নভেম্বর মাসকে ফুসফুস ক্যানসারের সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। ফুসফুসের ক্যানসারে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ মারা যান। এটি পুরুষদের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং নারীদের দ্বিতীয় প্রধান কারণ।
ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপায়ী ও তামাকসেবী। ধূমপায়ী না হয়েও চারপাশের মানুষের ধূমপানের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ফুসফুস।
যানবাহন ও কারখানার কালো ধোঁয়া, বায়ুদূষণ, অজৈব পদার্থের ক্ষুদ্র কণা বা আঁশ (যেমন অ্যাসবেসটস, নিকেল, ক্রোমিয়াম) এবং জৈব পদার্থ (যেমন বেনজিন, বেনজোপাইরিন) বায়ুর সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর আত্মীয়ের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও অন্যদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া সিলিকোসিস, ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজিজ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস রোগগুলোয় ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশ বৃদ্ধি পায়।
অনাকাঙ্ক্ষিত তেজস্ক্রিয়তাও ফুসফুসের ক্যানসারের উল্লেখযোগ্য কারণ। কতিপয় বিশেষ পেশাজীবী, যেমন কয়লার খনিশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, পেট্রোলিয়াম, কেমিক্যাল বা রবার কারখানার শ্রমিক ও জাহাজশ্রমিক, যাঁরা এক্স-রে বিভাগে কাজ করেন, যাঁদের রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়, অ্যাসবেস্টস কারখানার কর্মী কিংবা প্রচুর ধুলাবালুর মধ্যে কাজ করেন—এ ধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার হার বেশি।
অতিরিক্ত মদ্যপান ও ফুসফুস ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
দীর্ঘমেয়াদি কাশি, কাশির সঙ্গে রক্তপাত, ধূমপায়ীদের কাশির নতুন ধরন, শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, ওজন হ্রাস, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি এই ক্যানসারের লক্ষণ। সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে বুকের এক্স-রে, কফ পরীক্ষা করাতে হবে। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের প্রয়োজনে বুকের সিটি স্ক্যান, ব্রঙ্কোস্কোপি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগনির্ণয় করতে হবে।
বিড়ি, সিগারেট, তামাক ও মদ বর্জন করতে হবে।
পরিবেশদূষণ, বায়ুদূষণ ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া কমাতে হবে। ধোঁয়া থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
যাঁদের কোনো উপসর্গ নেই; কিন্তু কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে ধূমপান করেছেন এবং বয়স ৫০ থেকে ৮০ বছর, তাঁদের প্রাথমিক রোগনির্ণয়ের জন্য বছরে একবার ‘কম-ডোজ কম্পিউটেড টমোগ্রাফি’ পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যানসার স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুহার আমাদের দেশে অনেক বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়ই ফুসফুসের ক্যানসার ধরা পড়ে না। যখন উপসর্গ দেখা দেয়, তখন রোগ অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত করতে সবার সচেতনতা খুবই জরুরি।
ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গগুলো জানা, দ্রুততম সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ও রোগনির্ণয় করা এবং যাঁরা বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানা, তেজস্ক্রিয়তা, ধুলাবালু ও ধোঁয়ার মধ্যে কাজ করেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় আনা ও সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত করে মৃত্যুহার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
ডা. মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম: জুনিয়র কনসালট্যান্ট (রেসপিরেটরি মেডিসিন), স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা