টাকাপয়সার ব্যাপারে ধনীরা যে অভ্যাসগুলো মেনে চলেন

নিজের মেধা আর পরিশ্রমে ধনী হয়েছেন অনেকে
ছবি: প্রথম আলো

অনেকের ধারণা টাকাপয়সা হয়তো উত্তরাধিকারসূত্রেই পাওয়া যায়, নয়তো কপালজোরে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক ধনী আছেন, যাঁরা মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং নিজের মেধা আর পরিশ্রমে অর্থশালী হয়েছেন। জমানো টাকা বিনিয়োগ করে নিজের মেধাবলে সেই টাকাকে বাড়িয়েছেন কয়েক গুণ। আর এভাবে যাঁরা সফল হয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে তাঁরা কিছু ভালো অভ্যাস মেনে চলেন। প্রাথমিকভাবে আপনার অর্থসম্পদের পরিমাণ যেমনই হোক না কেন, এসব অভ্যাসের চর্চা করে নিজের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারেন—

ঋণে জড়াবেন না

পারতপক্ষে ঋণ করবেন না। এই অভ্যাস করতে পারলে কয়েক মাসের ব্যবধানেই আপনার আর্থিক অবস্থার চিত্র বদলে যাবে। যদি সব সময় ঋণ নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, হোক সেটা ছোট বা বড়, অথবা ক্রেডিট কার্ডে; তাহলে এসব ঋণের কিস্তি বা সুদের হিসাব মিটিয়ে মাস শেষে আপনার হাতে জমানোর মতো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তাই তাৎক্ষণিকভাবে যতটুকু পরিশোধ করতে পারবেন, সেটুকুই খরচ করুন।

‘জরুরি তহবিল’ গঠন

জরুরি সময়ের জন্য প্রতি মাসে কিছু করে টাকা জমান

প্রতি মাসেই নিত্যকার খরচ বাদে কিছু টাকা আলাদা করে রাখা ভালো। বেশির ভাগ সফল মানুষ তাঁদের মাসিক খরচের বাইরেও বেতনের একটি অংশ জরুরি প্রয়োজনের জন্য আলাদা করে রাখেন। বিপদ তো আর বলেকয়ে আসে না! তাই দুর্দিনের জন্য সঞ্চয় থাকলে বিপদের সময়ও একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়তে হয় না। শুরুতে মনে হতে পারে, আয় করি মোটে কয়েক হাজার টাকা, সংসারই চলে না, জমাব কী! তবে আপনি যদি সেই কয়েক হাজার টাকা থেকে ১০০ টাকা করেও জমাতে থাকেন, দেখবেন একটা নির্দিষ্ট সময় পরে টাকার অঙ্কটা বড়সড় দেখাচ্ছে।

জেনেবুঝে বিনিয়োগ

আর্থিকভাবে সফল লোকজন সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করেন। হোক সেটা স্টক এক্সচেঞ্জ বা বন্ড বিনিময় ব্যবসা। তবে বিনিয়োগ করার আগে আপনাকে অবশ্যই ঝুঁকি নেওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। বিনিয়োগের জন্য ব্যয় করা টাকা পরে কখন আবার আপনার দরকার হতে পারে, লাভ-ক্ষতি কতটুকু হতে পারে; এসব হিসাব সূক্ষ্মভাবে করেই মাঠে নামতে হবে। এতে একধরনের মানসিক প্রস্তুতি থাকে।

আয় বুঝে ব্যয়

কেনাকাটা করতে গিয়ে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি

পৃথিবীর বেশির ভাগ ধনী মানুষের দর্শনই হলো আয় বুঝে জীবনযাপন। মানে নিজে যেটুকু আয় করেন, জীবনযাপন ব্যয় অবশ্যই তার চেয়ে কম হবে। লোকদেখানোর অভ্যাস তাঁদের মধ্যে থাকে না। সাধ্যের মধ্যেই তাঁরা জীবনের পরিপূর্ণ স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করেন।

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ

জীবনে উন্নতি করতে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং পূরণের জন্য আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করা খুব জরুরি। শুধু পরিকল্পনা করলেই হবে না, সেটার নিয়মিত পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। লক্ষ্যহীনভাবে এগোলে কখনোই কাঙ্ক্ষিত আশা পূরণ হবে না। তাই ছোট হোক, বড় হোক—একটা একটা করে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং তার জন্য সঞ্চয় করুন।

আয়-ব্যয় পর্যবেক্ষণ

যাঁরা সফল ও একই সঙ্গে ধনী, তাঁরা সব সময় নিজেদের আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যবেক্ষণ করেন। কেননা, আপনি যদি আপনার আয়ের পুরো অংশটা ব্যক্তিগত ভোগে ব্যয় করে ফেলেন, তাহলে সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করে কখনোই ধনী হতে পারবেন না। তাই একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বাইরে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকুন।

নগদ টাকা বহনের দরকার নেই, আবার নানা রকম ছাড়–সুবিধা থাকে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে। তাই কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে।

বাজেটের মধ্যে থাকা

টাকা ব্যয় করে ফেলাটা খুব সহজ। বিশেষ করে এই ডিজিটাল যুগে, যেখানে লেনদেন করার জন্য মানিব্যাগে টাকা থাকার দরকার পড়ে না। অনেক সময় বিকাশ, নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং ছাড়াও ডিজিটাল পেমেন্টের কারণে বাজেট ব্যবস্থাপনায় সহজেই খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন। তাই বড় লক্ষ্য পূরণে কিছুটা মানসিক স্থিরতা জরুরি। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যেই খরচের লাগাম টেনে রাখবেন।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া