অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে মেয়েদের বমি ভাব বা মাঝে মাঝে বমি স্বাভাবিক লক্ষণ। কিন্তু বমি মাত্রাতিরিক্ত হলে, যাতে গর্ভবতী মায়ের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে সঠিক চিকিৎসা দরকার।
গর্ভাবস্থায় বমি কেন হয়
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে বিটা এইচসিজি হরমোন বেড়ে যায় বলে বমি ভাব বা বমি হয়। এই সমস্যা সাধারণত সকালে বেশি হয় বলে একে ‘মর্নিং সিকনেস’ বলে। তবে দিনের অন্য সময়ও হতে পারে।
কাদের হয়
যেকোনো স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় বমি হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়—
প্রথম বা অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ
গর্ভবতী মায়ের আগের গর্ভাবস্থায় বমি হলে
কারও আগে থেকে মোশন সিকনেস বা মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে
পরিবারের অন্য সদস্য যেমন মা-বোনের সমস্যা থাকলে
যমজ বা দুইয়ের বেশি সন্তান গর্ভধারণ
মোলার প্রেগনেন্সি
আমিষ ও ভিটামিন বি৬-এর অভাব
মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত
করণীয়
গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে হবে যেমন—
১. অতিরিক্ত তেল-চর্বি, ঝাল, গুঁড়া মরিচ, গুঁড়া মসলা, পুরোনো আচার, ভাজাপোড়া ইত্যাদি খাবার পরিহার করতে হবে।
২. যেসব খাবার খেলে বমি হয়, সেগুলো বাদ দিতে হবে। পর্যাপ্ত পানি, আমিষ ও ভিটামিন ‘বি’সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
৩. সকালে সমস্যা বেশি হয়, তাই সকালে দাঁত ব্রাশ না করে রাতে বা দুপুরে করা যেতে পারে।
৪. সকালে শুকনা খাবার যেমন টোস্ট বিস্কুট, মুড়ি ইত্যাদি খেতে হবে।
৫. একবারে ভরপেট না খেয়ে অল্প অল্প করে ১-২ ঘণ্টা পরপর খেতে হবে।
৬. খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি পান না করে কিছু সময় পর পান করতে হবে।
৭. খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শোয়া যাবে না। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ সোজা হয়ে বসে থাকলে বা হালকা হাঁটাহাঁটি করলে ভালো।
৮. আদা বমি ভাব বা বমি কমাতে খুব উপকারী।
৯. দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ওষুধ যেমন মেক্লিজিন, ডক্সিলামাইন, পাইরিডোক্সিন, প্যালোনোসেট্রন ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
মাত্রাতিরিক্ত বমি হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া লাগতে পারে।
বমির অন্যান্য কারণ যেমন পেটের আলসার, থাইরয়েডের রোগ, প্রস্রাবের সংক্রমণ, প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ, পিত্তথলিতে প্রদাহ বা পাথর, অ্যাপেন্ডিসাইটিস ইত্যাদি কারণ নির্ণয় হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, গর্ভাবস্থায় বমি হরমোনের প্রভাবে হয় বলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা পুরোপুরি সারানো সম্ভব নয়। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে তীব্রতা কমানো সম্ভব। এই সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সহযোগিতা গর্ভবতী মায়েদের এই সমস্যা মোকাবিলায় খুবই দরকার।
ডা. মারুফা খাতুন, সহকারী অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা