‘আই হেইট পলিটিকস’ প্রজন্ম, মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকা প্রজন্ম, কেবল ‘আমি-আমি’ করা প্রজন্ম—আরও কত কী ‘অপবাদ’ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। অথচ এই কিশোর-তরুণেরাই জেগে উঠেছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলনের শুরু, এখন তা রাষ্ট্র সংস্কারের পথে এগোচ্ছে। কী সংস্কার চান তাঁরা? কোন কোন ক্ষেত্রে কী পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন?
আদনান আহমেদ, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
এমন এক বাংলাদেশ চাই, যেখানে ক্ষমতাসীনদের প্রতি মানুষের থাকবে অগাধ আস্থা। প্রশাসনে থাকবে স্বচ্ছতা এবং শিক্ষাব্যবস্থা হবে আধুনিক বিশ্বের মতো প্রগতিশীল ও অপরাজনীতিমুক্ত। সেই নতুন বাংলাদেশে দুর্নীতি, ঘুষ প্রথা ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান থাকবে না। মানুষ তার মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে, ক্ষমতাসীনরা তা সাদরে গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে। ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি থাকবে। ছোট-বড় সব প্রকল্পে স্বচ্ছতা থাকবে। ধর্ম-বর্ণ–নির্বিশেষে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানবিকতার স্নিগ্ধ স্পর্শ, সংলাপের সুসমন্বয় এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে শান্তিতে পুনর্জীবিত হোক আমার সোনার বাংলা, এটাই চাওয়া।
নাজিফা তাজনুর, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতার পর যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, পুলিশ-প্রশাসন-বিচার বিভাগ তাদের চাটুকারে পরিণত হয়েছে। অর্থের ঝনঝনানিতে চাপা পড়েছে ন্যায়বিচারের ক্ষীণকণ্ঠ। একজন সাধারণ মানুষ ধনী ক্ষমতাবানের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কখনো ন্যায়বিচার পায়নি। বরং আরও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। আমি চাই দেশে আইনের নিরপেক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। ক্ষমতায় যে-ই বসুক, সাধারণ মানুষ যেন তার দিকে নির্ভয়ে আঙুল তোলার স্বাধীনতাটুকু পায়। সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেন জবাবদিহির আওতায় থাকেন। প্রায়ই দেখি, বিরোধীদলীয় নেতারা ক্ষমতাসীনদের যেসব কাজের সমালোচনা করেন, ক্ষমতায় এলে তাঁরাই সব ভুলেটুলে একই কাজে নেমে পড়েন। ক্ষমতা মানুষকে পাল্টে দেয়। আমরা আর পাল্টে যাওয়া মুখোশ পরা মানুষ দেখতে চাই না। আমরা চাই হৃদয়বান নেতা। একজন অনাহারী মানুষ নেতার কাছে ছুটে এলে তিনি যেন গাড়ির কাচ নামিয়ে তার ব্যথার কথা শোনেন। একাত্তরের পর, স্বৈরাচার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯০, ১৯৯৬ ও ২০০৮-এ বিপুল গণজোয়ার দেখেছে দেশ। প্রতিবার তারুণ্যের শক্তিতে, আত্মত্যাগে রাজপথ উত্তাল হয়েছে, বিজয় এসেছে। কিন্তু সেই বিজয়কে কোনোবারই আমরা ধরে রাখতে পারিনি। বারবার দুর্নীতি, ঘুষ, অর্থ পাচার আর ঋণ খেলাপের জাঁতাকলে পড়েছে দেশ। এইবার, অন্তত এইবার, যুগ বদলাক। মানুষ বাঁচুক মানুষের মতো করে। শান্তিতে, স্বস্তিতে আর ভালোবাসায় বেঁচে থাকুক মানুষ।
ফারদিন হাসান, আইন বিভাগ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরে একটা শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব সিন্ডিকেটগুলোতেও পড়েছে। অতীত ইতিহাস দেখে বলাই যায়, সরকার দাঁড়িয়ে গেলে সিন্ডিকেটগুলো আবারও নতুনরূপে ফিরে আসবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা অন্তত সেটাই বলে। কিন্তু এই নতুন বাংলাদেশে, আমি নতুন স্বপ্ন দেখতে চাই৷ আমি চাই, সবার আগে সরকার এই সিন্ডিকেটের ওপর হাত দিক। যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, তা যেন কেউ পূরণ না করে, বরং পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়৷ দেশে অনেক উন্নয়ন হয়তো হবে, বিরাট বিরাট সব পরিবর্তন হয়তো আমরা দেখব। কিন্তু তার আগে আমি এমন এক বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবে, স্বস্তি নিয়ে বাজার করতে পারবে মানুষ। বাজারে পা রেখে যেন কারো মনে না হয়—আমাকে ঠকানো হচ্ছে।