দীর্ঘ এক জোড়া বাঁশ বা কাঠের লাঠি। মাঝখানে পা রাখার আড়াআড়ি ব্যবস্থা। তাতে পা রেখে লম্বা লম্বা কদমে হাঁটা যায়। এক পা ফেলা মানেই যেন দশ পা ফেলার সমান। নব্বই দশক বা তার আগে অনেক শিশু-কিশোরই এই খেলা খেলেছে। অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম। তবে ‘রণপা’ নামেই বেশি পরিচিত।
বর্তমানে বিনোদনের মাধ্যম হলেও প্রাচীন যুগে কিন্তু বিবিধ কাজে ব্যবহৃত হতো রণপা। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রাচীন গ্রিসে রাখালেরা গবাদিপশুর পাল নজরে রাখতে এটি ব্যবহার করত। এতে লাঠির ওপর দাঁড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যেত ভেড়া-বকরির পাল। নির্মাণশিল্পেও এর বহুল ব্যবহার ছিল। উঁচু উঁচু দালান তৈরির সময় নির্মাণসামগ্রী ওঠানো-নামানো, দেয়ালে আস্তরণ দেওয়া কিংবা রং করার মতো কাজগুলো করা হতো রণপা পরে।
ভারতীয় উপমহাদেশে লোকনৃত্যেও ব্যবহৃত হতো রণপা। লোকগবেষকেরা একে ‘যুদ্ধ নৃত্য’ বা ‘গোষ্ঠী নৃত্য’ বলে অভিহিত করেছেন। যুদ্ধের সময় শত্রুর মোকাবিলা, ডাকাতি শেষে দ্রুত পলায়ন, এমনকি দূতিয়ালির কাজেও ব্যবহৃত হতো রণপা।
তবে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে রণপায় হাঁটা। এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে রণপাশিল্পীরা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের আসামে এক সারিতে ৭২১ জন রণপায় হেঁটে গিনেস রেকর্ড গড়েছেন। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ইজ্জতপুরের হানিফ মিয়ার রণপায় হাঁটা শেখার একটা স্কুল রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো রণপায়ে হাঁটা মানুষের দেখা মেলে।
আজ ২৭ জুলাই রণপায় হাঁটা দিবস। কবে কীভাবে এর চল হয়েছিল জানা যায় না। তবে ছেলেবেলার স্মৃতিবিজড়িত, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী রণপার কথা মনে রেখে দিবসটি কিন্তু পালন করতেই পারেন।
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে