জীবনের বিভিন্ন ধাপে প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধনে জড়াই। কিছু কিছু সম্পর্ক আপনার সারা জীবনের সম্পদ হয়ে থাকে। আবার কিছু সম্পর্ক দিনশেষে ঠকায়, রেখে যায় অবিশ্বাস আর মানসিক ট্রমা। অনেককেই আফসোস করে বলতে শোনা যায়, ‘ইশশ, লোকটা যে এমন, যদি আগে বুঝতাম!’ যদি আগেই একটা মানুষের চরিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, সেটি হয়তো আপনাকে ভবিষ্যতে কোনো অঘটন থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। মানুষকে কি কখনো শতভাগ চেনা যায়? উত্তর হলো, না। একটা মানুষকে কখনোই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারবেন না। এমনকি নিজের ক্ষেত্রেও সেটি সম্ভব নয়। তবে কিছু বিষয় থেকে একটা মানুষের সম্পর্কে আপনি সহজেই ধারণা পেতে পারেন।
১. একসঙ্গে ভ্রমণ
একটা মানুষের সঙ্গে ভ্রমণ করলে আপনি সেই মানুষটার সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে পারেন। তাঁর অভ্যাস, জীবনযাপন, পছন্দ–অপছন্দ, অর্থনৈতিক অবস্থা, রুচি, কঞ্জুস নাকি হাতখোলা—ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা মিলবে।
২. টাকা ধার
একটা মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের মাঝে যখনই ‘অর্থ’ বিষয়টি চলে আসে, তখন ওই মানুষটি প্রকৃতপক্ষে কেমন, তা বোঝা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। মনে করুন, আপনার একজন ধনী বন্ধু আছে। তবে আর্থিক সংগতি থাকা সত্ত্বেও সে আপনার বা দেশের মানুষের দুর্দিনে পাশে দাঁড়াল না। তাহলে সে কেমন বন্ধু? কেমন মানুষ? একটা মানুষের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করলেও সময়ের সঙ্গে তাঁর প্রকৃত চরিত্র বের হয়ে আসে।
৩. রেগে গেলে ওই মানুষটি কী করেন
একটা মানুষ যখন স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, তখন তাঁর আচরণ স্বাভাবিকই থাকে। রেগে গেলে ওই মানুষটি কেমন আচরণ করে, তা দিয়ে বোঝা যায়, মেজাজের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ কেমন। কেননা বেশির ভাগ মারামারি, হানাহানি, বিচ্ছেদ—এগুলো হয় রাগের মুহূর্তে নিজেকে সংযত রাখতে না পারার কারণে।
৪. ওই মানুষটির সঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকা
একটা মানুষের সঙ্গে ১০ বছর প্রেম করে আপনি তাঁর সম্পর্কে যতটা না জানতে পারবেন, ১০ দিন এক ছাদের নিচে থেকে তাঁকে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন।
৫. যখন আপনি বিপদে পড়েন
বিপদে বন্ধুর পরিচয়। মনে রাখবেন, যে মানুষটি আপনার দুঃসময়ে কোনো প্রয়োজনে কাজে আসে না, তাঁকে আপনার জীবনে কোনো প্রয়োজন নেই।
৬. মানুষটি তাঁর অধস্তনদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন
অর্থ, ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা, পোশাক, কোন এলাকার মানুষ, কোন ধর্মের মানুষ, কোন বংশ, কী চাকরি করে, গায়ের রং, উচ্চতা, দেশ, কত টাকা বেতন পায়—এগুলো কখনোই মানুষকে বিচারের মাপকাঠি হতে পারে না। একটা মানুষ তাঁর অধস্তন যেমন বাড়ির সহকারী, কাজের সহকারী, অফিসের নিচের পদের কর্মী, কর্মচারী, গাড়ির চালক, মালি, পিয়ন—তাঁদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন, তা ওই মানুষের চরিত্রের একটা মানদণ্ড।
৭. এ ছাড়া যে মানুষগুলো ‘রেড ফ্ল্যাগ’
যে কখনো পরাজয় স্বীকার করে না। অহংকারী, স্বার্থপর, লোভী ও অসৎ মানুষদের থেকে দূরে থাকুন।
যে কখনো যুক্তিতে হারতে চায় না।
যে আপনার কথা মন দিয়ে শোনে না, গুরুত্ব দেয় না।
যে সব সময় নিজের ক্ষমতা ‘শো অফ’ করার চেষ্টা করে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
‘তালগাছটা আমার’ মনোভাবের মানুষ। শেষ কথাটা সব সময় তাঁরই হবে, এমন মানুষ।
অন্যকে সম্মান দেখানো দুর্বলতা মনে করে এমন মানুষ।
অন্যকে ছোট করে কথা বলে।
মানুষের দুর্বল জায়গায় আঘাত করে কথা বলে।
অন্যের ভুল ধরার জন্য বসে থাকে। অন্যকে ভুল প্রমাণ করে, ছোট করে আনন্দ পায়।
এসব মানুষের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্কে থাকার চেয়ে বরং নিজের ‘সার্কেল’ ছোট রাখুন। কেননা আপনার মানসিক শান্তি, অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন, এমনকি আপনার চিন্তাভাবনাও অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কাদের সঙ্গে মেশেন, আপনার সেই ‘চয়েস’–এর ওপর।
সূত্র: মাইন্ডসেট রিডিং—এর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল