শীতকালে শিশুর যত্নে একটু বেশি মনোযোগ দিতে হয়। এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে পড়ে, তাই সবাই ত্বক আর্দ্র রাখতে চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন, শিশুকে তাহলে তেল মাখানো উচিত নাকি লোশন? শিশুকে ম্যাসাজ করা যাবে কি না। শিশুর শরীরে তেল বা লোশন—দুটিই ব্যবহার করা যাবে। তবে যেটা শিশুর জন্য আরামদায়ক, সেটাই বেছে নিতে হবে।
শীতে শিশুর মালিশে নারকেল তেলও ব্যবহার করতে পারেন। নারকেল তেলে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান, যা ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। আবার শিশুর ত্বক যদি শুষ্ক থাকে, তাহলে নারকেল তেলের সঙ্গে শিয়া বাটার মিশিয়ে শিশুর মালিশে ব্যবহার করতে পারেন। শিয়া বাটার ত্বক আর্দ্র করে। বাজারে অনেক ধরনের ম্যাসাজ অয়েল পাওয়া যায়। ব্যবহারের আগে এসব তেলে কী কী উপাদান আছে, তা দেখে নিতে হবে। সুগন্ধি ঘন তেল শিশুর ত্বকে অ্যালার্জি, জ্বালাপোড়া বা ফুসকুড়ি সৃষ্টি করতে পারে। তবে শিশুর ত্বকের জন্য তাদের উপযোগী অপেক্ষাকৃত পাতলা ও প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করা ভালো। শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পেতে শর্ষের তেল ব্যবহার করতে পারেন। শর্ষের তেল শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, শরীর উষ্ণ রাখে, শিশুর ঠান্ডা লাগার শঙ্কা থাকে না। বিশেষ করে শরীরে তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে। শর্ষের তেলের মধ্যে কয়েকটি রসুনের কোয়া দিয়ে গরম করে নিলে সেটা ঠান্ডা করে শিশুর বুকে মালিশ করলে সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই তেলে অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে, ফলে ত্বকে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। তেল ফুটিয়ে নিলে অনেকটা মসৃণ হয়, ঘনত্ব কমে যায়। তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই তেল পুরোপুরি ঠান্ডা করে নিতে হবে।
শিশুর ত্বকে লোশনও ব্যবহার করতে পারেন। তবে দেখতে হবে লোশনটা শিশুর ত্বকের উপযোগী কি না। লোশনের উপকরণ দেখে তারপর সেটা কিনতে হবে। এ ছাড়া লোশনের ঘনত্ব যেন বেশি না হয়। বেশি ঘন লোশনে শরীরে ধুলাবালু বেশি জমে। বাজারে শিশুর জন্য যেসব লোশন আছে, সেসব দেখে যাচাই করে কিনতে হবে।
শিশুর পোশাক খুলে নরম কাপড় বিছিয়ে তার ওপর শিশুকে শুইয়ে দিন। হাতের তালুতে সামান্য তেল নিয়ে কানের লতিতে দিন। এরপর আস্তে আস্তে পা থেকে ধীরে ধীরে মালিশ শুরু করুন। হাতের তালুতে অল্প একটু তেল নিয়ে শিশুর পায়ের তলায় আঙুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করুন। পায়ের গোড়ালি থেকে আঙুল পর্যন্ত হালকা হাতে তেল দিন। এবার ধীরে ধীরে পায়ের ওপরের দিকে উঠুন। পুরো শরীরেই তেল লাগিয়ে আলতো করে ঘষে ঘষে মালিশ করে বুক ও পেটে আঙুল ঘুরিয়ে মালিশ করুন। মালিশ করার সময় তাড়াহুড়া করা যাবে না। দ্বিতীয়বার মালিশের সময় পা থেকে শুরু না করে মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত যান।
ডা. এস এম রাসেল ফারুক; সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, আইচি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা