বইবিষয়ক আধেয় বা কনটেন্ট তৈরি করেন অনেকেই। পড়ুন এমনই একজনের কথা।
বাসা থেকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা দেওয়া হতো। হাতখরচ নয়, বই কেনার জন্য। সেই টাকা নিয়ে নীলক্ষেতের দিকে রওনা হতেন অথৈ দাস। ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনীয় বইপুস্তক কিনতেন। একদিন অথৈর মনে হলো, ‘কী কী বই কিনলাম, এগুলো মানুষকে একটু দেখানো যাক।’ সেই শুরু। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের (ইইই) এই শিক্ষার্থী এখন নিয়মিতই হন ক্যামেরার মুখোমুখি। প্রতিনিয়ত বই কেনেন, পড়েন; পড়ে বইগুলো সম্পর্কে তুলে ধরেন নিজের অভিমত।
শুরুতে একটু দ্বিধা ছিল। আমি কি পারব, কোথাও ভুল হচ্ছে না তো—এই সংশয়গুলো কাজ করত। একসময় বুঝলেন, দ্বিধা ও সংশয় দূরে ঠেলে সাহস নিয়ে এগোতে হবে। অথৈ দাস বলছিলেন, ‘প্রথম প্রথম সবাই জিজ্ঞাসা করত—বই নিয়ে কী কাজ করো, বই নিয়ে আবার কী করা যায়? বাসা থেকে মনে করত, এটা আবার কী ধরনের কাজ। বই রিভিউ করে কী হয়! বইয়ের গল্প বলে কী হয়! তখন মানুষকে খুব একটা উত্তর দিতাম না। এখন হয়তো মানুষ বোঝে, বই নিয়ে কত কিছু করা যায়।’
‘বুকস অ্যান্ড মোর উইথ অথৈ’ নামের একটি ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল আছে এই শিক্ষার্থীর। নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেন তিনি। অথৈ অবশ্য ফেসবুকেই বেশি সক্রিয়। ফেসবুক পেজটিতে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, ৩৮ হাজার মানুষ তাঁকে অনুসরণ করছেন। ফেসবুক ও ইউটিউব মিলিয়ে এ পর্যন্ত শতাধিক ভিডিও আপলোড করেছেন তিনি।
মূলত সব ধরনের বই নিয়েই কনটেন্ট তৈরি করেন অথৈ। তাঁর কাজের বিশেষ দিক হলো, তিনি কখনো বই ‘রিভিউ’ করেন না। বই পড়ার পর গল্পটা কোথায় ও কীভাবে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত, সেটাই বলার চেষ্টা করেন। অথৈ দাস বলছিলেন, ‘পৃথিবীতে বই আপনাকে যা দেবে, অন্য কোনো কিছু তা দিতে পারবে না। এ জিনিসটা আমি বিশ্বাস করি। সেই জায়গা থেকে সব ধরনের বই-ই পড়া হয়। যে বই পড়ে মনে হয়, মানুষের সঙ্গে অনুভূতিটা ভাগাভাগি করে নেওয়া দরকার, সেটাই তুলে ধরি।’
শুরুর দিকে ভিডিও ধারণ ও সম্পাদনা সব একাই করতেন। এখন অথৈর একটা দল রয়েছে। এ দলটি পরিচালিত হয় ‘বুকস অ্যান্ড মোর’ নামে। এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বিবেকানন্দ দাস। এ ছাড়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের জাহিদুল ইসলাম, মিডিয়া অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের রাইসুল ইসলাম এবং কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের তাইফ সন্ধীও দলের সদস্য।
সামনে ‘আনফিল্টারড পডকাস্ট’ নামের একটা পডকাস্ট চালু করার কথা ভাবছেন তাঁরা। যেখানে সাহিত্য ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হবে। অথৈ দাস বলেন, ‘আমরা চাই, বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই যেন বইয়ের সঙ্গে বড় হয়। বিভিন্ন স্কুলে গল্প বলার আয়োজন করতে চাই। ইচ্ছা আছে উদ্যোগটা এগিয়ে নেওয়ার। জানি না কত দূর সম্ভব হবে।’