‘আপনার রাশি’র শ্রুতলিখনের জন্য একসময় তাঁর ধানমন্ডির বাসায় নিয়মিত যেতেন ফজলে রাব্বী। ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট এক সাক্ষাৎকারে এই তরুণ ভক্তের কাছে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী।
জ্যোতিষচর্চা শুরু করলেন কীভাবে...
আমাদের পরিবারের সবার প্রচণ্ড পাঠাভ্যাস। বাবা, ভাইবোন সবাই ছিলেন পড়ার পাগল। আমার বড় ভাই যে বছর লন্ডন চলে গেলেন, সে বছর আমার বয়স ১১। তাঁর দুটি আলমারিবোঝাই নানা রকম বইয়ের সংগ্রহ ছিল। বড় ভাই জানতেন, ওই ইংরেজি বইগুলোর প্রতি রয়েছে আমার লোভ। তিনি তাঁর আলমারি দুটির চাবি আমাকে দিয়ে যান। আর একটি চিরকুটে লিখে যান, ‘এগুলো খুব কঠিন বই, তোমার বোঝার মতো নয়, ঝেড়েমুছে রাখবে, আস্তে আস্তে পড়ার অভ্যাস করবে।’
বইগুলোতে হাত দিয়ে আমি এক সেট বই পাই, যেগুলোর প্রচ্ছদে ছিল হাতের তালুর ছবি। তা দেখে আমি আমার বড় বোনকে জিজ্ঞাসা করলাম, বুবু, এগুলো কি ডাক্তারি বই?
বুবু হেসে বললেন, না, এগুলো ভাগ্য জানার বই।
সেই থেকে আমার মনে প্রচণ্ড কৌতূহল জাগে। এভাবে আমি উইলিয়াম জি বেনহ্যাম, নেড ব্যালেন্টাইনসহ আরও কয়েকজন বিখ্যাত জ্যোতিষীর বই পড়তে শুরু করি। তখন থেকেই প্রাপ্ত জ্ঞানের সঙ্গে নিজের এবং যাদের হাত পাই, মিলিয়ে দেখতে শুরু করি। এভাবে আমি হয়ে উঠি জ্যোতিষশাস্ত্রের এক নেশাগ্রস্ত শিক্ষার্থী। এরপর থেকে জীবনের যে ক্ষেত্রেই থাকি না কেন, জ্যোতিষশাস্ত্র তথা এর অন্যান্য শাখায় আমি পাঠ গ্রহণ করতে থাকি। সংক্ষেপে বলতে গেলে এভাবেই আমার শাস্ত্রটির পথে যাত্রা।
আপনি একজন সমাদৃত গীতিকবি। কবিতা, চিত্রনাট্যও লিখেছেন...
আমি আমার সেজ বোন নিলুফার চৌধুরীর কবিতা, গল্প ও গান দেখে প্রভাবিত হই। সেভাবে আমি গান লিখতে শুরু করি। প্রথম দিকে তো গান লেখার একটি ব্যাকরণ আছে তা জানতাম না। প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী খন্দকার ফারুক আহমেদ আমাকে এ ব্যাপারে কিছুটা গাইড করেন। তখন থেকে গান লেখাটা আমার প্যাশন হয়ে দাঁড়ায়। আমি প্রথমে বাংলাদেশ বেতারে এবং পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত গীতিকার হই।
১০-১১ বছর বয়স থেকে আগ্রহ হয় চলচ্চিত্র নির্মাণে। মোটামুটি ১৪–১৫ বছর বয়স থেকে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। ভাগ্য প্রসন্ন ছিল। ঢাকার সুইডিশ প্রজেক্টে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে চাকরি পেয়ে যাই। ওখানে নানা কাজের পাশাপাশি চিত্রনাট্য লেখা এবং শর্টফিল্ম পরিচালনার সুযোগ আসে। এরপর আমি দলেবলে বিভিন্ন দেশ থেকে ভিডিও চিত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণ নিই। এভাবে দেশে-বিদেশে আমি অজস্র প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করি। এভাবে মোটামুটি যৌথ নেশা নিয়ে পথ চলতে থাকি।
লাকী আখান্দ্ এবং আপনি ছিলেন মানিকজোড়। তাঁর সঙ্গে পরিচয় কীভাবে?
যতদূর মনে পড়ে গীতিকার এস এম হেদায়েত আমাদের দুজনকে পরিচয় করিয়ে দেন। লাকী আখান্দ্ আমার লেখা একটি গান শুনেছিলেন আলতাফ হোসেন বাবুর কণ্ঠে। রেডিওতে। গানটির মাঝখানে কটি লাইন ছিল—আঁচল বিছিয়ে বসেছিলে তুমি/ঝিলের প্রান্তটিতে/কণ্ঠ তোমার মুখরিত হলো/রবীন্দ্রসংগীতে...তখনো আমাদের পরিচয় হয়নি। লাকী আখান্দ্ বলেছিলেন, এই গীতিকারের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দাও। সেভাবে একরাতে কয়েকটি গান লিখে পরদিন লাকী আখান্দ্কে দিই। তখন লাকী আখান্দ্ তা শুনে আমার কাছে গান চান। যার মধ্যে ছিল—‘পলাতক সময়ের হাত ধরে’, ‘একঝাঁক প্রজাপতি ছিলাম আমরা’।
‘আমায় ডেকো না’, ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘মৌসুমী কারে ভালোবাসো তুমি’র মতো বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা আপনি। বিষয়টি ভাবতে কেমন লাগে?
খুব আনন্দ হয়। আমি সারা জীবন এক স্টেশনের টিকিট কেটে অন্য কোনো অজানা স্টেশনে নেমে গেছি। সেভাবে আমার চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ পিছিয়ে গেছে।
প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুও আপনার সঙ্গে কাজ করেছেন...
আইয়ুব বাচ্চুর অনেক গানের গীতিকার ছিলাম আমি। এর একটি হচ্ছে ‘এই রুপালি গিটার ফেলে’। তিনি গিটার বাজিয়ে ১৫–২০ মিনিটে গানটির সুর করেছিলেন। কোনো ভবিষ্যৎ ভেবে এই গান আমি লিখিনি। এটা ১৯৯০ দশকের গান। তিনি চেয়েছিলেন, সুরটি আরেকটু পরিমার্জন করবেন। আমি বলেছিলাম, সুর একটি সদ্য ফোটা গোলাপের মতো। তিনি কুমার বিশ্বজিৎকে খবর দিয়েছিলেন আসতে। বিশ্বজিৎও বলেন, এই সুরের ওপর আর ঘষামাজার দরকার নেই। বাকিটা তো ইতিহাস...
সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
তোমাকেও ধন্যবাদ।