অন্দর

প্রেমার স্নিগ্ধ বাড়ি

নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমার বাসায় সবুজের আবহ। ছবি: সুমন ইউসুফ
নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমার বাসায় সবুজের আবহ। ছবি: সুমন ইউসুফ

ঢাকার ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরোনো) সড়কের বাড়িটির গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই সামনের সবুজ লন দেখে বেশ ভালো লাগল। লিফটে করে নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমার ফ্ল্যাটে পৌঁছালাম। দরজার সামনে প্রচুর গাছ। তিন তাকজুড়ে শুধু ক্যাকটাস। পাশের টবে নাম জানা না–জানা গাছ। বোঝা গেল, এই বাড়ির মানুষেরা গাছপ্রেমী।

দেয়ালে ঝুলছে নকশা করা আয়না

আধুনিক ও লোকজ ধারার মিশেল বাড়ির ভেতর-বাইরে সবখানেই। একধরনের ছিমছাম ভাব বসার ঘরজুড়ে। পিতলের নটরাজ দেখে বোঝা গেল, এটা একজন নৃত্যশিল্পীর বাসা। সোফা, পর্দা সবটাতেই বাদামি, ধূসর ও মেরুনের মিশেল। ব্যাখ্যা প্রেমা নিজেই দিলেন, ‘আমি যেহেতু নাচের মানুষ, নাচের পোশাক বাছাই করা, মঞ্চ বাছাই করা—সবকিছুতে রংকে প্রাধান্য দিই। মাথায় রাখি দূর থেকে দর্শক যেন আলাদা করে রং চিনতে পারে। উজ্জ্বল রঙের আধিক্য বা গাঢ় রং ঘর সাজাতে ব্যবহার করা হলে ঝঞ্ঝাট মনে হয়। স্নিগ্ধ ভাবটাই নষ্ট হয়ে যায়।’

বাসার প্রতিটি কোণে মিলবে ঐতিহ্যের নিদর্শন

পর্দা ও সোফার কভার সব সময় বাদামি, চাঁপাসাদা বেছে নেন। এগুলো তিনি তো চাইলেই সব সময় পরিবর্তন করতে পারবেন না। বসার ঘরে পাঁচটা টুল রাখা। দুটি পাটের দড়ি দিয়ে মোড়ানো—এগুলো আড়ং থেকে কেনা, আর যাত্রা থেকে কেনা রিকশাচিত্র আঁকা তিন আকৃতির বাকি তিনটা টুল রাখা আছে। প্রেমার মতে, যে বাড়িগুলো আড্ডাপ্রধান, সেখানে এত সোফা বসিয়ে জায়গা নষ্ট করার মানে হয় না। সে কারণে টুল দেওয়া, যাতে ইচ্ছেমতো বসে আড্ডা দিতে পারে।

আছে আড়ংয়ের বড় বড় আকারের কুশন। শতরঞ্জির ওপর কুশনগুলো দিয়ে বসার জায়গা তৈরি করে নেন প্রেমা ও তাঁর স্বামীর বন্ধুরা। আড়ং ও যাত্রা থেকে জিনিস কিনতে পছন্দ করেন। দেশের বাইরে শান্তিনিকেতন থেকে কেনাকাটা করা হয় বেশি। নাচের প্রয়োজনে প্রায়ই তাঁকে যেতে হয় সেখানে। নটরাজ ও মঙ্গলপ্রদীপ সেখান থেকে নিয়ে এসেছেন। এমনকি পর্দার ওপরের ফ্রিলও।
নটরাজের নিচে সিরামিকের একটি প্লেট, তার দুই পাশে আরও দুটি ফুলদানি, পাশে রাখা আড়ংয়ের পিতলের শোপিস। নিচে রাখা কালচে পিতলের মোমদানি।

‘আমাদের বাসার শোপিসগুলোও ম্যাট ধরনের। চকচকে জিনিস আমার পছন্দ না। ম্যাট ধারার জিনিসগুলো ল্যাম্পশেডের আলোর খেলা দিয়ে ভিন্নভাবে তুলে ধরা যায়। আমার কিন্তু ল্যাম্পশেড খুব প্রিয়।’ এই ঘরে তিন ধরনের ল্যাম্পশেড আছে। যাত্রা ও আড়ংয়ের বাইরে তুরস্ক থেকে আনা মেরুন রঙের টার্কিশ ল্যাম্পশেড।

বাসার প্রতিটি কোণে মিলবে ঐতিহ্যের নিদর্শন

এক পাশে ম্যাগাজিন ও পত্রিকা রাখার কাঠের নিচু তাক। কাঠের ইজিচেয়ারে বসে পত্রিকা পড়েন তিনি। দেয়ালে কাঠের কারুকাজে নেপালের বিশেষ শোপিস, এর ঠিক পাশে আয়না রাখা। এটিও আড়ং থেকে কেনা।
এক শিল্পী বন্ধুর উপহার দেওয়া টেপা পুতুল ও ঘোড়া আঁকা শিল্পকর্মটি লোকজ স্বকীয়তা জানান দেয় ভালোভাবেই। পাশে আরেকটি কয়েক ধাপের তাক—সেখানেও নানা দেশীয় জিনিস। প্রেমা বলেন, ‘যখনই আমরা বিদেশে যাই, সেখানকার হস্তশিল্প কিনি। ও রকমভাবে ক্রিস্টালের শোপিস কেনা হয় না।’
বসার ঘর থেকে খাবার ঘর পেরিয়ে শোয়ার ঘরের দিকে গেলাম। এই দুই ঘরের দেয়ালজুড়ে আড়ংয়ের ফটোফ্রেমে একমাত্র সন্তান রাইয়ের সঙ্গে তাঁদের নানা মুহূর্তের ছবি। শোবার ঘরের বারান্দায় আরও অনেক গাছগাছালি। শতব্যস্ততার মধ্যে এখানে যেন শান্তি, আরাম খুঁজে পান। বললেন, ‘এই বাড়ি কিন্তু এমনই শান্তির, মঙ্গলের। মঙ্গলপ্রদীপও জ্বালিয়ে দিই মাঝেমধ্যে। স্নিগ্ধ এই বাড়িময় থাকে সবুজ ও মঙ্গলের বার্তা।’