ছাদে বাগান করার আছে কিছু নিয়ম কানুন। মেনে চললে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে কম।
নগরের নানা প্রান্তে আজ ছোপ ছোপ সবুজ পরশ। বারান্দা বা ছাদে গাছ লাগানোর চল গৃহবন্দী সময়েই বেড়েছে বেশি। ছাদে রোদ, বৃষ্টি—দুই-ই মেলে। বড় পাত্রে মাঝারি আকারের গাছ, তাই ছাদে বেড়ে উঠতে পারে অল্প যত্নেই। ছাদে মাচা তৈরি করেও গাছ বাইতে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাড়িতে সবুজের স্নিগ্ধ আমেজ আনতে, মনের আনন্দে স্বল্প পরিসরেই ফুল-ফসল ফলাতে ছাদবাগানের জুড়ি মেলা ভার।
কিন্তু এ ছাদবাগান করতে গিয়ে ছাদের ভিত্তিতে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করছেন না তো? ক্রমাগত ভেজা মাটি, কাদা, পানির সংস্পর্শে ছাদের গঠনগত ক্ষতি হতে পারে। তবে নিয়ম মেনে সঠিকভাবে ছাদে বাগান করা হলে এমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই, জানালেন এম অ্যান্ড এস ইন্টেরিয়র সলিউশনের অন্দর সজ্জাবিষয়ক পরামর্শক মুমানা ইসলাম।
প্লাস্টিকের গামলা-বালতি, তেলের বোতল, ড্রাম, এমনকি পুরোনো বাথটাব—এমন অনেক কিছুই হতে পারে ছাদগাছের ‘টব’। টবে পানি দিলে নিচের ছিদ্র দিয়ে বাড়তি পানি গড়িয়ে পড়বে। টব থেকে দূরে অল্প পরিমাণ পানি গড়িয়ে পড়লে ক্ষতি নেই। কারণ, রোদে-বাতাসে সেটা খানিক পরেই শুকিয়ে যায়, আবার পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা থাকলে সেখান দিয়েও পানি চলে যায়। তবে টবের ঠিক নিচের জায়গাটুকুতে পানি জমে থেকে যেতে পারে, যা শুকানোর বা গড়িয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ পায় না। তাই যে পাত্রেই গাছ রাখা হোক না কেন, যেখানে তা রাখবেন, টবটি স্থাপন করার আগেই সেখানে পানিরোধী ইপোক্সি পেইন্ট করিয়ে নিন। পানিরোধী রঙের বিকল্প হিসেবে ওই জায়গায় সিরামিক টাইলসও বসিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
অনেকে ছাদে মাটির ‘বেড’ করে গাছ লাগান। এ ক্ষেত্রে বেড তৈরির আগেই নেওয়া উচিত বিশেষ ব্যবস্থা। কয়েকটি স্তরে বেড তৈরি করতে হবে। প্রথমে ইট বিছিয়ে বেড তৈরি করে পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে (বেডের পার্শ্বের দিক বা বেডের দেয়ালজুড়েও)। এরপর আরেক স্তরের ইট বিছাতে হবে বেডের ওপর (এবং বেডের দেয়ালের ভেতরের অংশে)। এরপর একইভাবে (অর্থাৎ বেডের ওপর ও বেডের দেয়ালের ভেতরের অংশে) দিতে হবে সিমেন্ট কোটিং (সিমেন্টের আস্তরণ), আর সবশেষে একইভাবে করতে হবে পানিরোধী ইপোক্সি পেইন্টের স্তর।
ছাদ থেকে যদি ক্রমাগত পানি গড়িয়ে পড়ে ভবনের দেয়াল ঘেঁষে, তাহলে দেয়ালের রং চটে যেতে থাকে। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে একসময় রঙের স্তর একেবারেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, দেয়ালের গঠনগত ক্ষতিও হতে পারে। ছাদে এমনভাবে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে টবের বাড়তি পানি এবং বৃষ্টির পানিও পাইপ দিয়ে গড়িয়ে যায়। আর এ পাইপের পানি যেন ভবনের দেয়াল ঘেঁষে না পড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন।
ছাদবাগানের জন্য আরও কিছু টিপস দিলেন মুমানা ইসলাম—
জমাট পানিতে জন্মায়, এমন গাছ না করাই ভালো। তাতে মশার উপদ্রবের ঝুঁকি কমবে।
ছাদবাগানের একটা অংশে অন্য বাড়ি থেকে আড়াল পেতে নেট–জাতীয় কিছু বসিয়ে নিতে পারেন। এতে বেয়ে উঠুক লতানো কোনো গাছ। গাছও বাইতে পারবে, আপনিও পাবেন আড়াল, বসতে পারবেন পারিবারিক কিংবা একান্ত নিজের সময় কাটাতে।