ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বেশির ভাগ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। সে জন্য তাঁদের বাসা বদলের ঝামেলা পোহাতে হয়। বাসা বদলের ঝক্কিঝামেলায় বেশি ক্ষতি হয় আসবাবের। অভিজ্ঞ মানুষমাত্রই জানেন, একবার বাসা বদলের ফলে আসবাবের আয়ু কমে যায়। বাসা থেকে আসবাব নামানো, সেগুলোকে ভ্যান বা ট্রাকে তোলা, আবার নতুন বাসার সামনে নামানো, বাসায় তোলা—সব মিলিয়ে আসবাবের আয়ুর সত্যি কিছু বাকি থাকে না। আবার সেগুলো যদি হয় বিভিন্ন ধরনের বোর্ডে তৈরি, তাহলে তো কথাই নেই।
নতুন কোনো বিষয় নয় নক ডাউন। তবে হালে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি। এ পদ্ধতিতে তৈরি করা আসবাবপত্র সহজে এবং কোনো ক্ষতি না করে স্থানান্তর করা যায়। নক ডাউন ধারণার আসবাবপত্রের মধ্যে আমাদের কাছে বেশি পরিচিত হলো খাট। বহু আগে থেকেই খাটের প্রতিটি অংশ খুলে স্থানান্তর করা হয়। এগুলোকে রেডি টু অ্যাসেম্বল ফার্নিচারও বলা হয়।
এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নক ডাউন বা রেডি টু অ্যাসেম্বল বিভিন্ন আসবাব। সবকিছু প্যাকেট করাই থাকে। প্রয়োজনীয় আসবাব কিনে এনে বাসায় অ্যাসেম্বল করে নিলেই ব্যবহার করা যায়। আবার প্রয়োজনের সময় খুলে প্যাকেট করে সহজে স্থানান্তরও করা যায়। এগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য হলো পেরেকের বদলে এগুলোতে স্ক্রু লাগানো থাকে বলে খুব সহজে প্রয়োজনমতো প্রতিটি অংশ খুলে ফেলা ও লাগানো যায়। প্রতিটি অংশ খুলে ফেলার কারণে কোনো ধরনের ক্ষতি ছাড়া এগুলো পরিবহন করা যায় অনেক সহজে। একবার শিখে নিলে পরিবারের লোকজনই সহজে আবার সেগুলোকে দাঁড় করিয়ে নিতে পারেন ব্যবহারের জন্য।
আপনি একবার ভাবুন তো, আপনার বাসার প্রায় প্রতিটি আসবাবের প্রতিটি অংশ খুলে, প্যাক করে নতুন বাসায় উঠে আবার সেগুলো আগের মতো করে বসিয়ে দিলেন নির্দিষ্ট জায়গা! আনা–নেওয়ার সময় সিঁড়িতে বা অন্য কোথাও একবারও ঘষা খেল না। কোথাও কোনো দাগ পর্যন্ত পড়ল না। তার ওপর পরিবহন খরচও কমে গেল অর্ধেক। প্রতিটি অংশ খুলে নেওয়ার জন্য ট্রাকে জায়গা পেলেন বেশি। এক ট্রিপেই হয়তো পুরো বাসার আসবাব নেওয়া গেল। ফলে ট্রাকের পেছনে দুই ট্রিপের খরচ নেমে এল এক ট্রিপে। টু ইন ওয়ান—আসবাবও ভালো থাকল, খরচও কমল। দুর্দান্ত ব্যাপার না?
আসবাব বিক্রির যেকোনো বড় শোরুমে সহজেই পাওয়া যায় নক ডাউন আসবাব। অথবা পাড়া-মহল্লার কাঠের দোকানে বলে একেবারে নিজস্ব নকশার নক ডাউন আসবাব বানিয়ে নেওয়াও যায়। খাট, চেয়ার, টেবিল, সোফা, ডিভান, আলমারিসহ বাসায় ব্যবহার করা যায় যত রকমের আসবাব, তার প্রায় সবই এখন নক ডাউন পদ্ধতিতে বানিয়ে নেওয়া যায়।
নক ডাউন আসবাবের জন্য সেরা ব্র্যান্ডের আসবাব বেছে নেওয়া ভালো। তাতে ফিনিশিং এবং অতিরিক্ত যন্ত্রপাতির মান বজায় থাকবে ভবিষ্যতের জন্য। যদি দোকান থেকে বানিয়ে নিতে চান, তাহলে দক্ষ কারিগর দিয়ে বানিয়ে নিতে হবে। কারণ, এর স্ক্রু বসানোর ফুটো, কাঠের পরিমাপ এবং ফিনিশিং হতে হবে একেবারে সঠিক মাপের। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, এসব আসবাবও যত কম খোলা যায়, ততই ভালো।
সামনের দিনগুলোয় আমাদের বাসাবাড়ি সম্ভবত বাক্সের হাতে চলে যাবে। আর কিছু বাক্স পুরোনো বাসা থেকে নতুন বাসায় নিয়ে গেলেই হয়ে যাবে বাসা বদল। এর আলামত দেখা যাচ্ছে এখনই। আমাদের খাটগুলো বক্স খাট হয়ে গেছে বহু আগেই। ছোট ছোট আসবাব ইতিমধ্যে বাক্সের আকার নিয়েছে, যেগুলো একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, একই মাপের একাধিক বাক্স একটার ওপর অন্যটি রেখে একটি বিশেষ আসবাবের আকার দেওয়া হচ্ছে।
যেমন সমান আকারের একাধিক বাক্স একটার ওপর একটা সাজিয়ে বেড সাইড ড্রয়ার বানানো হচ্ছে, একই আকারের একাধিক বাক্স দিয়ে একইভাবে বানানো হচ্ছে বই রাখার তাক। লম্বা একাধিক বাক্সের ওপর ম্যাট্রেস বিছিয়ে করা হচ্ছে বসার ব্যবস্থা। শোকেস হয়ে গেছে দুই অংশের। নিচের বাক্সের ওপর শোকেসের ওপরের অংশ বসিয়ে দিলেই হয়ে যাচ্ছে একটি পরিপূর্ণ শোকেস। ওয়ার্ডরোবও বানানো হচ্ছে ওপরে নিচে বাক্স রেখে কিংবা পাশাপাশি একই মাপের একাধিক বাক্স রেখে।
আসবাবে বাক্সের এই ব্যবহার করা হচ্ছে মূলত ছোট বাসার অল্প জায়গা আরও ভালোভাবে ব্যবহার এবং সহজে পরিবহনের সুবিধার কথা মাথায় রেখে। বাসা বদলের সময় এই ছোট বাক্সগুলোকে সহজে স্থানান্তর করা যায় এর ভেতরের জিনিসপত্রসহ বা ছাড়া। অর্থাৎ এখন কিছু বাক্স বদল করলেই বাসা বদল হয়ে যাবে! বাসা বদলের সময় আসবাবের আকার ছোট হওয়ার কারণে ওঠানো বা নামানোর ক্ষেত্রে সেগুলোর ক্ষতি হয় না। দ্রুত এবং অল্প খরচে সেগুলোকে স্থানান্তর করা যায়।
শোরুমে খোঁজ করলে বাক্স দিয়ে বানানো অনেক আসবাব পেয়ে যাবেন পছন্দমতো। সেটা করতে না চাইলে নিজের এলাকার কাঠের দোকানে আপনার পরিকল্পনা শেয়ার করুন। তারা আপনাকে বানিয়ে দেবে আপনার পছন্দমতো বিভিন্ন আকৃতির বাক্স। আপনি সেগুলো আপনার মতো করে ব্যবহার করবেন। কাঠের দাম, বাক্সের সংখ্যা এবং বার্নিশের ওপর নির্ভর করবে আপনার বাক্সের দাম।
একুশ শতকের আধুনিকতা মানে শুধু পোশাক আর অনুষঙ্গের জাঁকজমকই নয়। নিজে কী চান, কীভাবে চান, সেটা বোঝা এ সময়ের কুল ট্রেন্ড। আপনি শুধু নিজের মতো করে পরিকল্পনা করবেন, সেটা বাস্তবায়ন করার লোকের অভাব হবে না। নক ডাউন আসবাব কিংবা বাক্সের ট্রেন্ড চলছে এখন। এবার আপনি ভেবে নিন কী করে এগুলোকে আপনার উপযোগী করে ব্যবহার করবেন।