১. ফ্রিজে বিদ্যুৎ খরচ কমানোর কোনো উপায় আছে কি?
রেফ্রিজারেটরে ইনভার্টার ব্যবহার করলে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় বলে জানালেন স্যামসাং বাংলাদেশের প্রোডাক্ট ম্যানেজার (রেফ্রিজারেটর) রেজাউল হায়দার। এ ছাড়া বেশিক্ষণ ফ্রিজ খুলে রাখা যাবে না। এতে কমপ্রেসরের ওপর চাপ পড়ে। ফলে ফ্রিজ আবার যখন নিজেকে ঠান্ডা করবে, তখন বিদ্যুৎ খরচ বেশি হবে। যাঁরা পুরোনো রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করেন, তাঁদের রেফ্রিজারেটরের কনডেনসার নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। কনডেনসারের কয়েলে ময়লা জমলে সঠিকভাবে সেটি তাপ বিকিরণ করতে পারে না। ফলে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে। তাই কনডেনসার পরিষ্কার রাখুন।
২. ডিপ ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমলে কী করব?
ফ্রস্ট ফ্রিজে বরফ জমা স্বাভাবিক। কোনো কারণে অতিরিক্ত বরফ তৈরি হলে তা পরিষ্কার করতে হবে। চামচ দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। অনেক সময় থার্মোস্টেট সঠিক তাপমাত্রায় না থাকলে অতিরিক্ত বরফ জমতে পারে। বরফ বেশি জমলে ফ্রিজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৩. তাপমাত্রা সর্বনিম্ন রাখলে কি সমস্যা হতে পারে?
ফ্রিজে কী ধরনের খাবারের সংরক্ষণ করছেন, তার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে। ইলেক্ট্রো মার্টের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান আরিফুর রহমান বলেন, ফ্রিজের ‘নরমাল’ অংশের তাপমাত্রা প্রয়োজন বুঝে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি রাখুন। গড়পড়তা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা ভালো। আর ডিপ ফ্রিজের ক্ষেত্রে মাইনাস ১৮ থেকে মাইনাস ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখতে হবে। সাধারণত মাইনাস ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখলে জিনিসপত্র ভালো থাকে।
৪. ফ্রিজের ভেতর দুর্গন্ধ হলে দূর করার উপায় কী?
দুর্গন্ধ হলে ফ্রিজের বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে সব খাবার বের করে কুসুম গরম পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করুন। মাঝেমধ্যে পানিতে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে তাতে কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে ফ্রিজের ভেতরটা মুছে রাখুন। ঢাকনাবিহীন বাটিতে সামান্য পানিতে বেকিং সোডা গুলিয়ে ফ্রিজে রাখলে দুর্গন্ধ চলে যায়। এ ছাড়া কমলালেবুর খোসা, লেবু বা টি-ব্যাগ, ডিমের খোসা ফ্রিজে রাখলে দুর্গন্ধ চলে যায়। ফ্রিজের জন্য আলাদা সুগন্ধিও পাওয়া যায়, যা দুর্গন্ধ দূর করে। ফ্রিজে যখন গন্ধ হয়, তখন তাপমাত্রা ঠিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়ে ফ্রিজের ভেতরের খাবার নষ্ট হয়। লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড দুর্গন্ধ দূর করতে পারে।
৫. ফ্রিজের সঙ্গে স্ট্যাবিলাইজার রাখা কি জরুরি?
স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামা থেকে রেফ্রিজারেটরকে সুরক্ষিত রাখা যায়। তবে রেজাউল হায়দার বলছিলেন, এখনকার বেশির ভাগ আধুনিক ফ্রিজেই বিল্ট ইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা সহজেই ভোল্টেজ ওঠানামা থেকে রেফ্রিজারেটরকে সুরক্ষা দেয়।
৬. মাংস বা মাছ কীভাবে ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে?
ভুল পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করলে খাদ্যে বিষক্রিয়া তৈরি হয়। পুষ্টিবিদ বেনজীর শামস বলেন, ‘মাংস বাড়িতে আনার পর পানি দিয়ে মাংসে লেগে থাকা রক্ত ও ময়লা পরিষ্কার করে নিতে হবে। রক্তসহ মাংস ফ্রিজে রাখলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে, দুর্গন্ধও তৈরি হতে পারে। খোলা পলিব্যাগ বা পাত্রে মাংস না রেখে ঢাকনাওয়ালা পাত্রে বা এয়ারটাইট ব্যাগে মাংস সংরক্ষণ করুন। ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে মাংস ছোট ছোট প্যাকেটে রাখতে পারেন। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে একটু লবণ ছিটিয়ে নিন। এতে মাংসের স্বাদ, গুণাগুণ ও ঘ্রাণ অটুট থাকবে।’
ডিপ ফ্রিজে সতর্কতার সঙ্গে মাছ কেটে সংরক্ষণ করতে হবে। সরাসরি মাছ বাজার থেকে কিনে এনেই ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। মাছ কেটে ছোট টুকরো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। পানি ঝরিয়ে বেশি করে লেবুর রস, হলুদগুঁড়া ও লবণ মাখিয়ে রান্নার উপযোগী করে ছোট ছোট প্যাকেটে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে এই গরমে যাঁরা ইলিশ মাছ কিনবেন, তাঁরা আস্ত মাছই রাখতে চেষ্টা করুন।
৭. ফ্রিজ পরিষ্কার করার সময় কোন বিষয় খেয়াল রাখব?
বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে ফ্রিজ পরিষ্কার শুরু করতে হবে। প্রথমে কিছুটা সময় ফ্রিজের দরজা খুলে রাখুন, যেন বরফ গলে যায়। ফ্রিজের তাক, ড্রয়ার ও সেলফ খুলে আলাদা আলাদা করে পরিষ্কার করতে হবে। ডিটারজেন্ট মেশানো হালকা গরম পানিতে স্পঞ্জ ভিজিয়ে ধোয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। ব্রাশ দিয়ে ফ্রিজের বিভিন্ন রবার, দরজা, ড্রয়ার হোল্ডার ভালো করে পরিষ্কার করুন। সর্বশেষ তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে শুকিয়ে নিন। ফ্রিজ পরিষ্কারের পরপরই বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া যাবে না। কিছুটা সময় নিয়ে সংযোগ দিন।
৮. ফ্রিজ থেকে পানি পড়ছে, কী করব?
খুব সাধারণভাবে ফ্রিজে বৈদ্যুতিক বিভ্রাট তৈরি হলে পানি পড়তে পারে বা ফ্রিজের বডিতে পানি জমতে পারে। অনেক সময় ফ্রিজ সমতল স্থানে না রাখলে পানি পড়তে পারে। ফ্রিজের নিচে জমে থাকা বরফের কারণেও অনেক সময় পানি পড়ে। এ রকম সমস্যা হলে ফ্রিজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করে কারিগরি সেবা নিন।
৯. রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ কেনার আগে কোন বিষয়গুলো খেয়াল করব?
পরিবারের প্রয়োজন ও ব্যবহারের ধরন বুঝে কত লিটারের ফ্রিজ কিনবেন, সিদ্ধান্ত নিন। ফ্রিজ কোনভাবে ঠান্ডা হয়, ইনভার্টার আছে কি না, জেনে নিন। কেনার সময় বিক্রয়-পরবর্তী সেবা, যেমন বিভিন্ন যন্ত্রাংশের গ্যারান্টি, ওয়ারেন্টি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে। যে ব্র্যান্ডের ফ্রিজ কিনছেন, তার সার্ভিস সেন্টার আপনার এলাকায় আছে কি না, খোঁজ নিন। যেন কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সেবা পাওয়ার সুযোগ থাকে। বিল্ট ইন স্ট্যাবিলাইজার, ডোর অ্যালার্ম ও ডিওডোরাইজিং ফিল্টারের মতো সুবিধা থাকে অনেক ফ্রিজে, কেনার সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
১০. ফ্রস্ট, ডি-ফ্রস্ট, নন-ফ্রস্টের মধ্যে পার্থক্য কী? কার কোনটা প্রয়োজন?
সাধারণত ফ্রস্ট ফ্রিজে দ্রুত ঠান্ডা হয়। এ ধরনের ফ্রিজে বরফ জমে বলে বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকলেও খাবার সংরক্ষণের ওপর খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। ডি-ফ্রস্ট ফ্রিজে মিহি বরফ তৈরি হয়। নন-ফ্রস্ট ফ্রিজে সাধারণত কোনো বরফ জমে না। খাবার ভালো রাখতে এ ধরনের ফ্রিজের কম্প্রেসর সর্বক্ষণ চালু রাখা ভালো। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বা যেখানে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট বেশি হয়, সেখানে ফ্রস্ট ফ্রিজ ব্যবহার করা যায়। ডি-ফ্রস্ট ফ্রিজও সাধারণভাবে ব্যবহার করা যায়। আর ব্যস্ত নগরজীবনে যাঁদের জন্য সময় বাঁচানোই গুরুত্বপূর্ণ, তাঁরা নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ ব্যবহার করতে পারেন।