তাঁর কাছে চুল কাটানোর খরচ শুরুই হয় ১ লাখ থেকে

আলিম হাকিমের নিজস্ব স্টাইলও বেশ নজরকাড়া
ছবি: আলিম হাকিমের ইনস্টাগ্রাম থেকে

কলেজজীবনে আলিম হাকিমকে যাঁরা ‘নাপিত’, ‘হাজাম’ বলে খ্যাপাতেন, তাঁরা এখন কোথায়?
তাঁরা কি জানেন, কলেজের সেই ‘আনস্মার্ট’ ছেলেটির সামনে ‘মাথা পেতে দিতে’ এখন সিরিয়াল নেন সালমান খান, আল্লু অর্জুন থেকে শুরু করে বিরাট কোহলিও।
হ্যাঁ, সোজা বাংলায় আলিম হাকিমকে নাপিত বলতেই পারেন, তবে তাঁর কাজটা শুধু চুল-দাড়ি-গোঁফ কাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট। ভারতে আলিমের প্রভাব কতখানি, সেটা তাঁর বয়ানেই শুনুন। ডিজিটাল ভিডিও প্রকাশক ব্রাট ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সালমান খান, সঞ্জয় দত্ত, সাইফ আলী খান, ফারদিন খান, সুনীল শেঠি, অজয় দেবগন, ২০ বছর ধরে তাঁরা সবাই আমার ক্লায়েন্ট। কোনো দিন আমাকে বদলাননি। অনেক দক্ষিণি অভিনেতাও আছেন।

জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গে আলিম

প্রভাস, রামচরণ, আল্লু অর্জুন, জুনিয়র এনটিআর, মহেশ বাবু, তাঁরা বহু বছর আমার কাছে আসেন। ১৫ বছর ধরে রজনীকান্ত স্যার আমার কাছে আসছেন।’

শুধু অভিনয়শিল্পীরাই নন, বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের কাছেও ভরসার নাম আলিম হাকিম।

ভারতীয় সিনেমার পরিচালকদেরও আলিম হাকিমকে ছাড়া চলে না। ব্রাট ইন্ডিয়াকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে আলিম দাবি করছেন, ‘৯৮ শতাংশ হিন্দি ছবিতে চুলের স্টাইলিং আমার করা।’ উদাহরণও দিয়েছেন তিনি, ‘“অ্যানিমেল”–এর রণবীর কাপুর, ববি দেওল, “কবির সিং”–এর শহীদ কাপুর, “ওয়ার”–এর হৃতিক রোশন, “স্যাম বাহাদুর” ছবির ভিকি কৌশল, “জেলার”–এর রজনীকান্ত, “বাহুবলী”তে প্রভাসের চুলের জন্যও অনেক প্রশংসা শুনেছি। দক্ষিণ, উত্তর, সব জায়গার সিনেমাতেই আমি আছি।’

আল্লু অর্জুনও ভরসা রাখেন আলিমের ওপর

যেভাবে উঠে আসা

চুল কাটা ছিল আলিমদের পারিবারিক ব্যবসা। বাবা নাপিতের কাজ করতেন। আলিমের ‘ট্রেনিং’ও শুরু হয়ে গিয়েছিল ৯ বছর বয়সে। সে সময় হঠাৎই বাবা মারা যান। পরিবারের দায়িত্বটা হঠাৎ করেই তখন ছোট্ট আলিমের কাঁধে এসে পড়ে। বাড়িতে দুই বোনও ছিল। কিন্তু মেয়েদের বাড়ির বাইরে কাজ করাকে লোকে তখন ভালো চোখে দেখত না। তাই পরিবারের দায়িত্ব নিতে নানা কাজ শুরু করেন আলিম।
তবে হেয়ারড্রেসার হওয়ার ইচ্ছা নাকি আলিম হাকিমের কখনোই ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন অভিনেতা হবেন। কলেজের থিয়েটারে টুকটাক কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু যত সময় গেছে, ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ কমেছে। শেষমেশ ঠিক করেন, বাবার পেশাতেই ফিরবেন।

বন্ধুদের ‘গিনিপিগ’ বানিয়ে শুরু হয় আলিমের হেয়ার স্টাইলিংয়ের যাত্রা। বাড়ির ব্যালকনিতেই একটি সেলুন খুলেছিলেন তিনি। আলিম বলেন, ‘ব্যালকনিতে তো আর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছিল না। ছোট্ট একটা ফ্যান ছিল। ওটুকুই সম্বল। পরে কিস্তিতে ৩০ হাজার রুপি দিয়ে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনার কিনি। মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে কিস্তি শোধ করতে হতো। যখন কিস্তি পুরোপুরি শোধ হয়ে গেল, তখন মনে হতো আমি বিরাট বড়লোক, আমার একটা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সেলুন আছে! নব্বইয়ের দশকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সেলুন মানে কিন্তু বিরাট ব্যাপার!’

হাকিম’স আলিম হেয়ার অ্যান্ড বিউটি লাউঞ্জ এখন বেশ জনপ্রিয় ব্র্যান্ড

কলেজে অনেকেই সে সময় ‘নাপিত’, ‘হাজাম’ বলে টিটকারি মারত। বিশেষ করে মেয়েরা। খারাপ লাগত, কিন্তু আলিম হাকিম হাল ছাড়েননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল, পেশাটাকে তিনি একটা ‘কুল ব্র্যান্ডে’ পরিণত করবেন। একসময় বন্ধুদের পাশাপাশি তারকারাও আলিমের কাছে হাজির হতে শুরু করেন।

তারকা নাপিত

একখানা এয়ারকন্ডিশনার কিনেই যিনি নিজেকে বড়লোক ভাবতে শুরু করেছিলেন, সেই আলিম হাকিম এখন কত টাকা আয় করেন? ধারণা পেতে পারেন তাঁর এই বক্তব্যে—‘আমার ফির হিসাব সহজ। এক লাখ রুপি থেকে শুরু।’
শুধু নামের কারণে তো নয়, কাজের মানের কারণেই সব তারকা আলিমের ওপর আস্থা রাখেন।

মাহেন্দ্র সিং ধোনি অনেক বছর ধরেই চুল কাটান আলিম হাকিমের কাছে

চুলের ধরনের কারণে যেমন ক্রিকেটার মাহেন্দ্র সিং ধোনি ও বিরাট কোহলি বেশ আলোচিত। এ দুই নিয়মিত গ্রাহকের সম্পর্কে আলিমের বক্তব্য, ‘মাহি (ধোনি) স্যার ও বিরাট, দুজনই আমার পুরোনো বন্ধু। অনেক দিন ধরে আমার কাছে আসেন। আইপিএল শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা চুলের কাটিং নিয়ে নানা নিরীক্ষা শুরু করি। বিশেষ করে বিরাট এ ব্যাপারে খুবই সচেতন। আমি তো বলব স্টাইল, ফ্যাশনের ক্ষেত্রে সে-ই নাম্বার ওয়ান। আর ধোনির কথা যদি বলি, আমার কাছে সে কোনো বলিউড অভিনেতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’