‘ব্যবসায়ীদের সচেতন করার জন্য কাউন্সেলিং করেছি’

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতা, লুটপাট হওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধার থেকে শুরু করে বাজার নিয়ন্ত্রণ, নানা কাজে যুক্ত হচ্ছেন তরুণেরা। দুজন শুনিয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা

বাজারে নজর রাখার কাজটা কঠিন

ভোক্তা অধিকার ও মূল্য নির্ধারণ দলের একজন হয়ে কাজ করেছেন শামিম

মো. শামিম খান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

আমি ভোক্তা অধিকার ও মূল্য নির্ধারণ দলে কাজ করেছি। সকাল আটটায় আমরা বরিশালের প্রাণকেন্দ্র রুপাতলী থেকে কার্যক্রম শুরু করি। ব্যবসায়ীদের সচেতন করার জন্য কাউন্সেলিং করি, বাজারের বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি ও খুচরা মূল্য জানতে চাই। জানতে পারি, কেজিপ্রতি আলু ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১১০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৭২ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা। তা ছাড়া অন্যান্য কাঁচামাল, মাছের দাম একটু বেশিই ছিল। পাইকারি হিসেবে তাঁরা কত টাকায় কিনেছেন, এমন হিসাব অধিকাংশ ব্যবসায়ী দেখাতে পারেননি। তবে বলছিলেন, ‘কেনা দামে বা গড়ে ৫-১০ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করছি।’ যদিও তাঁদের কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। আমরা তাঁদের সতর্ক করেছি, বুঝিয়েছি। অনেকে আমাদের সাহায্য করেছেন। অনেকে বিরক্ত হয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দাম কমবে। সে জন্য আড়তদার, পাইকারি বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খুচরা বিক্রেতারা যদি কম দামে কিনতে পারেন, তাহলে তাঁরা জনগণের কাছে কম দামে বিক্রি করতে পারবেন। ব্যবসায়ীদের জানিয়েছি, আমরা তাঁদের পাশে থাকতে চাই, সাহায্য করতে চাই। এক ব্যবসায়ী মাছ কিনেছেন ৪০০ টাকা কেজি দরে। ক্রেতাদের ভাষ্যমতে, তিনি ৭০০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। প্রথমে আমাদের সঙ্গে তর্কে জড়ালেও পরে তিনি চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। বাজারে নজর রাখার কাজটা কঠিন, কিন্তু আমরা এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। মানুষকে সচেতন করতে চাই।

সবার সঙ্গে কথা বলে মন্দির পাহারার দায়িত্ব নিই

মন্দির পাহারার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ইমন ও তাঁর বন্ধুরা

মোতালেব ইমন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই খবরটা চোখে পড়ে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমরা যখন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, তখন বিশেষ কিছু গোষ্ঠী বা মহল বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমার গ্রামেও হিন্দুধর্মাবলম্বীরা সংখ্যায় কম। গ্রামের নাম কিশমোত হোজা। রাজশাহীর দুর্গাপুরে, জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে আমাদের বাস। আমাদের গ্রামে যদি আসেন, দেখবেন নদীর পাশেই একটি ঐতিহাসিক কালীমন্দির। আছে শ্মশান, দুটি মসজিদ। মসজিদ আক্রান্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে সারা দেশে মন্দির আক্রান্ত হওয়ার খবর ফেসবুকে দেখে আমি, আমার কাজিন ও বন্ধুরা মিলে মন্দির পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেই রাতে মন্দির পাহারার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যখন কথা বলেছি, বেশ ভালো লেগেছে। তাঁরা বলছেন, ‘আমরা কৃষক। আমাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান আলাদা নয়।’ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের মানুষ যদি এমন অসাম্প্রদায়িক হতে পারেন, তাহলে সারা দেশের এমন হতে বাধা কোথায়? এখনই তো মানসিকতা বদলে ফেলার সময়।