসাদ নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করে। আর ২০২১ সালের আগস্টের ১৩ তারিখ সকালে সবার জন্য খুলে দেওয়া হয় মিউজিয়াম তথা প্রাসাদটি।