বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) উপাচার্য মো. ফৈয়াজ খান-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাইফুল্লাহ
আগামী জানুয়ারি থেকে বিইউবিটি পুরোপুরি সেমিস্টার পদ্ধতিতে চলে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কীভাবে উপকৃত হবেন বলে মনে করেন?
কয়েকটি প্রোগ্রাম এবং বিশেষত জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের জন্য ট্রাইমিস্টার পদ্ধতিটা আংশিকভাবে চালু ছিল। তবে ১ জানুয়ারি থেকে আমরা পুরোপুরি সেমিস্টার পদ্ধতিতে চলে যাব। সেমিস্টারের সুবিধা হলো, শুধু ক্লাসরুমেই শিক্ষার্থীদের ১৭ থেকে ১৮ সপ্তাহ পাঠদানের সুযোগ থাকে। ট্রাইমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষাসহ সময় পাওয়া যেত ১৪ থেকে ১৫ সপ্তাহ। আর সেমিস্টার পদ্ধতিতে শুধু শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও পাঠদানের সময় পাওয়া যাচ্ছে ১৭ থেকে ১৮ সপ্তাহ। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ইন্টারেকশনের সময়টা বাড়ছে। শিক্ষকেরা প্রতিটি বিষয় আরও গভীরভাবে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে পারবেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও কম চাপ অনুভব করবে। আগে দেখা যেত, সেমিস্টার শুরু হতে না হতেই ক্লাস টেস্ট, ভাইবা, মিডটার্ম চলতে থাকত। তারপর আবার অল্প সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দেওয়া, প্রেজেন্টেশনের বাধ্যবাধকতা। এখন শিক্ষার্থীরা সময় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে, বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদানের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে?
নিশ্চয়ই। যেহেতু সময় কিছুটা বেশি পাওয়া যাচ্ছে, এই সময় আমরা ভালোভাবে কাজে লাগাতে চাই। সেমিস্টারের শেষ সপ্তাহটাকে আমরা বলছি ‘ইনকিউবেশন উইক’। প্রতিটি কোর্সেই ইনকিউবেশন উইক থাকবে, যেখানে শিক্ষার্থী নিজেদের নতুন নতুন ভাবনা বা আইডিয়া উপস্থাপনের সুযোগ পাবে। ধরুন ইংরেজির একটা কোর্স শেষ হলো। শিক্ষকের কাজ হবে, এই কোর্স–সংক্রান্ত নতুন নতুন আইডিয়া উপস্থাপনে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে বলে আমি আশা করছি। শুধু পাঠদান নয়, শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করাও কিন্তু একজন শিক্ষকের প্রধানতম কাজ।
আপনি কিছুক্ষণ আগে সহশিক্ষা কার্যক্রমের কথা বলছিলেন। এ ক্ষেত্রে বিইউবিটির শিক্ষার্থীদের উৎসাহ কেমন?
আমাদের ১৭টি ক্লাব আছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের জন্য এই ক্লাবগুলো যথেষ্ট অবদান রাখছে। জানিয়ে রাখি, সরকারের আদেশক্রমে আমাদের এখানে সমাজসেবামূলক দুটি দল গঠন করা হয়েছে—রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম রোভার স্কাউট দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। সম্প্রতি আমাদের রোভার স্কাউটের এক যুগ পূর্তি হলো। প্রচুর শিক্ষার্থী এই দুই স্বেচ্ছাসেবক দলে যোগ দিয়ে সমাজকল্যাণে ভূমিকা রাখছে। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। বছরখানেক আগে ক্যাম্পাসের কাছেই একটা বস্তিতে ভয়ানক আগুন লেগেছিল। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে আমাদের রোভার স্কাউটের সদস্যরা অগ্নিনির্বাপণে সাহায্য তো করেছেই, পরে আক্রান্ত মানুষকে খাবারও পৌঁছে দিয়েছে। কোভিডের সময়ও আমাদের এই স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। অন্য ক্লাবগুলোতেও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আশাব্যাঞ্জক।
কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা এশিয়ার ঢাকা পর্বের আয়োজন হলো বিইউবিটিতে। ইদানীং প্রোগ্রামিংয়ের ক্ষেত্রে আপনারা বেশ জোর দিচ্ছেন মনে হলো।
নিশ্চয়ই। বিইউবিটির প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব তো আছেই। এ ছাড়া আমাদের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে একটা বাধ্যতামূলক কোর্স চালু আছে, যাকে আমরা বলছি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোগ্রামিং, সংক্ষেপে এসডিপি। যার ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিংয়ের ওপর একটা অতিরিক্ত দক্ষতা অর্জন করতে পারছে। আইসিপিসির ঢাকা পর্বে আমাদের শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটা দল খুব ভালো করেছে। একটি দল পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে ফাইনালে অংশগ্রহণের জন্যও মনোনীত হয়েছে। এটা নিশ্চয়ই ইতিবাচক। সামনে ওরা আরও ভালো করবে বলে আশা করছি।
গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিইউবিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কীভাবে ভূমিকা রাখছেন?
বিইউবিটি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টারের তত্ত্বাবধানে আমাদের গবেষণা ও উদ্ভাবনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। আমাদের একটা আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) ল্যাব আছে, যেখানে কৃষি খাত থেকে শুরু করে জননিরাপত্তাসংক্রান্ত বেশ কিছু প্রকল্প চলমান। সরকারের আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা ক্যাম্পাসে মুঠোফোনের অ্যাপস ও গেমিং ল্যাব স্থাপন করেছি। সেখানেও নানা রকম মুঠোফোনের অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া শেষ বর্ষে আমাদের সব শিক্ষার্থীকেই প্রোজেক্ট সম্পন্ন করতে হয়। শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ওরা প্রোজেক্ট করে। এসব প্রোজেক্ট থেকে আমরা কিন্তু বেশ সুফল পাচ্ছি। বেশ কয়েকটি প্রোজেক্টই ভালো মানের জার্নালে স্থান পেয়েছে। গবেষণার জন্য আগে আমাদের অনুদানের পরিমাণ ছিল বছরে ৪৫ থেকে ৫৫ লাখ টাকা। সেটিকে আমরা ৭৫ লাখে উন্নীত করেছি। সামনে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা আছে।
২০২৪ সালে বিইউবিটির লক্ষ্য কী হবে?
আমরা চাই, দেশের শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের জায়গা হবে বিইউবিটি। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সামনে রেখে বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল রেখেই কিন্তু আমরা আমাদের সিলেবাস ঢেলে সাজাচ্ছি। যেমন কম্পিউটারবিজ্ঞানে ডিপ লার্নিং, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইনের মতো বিষয় পড়ানো হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের আমরা এসব বিষয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করছি। আমাদের আইন, বিবিএসহ অন্যান্য বিভাগেরও বেশ সুনাম আছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়, চাকরির ক্ষেত্রে বিইউবিটির শিক্ষার্থীরা বেশ ভালো করছে। অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কিন্তু বিইউবিটির টিউশন ফি কম। সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের কম খরচে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা বছরে প্রায় চার কোটি টাকার বৃত্তি ও টিউশন ওয়েবার দিই। ২০২৪ সালে এই বৃত্তির পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।