পড়ুন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আবেদীন–এর সাক্ষাৎকার
আপনি এআইইউবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। যে লক্ষ্য নিয়ে আপনারা এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়েছিলেন, তার কতটুকু অর্জন হয়েছে? শুরুর দিকে আপনাদের ভাবনা কী ছিল?
শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ডা. আনোয়ারুল আবেদীন ১৯৯৪ সালে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু থেকেই এ ইউনিভার্সিটি ভিন্ন ও স্বতন্ত্র ধারায় দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছে। বর্তমানে এআইইউবির স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানে বদ্ধপরিকর। শিক্ষার্থীরা যেন দেশে বসেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করে স্নাতক হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন, সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই এআইইউবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এআইইউবি থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটরা বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করার পাশাপাশি দেশে-বিদেশে বহুজাতিক কোম্পানির উচ্চতর পদে চাকরি করছেন। গ্র্যাজুয়েটদের অনেকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে, কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের আরও এগিয়ে দিতে আধুনিক, আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর–সংবলিত আধুনিক শ্রেণিকক্ষ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি–সংবলিত ল্যাবরেটরি তৈরি করেছি। এআইইউবির বিভিন্ন একাডেমিক প্রোগ্রাম আন্তর্জাতিক ও দেশি অ্যাক্রেডিটেশন সংস্থা পিএএএসসিইউ, আইইবি, আইএবির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আন্তর্জাতিক অ্যাক্রেডিটেশন সংস্থা এএসিএসবি ও এসিবিএসপির সদস্যপদ অর্জন করেছে। শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষাদানের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ শিক্ষক, যাঁরা ন্যূনতম মাস্টার্স ও বেশির ভাগই পিএইচডি ডিগ্রিধারী। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদ আছে। যেখান থেকে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণ করে বেশির ভাগ ডিগ্রিধারী দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে চলেছেন।
২০২৪ সাল শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী বছরে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনাদের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?
এআইইউবির আছে নিজস্ব ভিশন, মিশন ও গোল। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য, যেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সর্বত্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন। এ লক্ষ্যে সময়োপযোগী নতুন প্রোগ্রাম শুরুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফার্মেসি, যন্ত্রকৌশল, বায়োকেমিস্ট্রি, অণুজীববিজ্ঞান, ডেটা সায়েন্স, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং ও চারুকলা বিভাগ খোলার কাজ চলছে। বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে আনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে গবেষণাসহ প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশের আরও উন্নয়ন করা হচ্ছে; যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করবে। পাশাপাশি আধুনিক, জুতসই ও টেকসই কর্মপরিবেশকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।
এআইইউবির স্নাতকেরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। অ্যালামনাইদের নিয়ে কোনো সক্রিয় নেটওয়ার্ক কি আপনাদের আছে?
এআইইউবি প্রতিষ্ঠার ২৯ বছর পূর্ণ করেছে। এখন পর্যন্ত ২১টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দীর্ঘ যাত্রায় এআইইউবি থেকে ৩৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁরা সরকারি-বেসরকারি চাকরি, ব্যবসা, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলছেন। এআইইউবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মধ্যে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। গুগলের প্রথম বাংলাদেশি প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (পরিচালক) জাহিদ সবুর ও এআইইউবির বর্তমান সহ–উপাচার্য মো. আব্দুর রহমান। এআইইউবির গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে সক্রিয় নেটওয়ার্ক এআইইউবি অ্যালামনাই সোসাইটি আছে। এই সোসাইটি বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য সিভি রাইটিং ও ভাইভা প্রস্তুতির অনলাইন-অফলাইন কর্মশালার আয়োজন করে। এআইইউবি অ্যালামনাই সোসাইটি শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে। ‘জব ফেয়ার’ থেকে শুরু মিলনমেলার আয়োজনও করে। ফলে সক্রিয় নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। অ্যালামনাইয়ের সদস্যরা শ্রেণিকক্ষে, সেমিনারে, ক্যাপস্টোন প্রজেক্টে, লেকচার সিরিজে অংশগ্রহণ করছেন। পাঠ্যক্রম কমিটি, শিল্পখাতবিষয়ক পরামর্শক দলেও তাঁরা আছেন।
আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাঙ্কিংয়ে এখনো খুব ভালো অবস্থানে যেতে পারেনি। এ জন্য সামগ্রিকভাবে কী কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত মেনে চলতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্রুত নীতিমালা করা উচিত, যেন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। বিদেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াও জরুরি। গবেষণার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোও প্রয়োজন। শিক্ষায় বরাদ্দ মানে খরচ নয়, বরং বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। এই ভাবনা থেকে শিক্ষায় বরাদ্দের হার বাড়াতে হবে। তাহলে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়ন সম্ভব। একাডেমিক খ্যাতি, চাকরির বাজারে সুনাম বাড়াতে হলে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। গবেষণা খাতে বরাদ্দ থাকে নিতান্তই অপ্রতুল। যতটুকু থাকে, তা–ও সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় না বা যায় না। অর্থাৎ একাডেমিক খ্যাতি, চাকরির বাজারে সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, শিক্ষকপ্রতি গবেষণা, আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও মনোযোগী হতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে মানকে প্রাধান্য দিতে হবে।
গবেষণায় এআইইউবি কতটা গুরুত্ব দেয়?
এআইইউবি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এআইইউবির গবেষণা প্রকাশের জন্য আছে এআইইউবি জার্নাল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস, এআইইউবি জার্নাল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, এআইইউবি ফ্যাকাল্টি জার্নাল। গবেষণার জন্য ডা. আনোয়ারুল আবেদীন ইনস্টিটিউট অব ইনোভেশনের অধীনে আছে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল এনার্জি রিসার্চ সেন্টার, সেন্টার ফর ন্যানোটেকনোলজি রিসার্চ, সেন্টার ফর বায়োমেডিকেল রিসার্চ, সেন্টার ফর রোবোটিকস অ্যান্ড অটোমেশন, বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার। আছে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (এআইইউবি-আইকিউএসি)। নিয়মিতই গবেষণাভিত্তিক সেমিনার-লেকচার সিরিজ আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী ১০ বছরের কার্যক্রমের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে গবেষণার উন্নয়ন।