কিডনির ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া পর্যন্ত তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাহলে উপায়? রুটিনমাফিক কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা করলে বোঝা যাবে, কিডনি সুস্থ আছে কি না। বিশেষ করে যেসব রোগে কিডনি আক্রান্ত হয়, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, লুপাস। নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করা উচিত।
কিডনির কাজ
রক্ত পরিশোধিত করে দূষিত বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া, ইরাইথ্রোপোয়েটিন নামের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করা, যা রক্ত তৈরিতে ভূমিকা রাখে; রক্তের খনিজ, পানি ও রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা এবং রক্তের পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়া কিডনিতে ভিটামিন ডি চূড়ান্তভাবে ব্যবহার উপযোগী হয়, যা হাড়ের সুরক্ষা দেয়।
কিডনি আক্রান্ত হলে ওপরের কার্যক্রমগুলো বিঘ্নিত হয়। শরীরে পানি ও লবণের ভারসাম্য নষ্ট হয়, কারও কারও শরীরে পানি জমে। রক্ত তৈরি হতে না পারায় রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বর্জ্য পদার্থ জমে ইউরেমিয়া হয়, যে কারণে অরুচি, অবসাদ, ওজন হ্রাস, মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ভিটামিন ডি কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারায় হাড় ক্ষয় হয়।
কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেন
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ বা কিডনি ফেইলিউরের কারণ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির প্রদাহ বা নেফ্রাইটিস, কিডনি সংক্রমণ, বংশগত কিডনি রোগ, যেমন পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ, ভাসকুলাইটিস ও বাতরোগ, যেমন লুপাস। এ ছাড়া আকস্মিক কিডনি ফেইলিউর হতে পারে যেসব কারণে, তা হলো, হঠাৎ ডায়রিয়া বা বমির কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতা; রক্তক্ষরণ—যেমন দুর্ঘটনার পর; নেফ্রাইটিস বা প্রদাহ, ব্যথানাশক ওষুধ সেবন, কিডনি বা মূত্রথলিতে পাথর, প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যা।
লক্ষণ
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, শরীরে পানি জমা বা মুখ–পা ফোলা, প্রস্রাব লাল বা দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া, প্রস্রাবে ফেনা যাওয়া, রক্তশূন্যতা, চুলকানি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, বমি বা বমি ভাব, অরুচি, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ।
যেভাবে সুস্থ থাকবেন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তিন মাসের গড় এইচবিএওয়ানসি অবশ্যই ৭–এর নিচে থাকতে হবে।
রক্তচাপের টার্গেট ১৩০/৮০ মিমি পারদের নিচে রাখুন।
ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতায় দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে।
কিডনি বা মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণে যথাযথ চিকিৎসা নিন।
প্রস্টেট গ্রন্থি বা কিডনিতে পাথরজনিত সমস্যায়ও চিকিৎসা জরুরি।
ধূমপান পরিহার করুন ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করবেন না।
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখুন।
প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস করুন।
বয়স ৪০ বছরের ওপরে হলে বছরে নিয়মিত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। দেখতে হবে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ আছে কি না, প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা ও অ্যালবুমিন ক্রিয়েটিনিন রেশিও, সেরাম ক্রিয়েটিনিন।
অধ্যাপক এ কে এম মুসা, সাবেক অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল