চুলের স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকেরই কপালে ভাঁজ পড়ে। চলুন, এমন কিছু খাবারের সঙ্গে পরিচিত হই, যেগুলো চট করে আপনার চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগাবে।
১. বাদাম
ওমেগা-৬ ফ্যাটের অভাবে আমাদের চুল পড়ে যায়। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাট থাকে। দৈনিক খাদ্যতালিকায় চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ও ওয়ালনাটের মতো বাদামজাতীয় খাবার রাখা যেতে পারে। তবে এখানেও মেনে চলতে হবে পরিমিতবোধ। খুব বেশি বাদাম খেয়ে ফেললে আবার ওজন বেড়ে যেতে পারে।
২. হলুদ সবজি ও ফলমূল
মিষ্টি আলু, গাজর, আম, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া—এগুলো ভিটামিন এ-তে ভরপুর। চুলের ফলিকলের জন্য ভিটামিন এ খুবই প্রয়োজনীয়। দিনপ্রতি আমাদের যতটুকু ভিটামিন এ প্রয়োজন, তাঁর চেয়ে বেশি জোগান দিতে পারে মাত্র আধাকাপ পরিমাণ গাজর। তাই প্রতিদিন কিছু হলুদ সবজি ও ফলমূল খেলে চুল ভালো থাকে।
৩. তৈলাক্ত মাছ
ইলিশ, কই, মলা, চাপিলা মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটের ভালো উপস্থিতি আছে। এসব মাছ খেলে চুল ঘন ও কালো হয়, সেই সঙ্গে আমিষের অভাবও পূরণ করে।
৪. ডিম
আমাদের চুল আমিষ বা প্রোটিনের তৈরি। তাই চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনন্দিন খাবারে আমিষের পর্যাপ্ত উপস্থিতির বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের অনেকেরই নিয়মিত আমিষজাতীয় খাবার খাওয়া হয়ে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে ডিম খুবই ভালো একটি সমাধান। ডিমে আমিষ ছাড়াও বায়োটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি-১২ ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
৫. পালংশাক
পালংশাকে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন ও ফলেট। এগুলো চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়।
৬. ডাল
মাথার তালুতে রক্ত চলাচল সরবরাহ করে চুলের গোড়ায় অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে আয়রন। এ ছাড়া আয়রনের অভাবে চুল পড়ে যায়। এই আয়রন ভালো পরিমাণে পাওয়া যায় ডালে এবং সেই সঙ্গে আমিষ তো রয়েছেই। আমিষ, আয়রনের পাশাপাশি ডালে থাকে জিংক ও ফলেট। তাই খাবারের তালিকায় ডাল থাকলে চুল সুন্দর হয়। তবে ডাল একেবারে পাতলা করে না রেঁধে, একটু ঘন করে রাঁধলে ভালো। ঘন ডালে পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে।
৭. বিভিন্ন ধরনের বীজ
বিভিন্ন ধরনের বীজ যেমন চিয়া সিড, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি, তিসির বীজ ইত্যাদিতে চুলের জন্য উপকারী অনেক উপাদান আছে। চিয়া সিডে আছে আলফা-লিনোলিনিক অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাট। মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছে জিংক, সূর্যমুখীর বিচিতে আছে বায়োটিন, তিসির বীজে আছে সেলেনিয়াম। গবেষণায় জানা গেছে, এগুলোর অভাবে চুল পড়তে পারে। বাজারে, সুপারশপে অনেক ধরনের বীজ কিনতে পাওয়া যায়। রাস্তায়, বাসে বাদাম ফেরি করতে দেখা যায়। সেখানে বাদামের সঙ্গে শিমের বীজ, ছোলা পাওয়া যায়। রাতে টক দই আর দুধের সঙ্গে চিয়া সিড মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে সকালে খেতে পারেন।
৮. ছোলা
চুলের জন্য উপকারী তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে ছোলায়। সেগুলো হলো—আয়রন, জিংক ও আমিষ বা প্রোটিন।
৯. টক দই
টক দই আমিষের আরেকটি উৎস। এতে আমিষ ছাড়াও জিংক পাওয়া যায়।
১০. টকজাতীয় ফল
আমলকী, লেবু, কমলা, মাল্টা, আঙুর, কাঁচা আম, কিউই হলো টকজাতীয় ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। সুন্দর চুলের জন্য ভিটামিন সি খুব দরকারি। এর অভাব হলে চুল পেঁচিয়ে যায়।
আবার ভিটামিন সি-এর অভাব হলে চুল আয়রন শোষণ করতে পারে না। ফলে চুল পড়ে যায়। মনে রাখতে হবে যে আমাদের শরীরে নিজে থেকেই ভিটামিন সি তৈরি হয় না। তাই টকজাতীয় ফল খেয়ে এর চাহিদা জোগান দিতে হবে। যাঁদের টক খেতে কষ্ট হয়, তারা টমেটো, পেয়ারা খেতে পারেন। এগুলোও ভিটামিন সির ভালো উৎস।
খাবার ছাড়া বাইরে থেকে চুলের পুষ্টি জোগাবেন কীভাবে
১. কদুর তেল
নিয়মিত তেল মালিশ চুলের বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকর। বিভিন্ন ভেষজ তেল চুলে পুষ্টি জোগায় ও চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
চুল পড়া রোগীদের ওপর চালানো একটি গবেষণা বলছে, কদুর তেল তিন মাস ব্যবহার করার ফলে তাঁদের নতুন করে চুল গজিয়েছে। সেইসঙ্গে চুল আগের চেয়ে বেশ মোটা হয়েছে।
২. ভিটামিন ট্যাবলেট
বাজারে নানা রকম ভিটামিন ট্যাবলেটের ছড়াছড়ি থাকলেও সেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে খুব একটা কার্যকর নয়। তবে চাইলে ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেতে পারেন। সাধারণত রোদ থেকে এই ভিটামিন ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত রোদ পোহাতে পারেন না, তাঁদের জন্য ভিটামিন ডি ট্যাবলেট কার্যকরী।
তবে কোনো ভিটামিন ট্যাবলেটই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গ্রহণ করবেন না। বেশি পরিমাণ ভিটামিন এ ট্যাবলেট গ্রহণ করলে চুল পড়ে যায়।
সূত্র: হেলথ