ভাজাপোড়ার বদলে ইফতারে কেন দই-চিড়া খাবেন

রমজান মাসের বাকি দিনগুলোয় স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে ইফতার করার চেষ্টা করুন। মডেল: মরিয়ম, লুবা ও বিপ্নু
ছবি: সুমন ইউসুফ

আমাদের দেশে ইফতারে অল্প করে হলেও ভাজাপোড়া খেতে পছন্দ করেন বেশির ভাগ মানুষ। তবে টানা ভাজাপোড়া খাওয়ার কারণে হতে পারে অ্যাসিডিটি, পেটের সমস্যাসহ নানা শারীরিক অসুবিধা। এভাবে খাওয়ার কারণে অনেক সময় ভালো খাবারের পুষ্টিগুণও আপনার শরীর পায় না। ১৫ রমজান তো শেষ। এত দিন যদি খেয়েও থাকেন, এবার ইফতারে ভাজাপোড়া ছাড়ুন। খেতে চেষ্টা করুন স্বাস্থ্যকর ইফতারি।

ডুবোতেলে ভাজা একটি মাঝারি আকারের পেঁয়াজু বা বেগুনিতে ৬০-৭০ ক্যালরি থাকে। আর ইফতারে আমরা এসব খাই একাধিক। এভাবে হিসাব করলে দেখা যাবে, বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার আমরা ইফতারি হিসেবেই খেয়ে ফেলি। সারা দিন না খেয়ে রোজা রাখার মাধ্যমে শরীরের অনেক উপকার হয়। তবে আপনি যখন রোজা ভেঙে অনেক খাবার খেয়ে ফেলবেন, তখন কিন্তু তা শরীরের জন্য আরও ক্ষতির কারণ হবে। তাই চেষ্টা করুন ইফতারের খাবার দুই ভাগে ভাগ করে খেতে। প্রথম ভাগে শুধু ১-২ গ্লাস পানি, খেজুর, যেকোনো একটি ফল খেতে পারেন। ইফতারের শুরুতেই চিনি, লবণযুক্ত পানীয় খাওয়া উচিত নয়।

দ্বিতীয় ধাপে, একটু বিরতি দিয়ে শরবত বা জুসজাতীয় পানীয় গ্রহণ করুন। সব পানীয় স্বাস্থ্যকর হবে, যদি চিনি ব্যবহার না করেন। পানীয় হতে পারে ফলের রস, লেবুপানি, বেলের শরবত, টক দই দিয়ে তৈরি লাচ্ছি, ডাবের পানি ইত্যাদি। পানীয়র সঙ্গে খেতে হবে ইফতারের প্রধান খাবার। ইফতারের প্রধান খাবারে প্রতিদিন একই ধরনের জিনিস না রেখে একেক দিন একেক ধরনের রাখার চেষ্টা করুন।

কী খাবেন ইফতারে

ভাজাপোড়ার বদলে ইফতারি হিসেবে খুজর ও ফলের রস খেতে পারেন

দই-চিড়া-কলা স্বাস্থ্যকর খাবার। ছোলা সেদ্ধ করে শসা-টমেটো দিয়ে মেখে খেতে পারেন। ইফতারে একদিন খেতে পারেন বাড়িতে তৈরি চিকেন-ভেজিটেবল স্যুপ। ফল-বাদাম-টক দই মিশিয়ে বানাতে পারেন সালাদ। টেস্টিং সল্ট বা কেচাপ বাদে সবজি-ডিম-চিকেন দিয়ে রান্না নুডলস বা পাস্তাও ভালো ইফতারি। সাবুদানা বা চিড়ার সঙ্গে ফল দিয়ে তৈরি কোনো ডেজার্ট বানিয়ে খেতে পারেন। বাড়িতে বানানো ফালুদা বা কাস্টার্ড রাখতে পারেন একদিন। কম তেল-মসলায় মুরগি দিয়ে রান্না করা একবাটি হালিম খেতে পারেন কোনো দিন। এগুলো সবই আবার এক দিনে খেতে যাবেন না। একেক দিন একেকটি খেতে পারেন। এ ছাড়া চাইলে ভাত বা রুটির সঙ্গে সবজি-মাছ বা মুরগি বা ডাল দিয়ে ইফতার সেরে নিতে পারেন। সঙ্গে রাখতে পারেন কিছু ফল বা সালাদ।

কেন খাবেন দই-চিড়া

চিড়া কার্বোহাইড্রেটের অন্যতম উৎস আর প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হিসেবে পরিচিত দই

চিড়া কার্বোহাইড্রেটের অন্যতম উৎস। প্রোটিন, খাদ্য আঁশ, জিংক, আয়রনের উৎস। এ ছাড়া এতে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। সারা দিন রোজা রাখার পর আমাদের শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করতে পারে এই চিড়া। সাদা চিড়ার পরিবর্তে লাল চিড়া খাওয়ার চেষ্টা করুন। দইকে বলা হয় প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক। প্রোটিনের উৎস এই দইয়ে থাকে ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস, এই ব্যাকটেরিয়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া দইয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংকের মতো উপকারী উপাদান। স্ট্রেস হরমোন ‘কর্টিসল’ উৎপাদন কমানোর মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে, অকালে মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। বিভিন্ন ছত্রাকজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রক্তচাপ ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। মিষ্টি দইয়ের পরিবর্তে টক দই বা বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত প্রোবায়োটিক দই খাওয়ার চেষ্টা করুন।

যাঁদের উচ্চর ক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের জন্য কলা আদর্শ ফল

ইফতারে কলা খেতে পারেন। দই-চিড়ার সঙ্গেও কলা রাখতে পারেন। পটাশিয়াম, খাদ্য আঁশ, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন-সি, খাদ্যশক্তি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ম্যাগনেশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজ উপাদানে ভরপুর একটি ফল কলা। যাঁদের উচ্চর ক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের জন্য কলা আদর্শ ফল। কেননা কলায় রয়েছে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান। হজমশক্তি বৃদ্ধি, ওজন কমানো, সুন্দর ত্বক, মানসিক প্রশান্তি, শরীর শীতল রাখাসহ আরও নানা উপকারী দিক রয়েছে এই ফলে।  সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে কলার জুড়ি
নেই। এই তিনটি খাবার একত্রে এনার্জি বুস্টার হিসেবে কাজ করে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ এই খাবার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান আমাদের সরবরাহ করে, শরীরকে রাখে শীতল। সে জন্য রমজান মাসে একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে এই দই-চিড়া-কলা।