ত্বকের অ্যালার্জির কারণে মৃদু চুলকানি থেকে শুরু করে প্রাণসংহারী অ্যানাফাইলেক্সিস পর্যন্ত হতে পারে। আমরা যেকোনো চুলকানি বা র্যাশকেই অ্যালার্জি বলে অভিহিত করলেও আসলে ত্বকে নানা ধরনের অ্যালার্জিজনিত রোগ হতে পারে। এর একেকটার বিশেষত্ব একেক রকম, চিকিৎসাতেও আছে ভিন্নতা।
ত্বকের অ্যালার্জিক রোগগুলো হলো কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস, একজিমা, আরটিকেরিয়া, অ্যানজিওইডিমা ইত্যাদি।
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস: ধুলাবালু, নিকেলের গয়না, উল বা কৃত্রিম তন্তুর পোশাক, প্রাণীর লোম, কোনো উদ্ভিদ, বিশেষ রাসায়নিকযুক্ত ক্রিম, লোশন, সাবান ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে কারও ত্বক লাল হয়ে যায়, চুলকাতে থাকে, জ্বালা করে, জায়গায় জায়গায় ফুলে যায়। ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শে এলে এটি হয় বলে নাম কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। অনেক সময় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া না হয়ে ১২ ঘণ্টা থেকে ৩ দিনের মধ্যে হতে পারে।
একজিমা: একজিমা সাধারণত শিশু বয়স থেকেই শুরু হয়। রাসায়নিক, ডিটারজেন্ট, ধুলাবালু বা পশুপাখির মলমূত্রের সংস্পর্শে এলে ত্বক লাল হয়ে যায়, শুষ্ক হয়ে পড়ে, কখনো ফেটে ফেটে যায় ও চুলকায়।
আরটিকেরিয়া বা হাইভস: সাধারণত কোনো খাবার, ওষুধ বা পোকামাকড়ের কামড় থেকে এই সমস্যা হয়। ত্বকের জায়গায় জায়গায় ফুলে ওঠে, প্রচণ্ড চুলকায়।
অ্যানজিওইডিমা: ত্বকের গভীর অংশে প্রদাহ হলে তাকে বলে অ্যানজিওইডিমা। এটি গুরুতরও হতে পারে। ফুলে যেতে পারে চোখ ও মুখ।
ঠিক কোন অ্যালার্জেন বা খাবার বা বস্তু অ্যালার্জির জন্য দায়ী, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে প্রয়োজন সতর্ক ইতিহাস পর্যালোচনা আর কিছু পরীক্ষা। যেসব দিনে আপনার ত্বকে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে, সেসব দিন আপনি কোন ধরনের বস্তুর সংস্পর্শে এসেছেন বা কী ধরনের খাবার খেয়েছেন, কোথায় গেছেন বা ত্বকে কী লাগিয়েছেন, তা মনে করুন।
একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে ত্বকে ছিদ্র করে সেখানে নানা ধরনের অ্যালার্জেনের নির্যাস দেওয়া হয় এবং কতক্ষণ পর ওই জায়গায় অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। কতটা জায়গা ফুলে গেছে বা লাল হয়ে গেছে, তা পরিমাপ করা হয়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেও অ্যালার্জির নির্দেশক কিছু অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যায়। নাকের ভেতরের মিউকোসা বা চোখের লাল ভাবের একটি শারীরিক পরীক্ষা করেও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করা যেতে পারে।
অ্যালার্জির নানা রকম আধুনিক চিকিৎসা এখন সহজলভ্য। উপসর্গিক চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিহিস্টামিন ও স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। উপশম পেতে ঠান্ডা সেঁক, ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে রাখা, ক্যালামিন লোশন, গাঢ় ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। সাধারণত নানা মাত্রার স্টেরয়েড ক্রিম দ্রুত উপশম দেয়, তবে গুরুতর ক্ষেত্রে মুখে খাবার স্টেরয়েডও ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে।
ডা. এস এম রাসেল ফারুক, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ