দুরন্তপনা শৈশবেরই বৈশিষ্ট্য। ছোটাছুটি, দৌড়ঝাঁপ, খুনসুটি, এমনকি খানিক ঝগড়া বা মারামারিও শৈশবের স্বাভাবিকতা। কিন্তু কোনো কোনো শিশুর মধ্যে এই মারামারির প্রবণতা একটু বেশি দেখা যায়। অনেক সময় অভিভাবকেরা বুঝিয়ে বললেও কোনো কাজ হয় না।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিশু–কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. টুম্পা ইন্দ্রাণী ঘোষ বলছিলেন, প্রতিটি শিশুর বৈশিষ্ট্য আলাদা। জিনগত এবং পরিবেশগত নানান বিষয়ের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে শিশুর আচরণগত বৈশিষ্ট্য। তাই কোনো শিশুর মধ্যে কখনো আগ্রাসী মনোভাব বা মারামারির প্রবণতা দেখা দিলেই তাকে ‘খারাপ’ কিংবা ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ আখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই। বরং এমন আচরণের পেছনে কী কারণ রয়েছে, খুঁজে বের করা জরুরি।
খেলার ছলে অল্পবিস্তর মারামারি করাটা খারাপ কিছু নয়। এমন খেলা শিশুর বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তাই খেলার ছলে শিশুদের মারপিট করতে দেখলেই যে তাদের থামাতে হবে, তা কিন্তু নয়। অভিভাবক হিসেবে আপনাকে বুঝতে হবে তাদের মারামারির ধরন। শিশুর মারামারির প্রবণতা অস্বাভাবিক কিছুর লক্ষণ কি না, তা জানতে হলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় সমস্যা?
খেয়াল করে দেখুন, কখন কোথায় অতিরিক্ত মারামারির প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। কেবল খেলার জায়গার টুকটাক মারামারি কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। বাড়ি আর স্কুলে শিশু কী করছে, খেয়াল রাখুন। আবার যদি কেবল স্কুলেই এ প্রবণতা দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে, শিশু স্কুলের পরিবেশে কোনো একটা সমস্যা আছে। কেবল বাড়িতেই এ প্রবণতা দেখা দিলে বুঝতে হবে, বাড়িতে কোনো কিছু নিয়ে অশান্তিতে আছে সে।
শিশুর মধ্যে নানা কারণেই হতাশা কাজ করতে পারে। অনেক অভিভাবক এটা মানতেই রাজি নন যে ছোট্ট শিশুর মনে কোনো কিছু নিয়ে হতাশা কাজ করতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো আপনার সোনামণিকেও কুরে কুরে খেতে পারে হতাশা। সেখান থেকেও সৃষ্টি হতে পারে আগ্রাসী মনোভাব। স্নেহ-আদর থেকে বঞ্চিত শিশুও হয়ে উঠতে পারে আগ্রাসী। তাই মনোযোগী হোন শিশুর মনের প্রতি। শিশু যদি সব জায়গাতেই অতিরিক্ত মারামারি করতে উদ্যত হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, হয়তো সে সত্যিই কোনো মানসিক সমস্যায় আছে।
আরও যা বিবেচনায় রাখতে হবে
খেয়াল করুন, মারামারি মারাত্মক রূপ নিচ্ছে কি না। কিংবা মারামারি করতে গিয়ে কাউকে আঘাত করছে কি না। খেলার মাঝে স্বাভাবিক মারামারিতে কিন্তু এমনটা ঘটে না।
পরিবারের কেউ শিশুর সামনে আগ্রাসী আচরণ করেন কি না, সেটিও বিবেচ্য বিষয়। শিশু যদি ঝগড়াবিবাদ বা মারপিট দেখতে দেখতেই বেড়ে ওঠে, তাহলে সে আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন করতে পারে।
শিশুকে অতিরিক্ত শাসন করলেও এমনটা হতে পারে।
যা করতে পারেন
অভিভাবক হিসেবে আপনি শিশুকে বোঝাতে পারেন, মারামারি করা ভালো অভ্যাস নয়। খেলার ছলে মজার মারামারি পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু এর চেয়ে বেশি যাতে সে না করে, সেটি বুঝিয়ে বলুন। কাউকে আঘাত দেওয়াটা ঠিক নয়, তা–ও বুঝিয়ে বলুন।
শিশু কোনো সমস্যায় আছে কি না, এ বিষয়ে শিশুর সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করুন। মন দিয়ে শিশুর কথা শুনুন। শিশুর আস্থা অর্জন করুন। তার কোনো সমস্যাকে আপনার কাছে ‘বোকা বোকা’ ব্যাপার মনে হতেই পারে। কিন্তু সেটিকে উড়িয়ে দেবেন না। বরং তাকে বড় পরিসরে ভাবতে শেখান।
শিশুর সামনে কোনো ধরনের আগ্রাসী আচরণ প্রদর্শন করবেন না।
সব প্রচেষ্টার পরেও সমস্যার সমাধান না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।