বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন

কাপড় ধোয়ার যন্ত্র এখন ঘর–গেরস্থালির দরকারি এক যন্ত্র । ছবি: অধুনা
কাপড় ধোয়ার যন্ত্র এখন ঘর–গেরস্থালির দরকারি এক যন্ত্র । ছবি: অধুনা

মেঘলা রহমান (ছদ্মনাম)। পেশায় ব্যাংকার। কাজের প্রয়োজনের পরিবারের সবাইকে ছেড়ে রাজধানীতে একা থাকেন। নয়টা–পাঁচটা অফিস। কিন্তু অফিসে যাওয়ার জন্য তার প্রস্তুতি শুরু সকাল সাতটার পর থেকে। সারা দিনের ব্যস্ত অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৮টা। এরপর প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতেই ঘড়ির কাঁটা ০০–এ দাঁড়ায়। এভাবেই শেষ হয় মেঘলার কর্মক্লান্তি প্রতিটি দিনরাত ও সপ্তাহ। এরপরও শতব্যস্ততার মধ্যেও মেঘলা রহমানকে প্রতিদিনই পরিপাটি হয়ে অফিসে যেতে হয়। অফিসের পোশাক হওয়া চাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মেঘলা সব কাজ নিজের হাতে করলেও নিজের পোশাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ভরসা রেখেছেন ওয়াশিং মেশিনের ওপর। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে বা সপ্তাহের ছুটির দিনে কাপড় ধোয়ার এই যন্ত্রই তার সঙ্গী। তাই পরিবার থেকে অনেক দূরে ব্যস্ত শহরে একা থাকলেও পোশাকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মেঘলার ভাবনা নেই। তার ভরসা ওয়াশিং মেশিন।

স্বামী রফিকুল ইসলাম ও স্ত্রী নীলা ইসলাম (ছদ্মনাম) দুজনই কর্মজীবী। দৈনন্দিন জীবনের কাজের মধ্যে দুজনেরই সময় বের করা অনেক কঠিন। প্রতিদিন সকালে কাজের প্রয়োজনে বের হন তারা এবং রাতে অফিস থেকে ফেরা। এর মধ্যে অংশগ্রহণ করতে হয় দাওয়াত এবং নানান সামাজিকতা। সবকিছু মিলিয়ে নিমেষেই দিন পার হয়ে যায় তাদের। এর মধ্যেই প্রতিদিন পরিপাটি পোশাক পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হয়। এ জন্য চাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক। কিন্তু চাইলেই তো হবে না, পরিপাটি পোশাক পরার জন্য নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে পরিধেয় পোশাক। কিন্তু কর্মজীবী হওয়ার কারণে পোশাক পরিষ্কার করার সময় পায় না কর্মজীবী এই দম্পতি। তাই এই কাজের জন্য চাই বিশ্বস্ত সাহায্যকারী। কর্মজীবী এই দম্পতির বিশ্বস্ত সঙ্গীর নাম ওয়াশিং মেশিন।

যৌথ পরিবারের সদস্যদের এক দিনেই অনেক ময়লা কাপড় জমে যায়। এমন পরিবারের গৃহকর্মীর পক্ষে একসঙ্গে এত কাপড় ধোঁয়া সম্ভব নয়। এই পরিবারের পোশাক পরিষ্কারের ভরসা যত্নের নাম ওয়াশিং মেশিন। দেশের মানুষের কাছে আস্তে আস্তে ওয়াশিং মেশিন আস্থার জায়গা করে নিচ্ছে। আগে ওয়াশিং মেশিনকে মনে হতো বিলাসিতা এবং এখন একটি দরকারি গৃহস্থালি পণ্য।

জীবন সহজ করে

আধুনিক জীবনে পরিপাটি থাকাটা জরুরি। একজন মানুষের স্মার্টনেস এবং ব্যক্তিত্বের অনেকটাই প্রকাশ করে তার পোশাক। সে জন্য পরনের কাপড় হওয়া চাই পরিষ্কার ও পরিপাটি। তবে ব্যস্ত এ সময়ে নিয়মিত কাপড় ধোয়াটা সব সময় সম্ভব হয় না। আবার বাসায় গৃহকর্মী সব সময় পাওয়া যায় না, নিরাপত্তার কথা ভেবে রাখাটা ঝক্কিরও। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের কাজ নিজেই করতে শিখছে সবাই। কাপড় ধোয়া বা শুকানো নিয়েই বা চিন্তা করতে হবে কেন? এ কাজের জন্য আছে ওয়াশিং মেশিন। তা ছাড়া কাপড় কাচা, ধোয়া ও শুকানো অনেকের কাছেই বেশ বিরক্তিকর। সময় সাপেক্ষও বটে। ঝামেলাহীন ঝটপট কাপড় ধোয়া ও শুকানোর জন্য চাহিদা বাড়ছে ওয়াশিং মেশিনের। ওয়াশিং মেশিন আপনার জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে।

বাজার বেড়িয়ে

আকর্ষণীয় ডিজাইনের উন্নত মানের ওয়াশিং মেশিন দিয়ে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে সিঙ্গার। সাশ্রয়ী দাম, উচ্চমান ও কিস্তি–সুবিধায় কেনা যায় বলে বেড়েছে এর বিক্রি। বাজারে তিন ধরনের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়। এগুলো হলো অটোমেটিক, সেমি অটোমেটিক ও ম্যানুয়াল। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সব ওয়াশিং মেশিন আবার দুই ধরনের—টপ লোডিং ও ফ্রন্ট লোডিং।

অটোমেটিক মেশিন কাপড় ধোয়ার সময় প্রয়োজন অনুযায়ী পানি নিজেই নিয়ে নেয়। ধোয়া শেষে পানি ঝরিয়ে কাপড় শুকিয়ে দেয়। সেমি অটোমেটিক মেশিনে কাপড় ধোয়ার সময় ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দিতে হয়। এই মেশিনও কাপড় ধোয়ার পর পানি ঝরিয়ে শুকিয়ে দেয়। অটোমেটিক মেশিনে কাপড় ধোয়া সহজ। কাপড় দিয়ে স্টার্ট বাটনটি চাপলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাপড়ের পরিমাণ অনুযায়ী পানি নিয়ে ধোয়ার কাজ শুরু করে। কাপড় শুকিয়েও যায়। কাজ শেষ হলে যন্ত্রটি থেমে যায়। অন্যদিকে সেমি অটোমেটিক ও ম্যানুয়াল ওয়াশিং মেশিনে ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট বাটন চেপে নির্দেশনা দিতে হয়।

বাজারের অন্যান্য ওয়াশিং মেশিনের প্রচলিত সব সুবিধার বাইরেও সিঙ্গারের অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের বেশ কিছু বিশেষ সুবিধা আছে।

দরদাম

বাজারে সিঙ্গারের বেশ কয়েকটি মডেলের ওয়াশিং মেশিন রয়েছে। বিশেষ মূল্যছাড়ে সিঙ্গারের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ১০ কেজির ওয়াশিং মেশিনের দাম ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা, সামনের দরজার ৮ কেজির ওয়াশিং মেশিনের দাম ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা, সামনে দরজার ৬ কেজির ওয়াশিং মেশিনের দাম ৩১ হাজার ৯৯০ টাকা, ৭ কেজির দাম ২০ হাজার ৯৯০ টাকা। সামনের দরজার ৭ কেজির আরেকটি মডেলের দাম ৩২ হাজার ৯৯০ টাকা। ৯ কেজির দাম ২৪ হাজার ৯৯০ টাকা, ৭ কেজি ওয়াশিং মেশিনের দাম ২৫ হাজার ৯৯০ টাকা, ৬.৫ কেজির দাম ৯ হাজার ৯৯০ টাকা, ১০ কেজির দাম ২৭ হাজার ৯৯০ টাকা, ১১ কেজির দাম ১৩ হাজার ৯৯০ টাকা, ৬ কেজির দাম ৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৮ কেজির দাম ১১ কেজির দাম ১১ হাজার ৪৯০ টাকা।

এ ছাড়া ট্রান্সটেক, স্যামসাং, ওয়ালপুল, প্যানাসনিক, এলজি, সনি-র​্যাংগস, ভিশন, ওয়ালটনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়। এই ওয়াশিং মেশিন টেকসই ও মজবুত। রয়েছে ৬ মাস থেকে ৩৬ মাসের কিস্তি–সুবিধা। ওয়াশিং মেশিন বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়। ৫ কেজি থেকে ৩০ কেজির ওয়াশিং মেশিনের দাম ২৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে।

কোথায় পাবেন

ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস লিমিটেড, ওয়ালটন, স্যামসাং, সিঙ্গার, প্যানাসনিক, এলজি, সনি-র​্যাংগস এবং শার্প শোরুমে এ পণ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া নিউমার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, মৌচাক মার্কেট, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, পুরান ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়।